১৯৮৭ সালের INF চুক্তি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিল রাশিয়া। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েন করার পর রাশিয়া স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের মোতায়েনের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে।
Russia US Missile: আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা আবারও চরমে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরমাণু নীতির প্রতিক্রিয়ায় এমন একটি পদক্ষেপ নিয়েছেন, যা বিশ্ব কৌশলগত ভারসাম্যের উপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে। রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের উপর নিষেধাজ্ঞা বাতিল করেছে।
১৯৮৭ সালের INF চুক্তি কী ছিল
১৯৮৭ সালে আমেরিকা ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে "Intermediate-Range Nuclear Forces Treaty" (INF) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তির অধীনে উভয় দেশ ৫০০ থেকে ৫,৫০০ কিলোমিটার পাল্লার ভূমি থেকে নিক্ষেপযোগ্য ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করবে না। এর উদ্দেশ্য ছিল ইউরোপ এবং বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতা বন্ধ করা। কিন্তু ২০১৯ সালে আমেরিকা নিজেই এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা করে। এর পর রাশিয়াও ধীরে ধীরে এই চুক্তি থেকে দূরত্ব তৈরি করতে শুরু করে।
ট্রাম্পের নির্দেশের পর রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার সমুদ্র উপকূলের কাছে আমেরিকার দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছেন। রাশিয়া এটিকে সরাসরি তাদের আঞ্চলিক ও কৌশলগত স্বার্থের পরিপন্থী বলে মনে করে। এর প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়া ১৯৮৭ সালের INF চুক্তির অধীনে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা করেছে।
রাশিয়ান বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতি
রাশিয়ান বিদেশ মন্ত্রক স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে তারা আর নিজেকে এই নিষেধাজ্ঞার দ্বারা আবদ্ধ মনে করে না। মন্ত্রকের মতে, "আমেরিকা বারবার আমাদের সতর্কবার্তা উপেক্ষা করেছে। আমরা আগেও বলেছি যে আমেরিকা উস্কানিমূলক পদক্ষেপ নিলে তবেই আমরা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন শুরু করব। এখন যেহেতু আমেরিকা এমন পদক্ষেপ নিয়েছে, তাই আমরাও আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থ রক্ষার জন্য এই পদক্ষেপ নিচ্ছি।"
এই পদক্ষেপের পেছনের কৌশল
রাশিয়ার এই সিদ্ধান্ত হঠাৎ করে নেওয়া হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি একটি সুচিন্তিত কৌশল। পুতিন সরকার জানে যে আমেরিকা, বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে, আগ্রাসী বিদেশ নীতি অনুসরণ করছে। রাশিয়া এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এই বার্তা দিয়েছে যে আমেরিকা যদি তাদের পদক্ষেপ প্রত্যাহার না করে, তবে রাশিয়াও একই ভাষায় জবাব দেবে।
বৈশ্বিক নিরাপত্তার উপর প্রভাব
এই সিদ্ধান্ত শুধু রাশিয়া ও আমেরিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ইউরোপ, এশিয়া এবং অন্যান্য অঞ্চলে কৌশলগত অস্থিরতা বাড়তে পারে। ন্যাটো দেশগুলোতে উদ্বেগ বেড়েছে, কারণ এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইউরোপীয় নিরাপত্তা কাঠামোর জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। একই সাথে, এশিয়াতে চীনের মতো দেশগুলোর ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে, যারা আগে এই চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
ভারতের জন্য এর কী মানে
ভারত INF চুক্তিতে কখনও অংশ নেয়নি, তবে এই চুক্তির কারণে আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে অস্ত্রের সীমিত প্রতিযোগিতা ভারতের জন্য ইতিবাচক ছিল। এখন যখন এই নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে, তখন অস্ত্রের নতুন প্রতিযোগিতা শুরু হতে পারে, যার প্রভাব দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা কৌশলগুলির উপর পড়তে পারে। ভারতকে তার প্রতিরক্ষা নীতিকে আরও শক্তিশালী করতে হতে পারে।