এস জয়শঙ্করের চীন সফর: সীমান্ত বিবাদ ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা

এস জয়শঙ্করের চীন সফর: সীমান্ত বিবাদ ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা

বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর আগামী সপ্তাহে চিনের তিয়ানজিনে এসসিও বৈঠকে যোগ দেবেন। গালওয়ান সংঘর্ষের পর এটি তাঁর প্রথম চীন সফর। বৈঠকে সীমান্ত বিবাদ এবং অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

এসসিও মিটিং: ভারত ও চীনের মধ্যে বিগত কয়েক বছরে চলা উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক পদক্ষেপ হতে চলেছে। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর আগামী সপ্তাহে চীনের তিয়ানজিন শহর সফর করবেন। এই সফরটি সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও)-র বিদেশমন্ত্রীদের কাউন্সিলের বৈঠকে যোগদানের জন্য করা হচ্ছে। বৈঠকটি ১৫ই জুলাই অনুষ্ঠিত হবে। এই সফরকে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে কারণ এটি গালওয়ান উপত্যকায় হওয়া সংঘর্ষের পর জয়শঙ্করের প্রথম চীন সফর হবে।

এসসিও বৈঠকে অংশ নেবেন সকল সদস্য দেশের প্রতিনিধি

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শনিবার ঘোষণা করে জানিয়েছে, এসসিও বিদেশমন্ত্রীদের এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ১৫ই জুলাই তিয়ানজিনে অনুষ্ঠিত হবে। এতে সদস্য দেশগুলির বিদেশমন্ত্রী এবং সংস্থার স্থায়ী সংস্থাগুলির প্রধানরা উপস্থিত থাকবেন। চীনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-এর আমন্ত্রণে বিদেশমন্ত্রী জয়শংকর এই বৈঠকে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন।

দ্বিপাক্ষিক আলোচনারও প্রস্তুতি

বৈঠকে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি, এস জয়শঙ্করের চীনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-এর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনাও প্রস্তাবিত হয়েছে। দুই নেতা সীমান্ত বিবাদ, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ভারসাম্যহীনতা, বিরল মৃত্তিকা ধাতু (Rare Earth Metals)-র রপ্তানির উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা এবং পারস্পরিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন।

গালওয়ান সংঘর্ষের পর প্রথম বড় রাজনৈতিক সফর

জয়শঙ্করের এই সফরটি এ কারণেও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে যে ২০২০ সালে পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারত ও চীনের সৈন্যদের মধ্যে সহিংস সংঘর্ষের পর উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল। সেই থেকে, রাজনৈতিক যোগাযোগ খুবই সীমিত ছিল। এমতাবস্থায়, এই সফর উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টায় একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এর আগে রাজনাথ সিং এবং ডোভাল চীন সফর করেছেন

জয়শঙ্করের আগে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত ডোভাল চীন সফর করেছেন। দুজনেই নিজ নিজ স্তরে সীমান্ত বিবাদ এবং কৌশলগত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। বিশেষ করে ডোভালের চীন সফরের উদ্দেশ্য ছিল সীমান্ত বিবাদের সমাধানের জন্য শুরু হওয়া "বিশেষ প্রতিনিধি ব্যবস্থা" পুনরায় সক্রিয় করা।

ওয়াং ই-এর ভারত আসার সম্ভাবনা

সূত্রানুসারে, চীনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-ও এই মাসে ভারত সফরে আসতে পারেন। যদি এই সফর হয়, তবে তাঁর এনএসএ ডোভালের সঙ্গে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে বিশেষ প্রতিনিধি (এসআর) ব্যবস্থার অধীনে সীমান্ত বিবাদ নিয়ে আরও এক দফা আলোচনা হতে পারে। এখন পর্যন্ত এই ব্যবস্থার অধীনে ভারত ও চীনের মধ্যে ২৩ দফা আলোচনা হয়েছে। যদিও, এখনও পর্যন্ত কোনও সুনির্দিষ্ট সমাধান পাওয়া যায়নি।

মোদী-জিনপিংয়ের বৈঠকে ঐকমত্য

এই আলোচনা সেই বৈঠকের প্রেক্ষাপটে হচ্ছে যা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং-এর মধ্যে ২০২৩ সালের ২৩শে অক্টোবর রাশিয়ার কাজান শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই বৈঠকে দুই নেতা সীমান্ত বিবাদ নিষ্পত্তির জন্য সমস্ত আলোচনার মাধ্যমকে পুনরায় সক্রিয় করতে সম্মত হয়েছিলেন। এর অধীনে বিশেষ প্রতিনিধি ব্যবস্থা এবং অন্যান্য কূটনৈতিক মঞ্চগুলিকে পুনরায় কার্যকর করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

বিরল মৃত্তিকা ধাতু রপ্তানি নিয়েও আলোচনা হবে

জয়শঙ্করের চীন সফরের সময় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে বিরল মৃত্তিকা ধাতু। চীন সম্প্রতি এই ধাতুগুলির রপ্তানির উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। এই ধাতুগুলি প্রতিরক্ষা, মহাকাশ এবং ইলেকট্রনিক্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে ব্যবহৃত হয়। ভারত এই বিষয়টিও আলোচনায় উত্থাপন করতে পারে কারণ এটি দেশের কৌশলগত প্রয়োজনীয়তাগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত একটি বিষয়।

কৈলাস-মানস সরোবর যাত্রা পুনরায় শুরু হওয়া সম্পর্ক উন্নয়নের ইঙ্গিত

ভারত ও চীনের মধ্যে সাম্প্রতিক মাসগুলিতে কিছু ইতিবাচক লক্ষণও দেখা গেছে। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান লক্ষণ হল কৈলাস-মানস সরোবর যাত্রা পুনরায় শুরু হওয়া। এই যাত্রা প্রায় পাঁচ বছর পর আবার শুরু হয়েছে, যা উভয় দেশের মধ্যে আস্থা পুনর্গঠনের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

Leave a comment