পাঞ্জাবের রাজ্যপাল, গোলাপচাঁদ কাটারিয়া আজ সঞ্জীব অরোরাকে ক্যাবিনেট মন্ত্রী হিসেবে পদ ও গোপনীয়তার শপথবাক্য পাঠ করান। এই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান সহ একাধিক ক্যাবিনেট মন্ত্রী, বিধায়ক এবং অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তি রাজভবনে উপস্থিত ছিলেন।
চंडीगढ़: পাঞ্জাবের রাজনীতিতে আজ একটি বড় পরিবর্তন দেখা গেল, যখন মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান তাঁর দলে নতুন শক্তি যোগ করে সঞ্জীব অরোরাকে ক্যাবিনেটে স্থান দিলেন। পাঞ্জাবের রাজ্যপাল গোলাপচাঁদ কাটারিয়া বুধবার রাজভবনে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত এবং মর্যাদাপূর্ণ অনুষ্ঠানে সঞ্জীব অরোরাকে পদ ও গোপনীয়তার শপথবাক্য পাঠ করান। এই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান সহ মন্ত্রিসভার একাধিক মন্ত্রী, বিধায়ক এবং আধিকারিক উপস্থিত ছিলেন।
মাত্র ১১ মিনিটের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে সঞ্জীব অরোরা পাঞ্জাবি ভাষায় শপথ গ্রহণ করেন এবং ভগবন্ত মান ক্যাবিনেটে ১৭তম মন্ত্রী হিসেবে যোগ দেন। একই সঙ্গে, ক্যাবিনেটে আরেকটি পরিবর্তনের প্রেক্ষাপট রচিত হয়, কারণ কুলদীপ সিং ধালিওয়ালের কাছ থেকে এনআরআই বিষয়ক দপ্তর ফিরিয়ে নিয়ে তা সঞ্জীব অরোরার হাতে তুলে দেওয়া হয়।
এনআরআই বিভাগ এবং শিল্পের দায়িত্ব অর্পণ
নবনির্বাচিত মন্ত্রী সঞ্জীব অরোরাকে এনআরআই বিষয়ক বিভাগের পাশাপাশি শিল্প বিভাগও দেওয়া হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, ভগবন্ত মান সরকার শিল্পকে উৎসাহিত করতে এবং পাঞ্জাবে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করার উদ্দেশ্যে এই দায়িত্ব সঞ্জীব অরোরার হাতে তুলে দিয়েছে। অন্যদিকে, কুলদীপ সিং ধালিওয়ালকে ভবিষ্যতে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ দেওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
ধালিওয়াল তাঁর তিন বছরের মেয়াদে প্রথমে কৃষি, তারপর গ্রামোন্নয়ন, পঞ্চায়েত এবং সবশেষে এনআরআই বিষয়ক বিভাগের মতো দপ্তরগুলি সামলেছেন, কিন্তু এখন তাঁর ভূমিকা পরিবর্তন করা হয়েছে।
ধালিওয়ালের যাত্রা: শীর্ষ থেকে পতনের দিকে
মন্ত্রী কুলদীপ সিং ধালিওয়ালের দপ্তর পরিবর্তন নিয়ে রাজনৈতিক আলোচনাও বেশ জোরদার। ধালিওয়াল গত তিন বছরে কৃষি এবং গ্রামোন্নয়ন-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলিতে উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন। তিনি কয়েক হাজার একর পঞ্চায়েতি জমির দখলমুক্ত করেছেন এবং গ্রামীণ অঞ্চলে উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলির গতি বাড়িয়েছেন। তা সত্ত্বেও, শেষ পরিবর্তনে তাঁকে এনআরআই বিষয়ক বিভাগের মতো দপ্তর দেওয়া হয়েছিল, যা রাজনৈতিক মহলে ‘নামমাত্র বিভাগ’ হিসেবে পরিচিত ছিল। এখন সেই বিভাগটিও তাঁর কাছ থেকে নিয়ে সঞ্জীব অরোরার হাতে দেওয়া হয়েছে, যা ধালিওয়ালের অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন ধরনের জল্পনা তৈরি করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সঞ্জীব অরোরার নিয়োগ ভগবন্ত মানের একটি সুচিন্তিত রাজনৈতিক চাল। অরোরার মাধ্যমে সরকার শিল্পে বিনিয়োগের গতি আনতে চাইছে, একই সঙ্গে এনআরআই সম্প্রদায়ের মধ্যে তাদের প্রভাব আরও শক্তিশালী করতে চাইছে। এনআরআই বিভাগের মাধ্যমে পাঞ্জাবে বসবাসকারী কোটি কোটি প্রবাসী ভারতীয়দের স্বার্থরক্ষা এবং তাঁদের কাছ থেকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা পাওয়ার দিকে সরকারের উদ্দেশ্য স্পষ্ট। অন্যদিকে, শিল্প বিভাগের মাধ্যমে কর্মসংস্থান এবং বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি করে পাঞ্জাবের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার কৌশল নিয়েও কাজ করা হবে।
মন্ত্রিসভায় পুনরায় ১৬ জন মন্ত্রী
সঞ্জীব অরোরা যোগ দেওয়ার পরে মন্ত্রিসভার মোট মন্ত্রীর সংখ্যা ১৭ হয়েছিল, কিন্তু কুলদীপ ধালিওয়ালকে অপসারণের পর এই সংখ্যাটি আবার ১৬-তে এসে দাঁড়িয়েছে। সরকারের দাবি, মন্ত্রিসভায় এই পরিবর্তন জনস্বার্থে এবং প্রশাসনিক কাজকর্ম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য করা হয়েছে। যদিও, বিরোধী দল এই পরিবর্তনকে ভগবন্ত মান সরকারের "অস্থিতিশীলতা" হিসাবে চিহ্নিত করে সমালোচনা করছে।
সঞ্জীব অরোরার সামনে এখন দ্বৈত চ্যালেঞ্জ। একদিকে, তাঁকে পাঞ্জাবে শিল্পের পরিবেশ উন্নত করতে হবে, অন্যদিকে, এনআরআই সম্প্রদায়ের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে হবে। পাঞ্জাবে এনআরআই ভোট ব্যাংক বেশ প্রভাবশালী বলে মনে করা হয় এবং তাঁদের সমস্যাগুলির সমাধানের প্রত্যাশা বহু বছর ধরে করা হচ্ছে।