ভারতর অনন্ত টেকনোলজিস ২০২৬ সাল পর্যন্ত ৪ টনের একটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করবে, যা ২০২৮ সাল থেকে ১০০ জিবিপিএস (Gbps) গতিতে ইন্টারনেট সারা দেশে সরবরাহ করবে। জিও (GEO) স্যাটেলাইট প্রযুক্তির মাধ্যমে একটি স্যাটেলাইটই পুরো ভারতকে কভার করতে পারবে।
দেশীয় স্যাটেলাইট: এতদিন আমরা এলন মাস্কের স্টারলিঙ্ক (Starlink), অ্যামাজনের প্রজেক্ট কুইপার (Project Kuiper) বা এয়ারটেল-ওয়ানওয়েব-এর মতো বিদেশি স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবাগুলির কথা শুনেছি। কিন্তু এবার ভারতও সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তির মাধ্যমে মহাকাশ-ভিত্তিক হাই-স্পিড ইন্টারনেট পরিষেবা শুরু করতে চলেছে। এই বিপ্লবী উদ্যোগটি নিয়েছে হায়দ্রাবাদের অনন্ত টেকনোলজিস (Ananth Technologies), যারা ২০২৬ সাল পর্যন্ত তাদের প্রথম ৪ টন ওজনের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং ২০২৮ সাল পর্যন্ত সাধারণ মানুষকে ১০০ জিবিপিএস পর্যন্ত গতির ইন্টারনেট দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।
একটি উপগ্রহ, পুরো ভারত: জিও প্রযুক্তির ক্ষমতা
অনন্ত টেকনোলজিসের এই কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট জিও অর্থাৎ জিওস্টেশনারি আর্থ অরবিট-এ (Geostationary Earth Orbit) স্থাপন করা হবে। জিও স্যাটেলাইটগুলি পৃথিবী থেকে প্রায় ৩৫,৭৮৬ কিলোমিটার উচ্চতায় থাকে এবং পৃথিবীর সঙ্গেই ঘোরে, যার ফলে এরা একই অঞ্চলকে একটানা কভার করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জিও স্যাটেলাইটের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এটি একটি উপগ্রহের মাধ্যমে পুরো ভারতকে কভার করতে পারে, যা কয়েক হাজার কিলোমিটার বিস্তৃত একটি দেশ।
জিও বনাম লিও: পার্থক্য কী?
জিও (ভূ-সমলয়) এবং লিও (নিম্ন আর্থ কক্ষপথ) স্যাটেলাইটের মধ্যে প্রধান পার্থক্য তাদের উচ্চতা এবং কাজ করার পদ্ধতিতে। জিও স্যাটেলাইট পৃথিবী থেকে অনেক উপরে (প্রায় ৩৬,০০০ কিমি) একটি নির্দিষ্ট স্থানে স্থিতিশীল থাকে এবং একসঙ্গে পুরো দেশে ইন্টারনেট সরবরাহ করতে পারে। অন্যদিকে, লিও স্যাটেলাইট পৃথিবী থেকে কাছাকাছি (৪০০ থেকে ২,০০০ কিমি) উচ্চতায় ক্রমাগত ঘুরতে থাকে এবং প্রতিটি এলাকাকে কভার করার জন্য হাজার হাজার স্যাটেলাইটের প্রয়োজন হয়।
জিও স্যাটেলাইটের গতি কিছুটা কম হতে পারে, তবে এটি দীর্ঘমেয়াদে একটি সস্তা এবং নির্ভরযোগ্য বিকল্প। অন্যদিকে, লিও স্যাটেলাইটের গতি বেশি, তবে এর সিস্টেম ব্যয়বহুল এবং জটিল, কারণ এতে অনেক স্যাটেলাইটের রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়। তাই ভারতের অনন্ত টেকনোলজিস জিও স্যাটেলাইট বেছে নিয়েছে, যাতে কম স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পুরো দেশে দ্রুত ইন্টারনেট দেওয়া যায়।
১০০ জিবিপিএস-এর শক্তিশালী গতি, কোনো তার ছাড়াই!
অনন্ত টেকনোলজিসের এই উপগ্রহের বৈশিষ্ট্য হবে এর কা-ব্যান্ড প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে এই উপগ্রহটি ১০০ জিবিপিএস পর্যন্ত গতি দিতে সক্ষম হবে। এটি বিশেষ করে প্রত্যন্ত, গ্রামীণ এবং পার্বত্য অঞ্চলের জন্য একটি আশীর্বাদস্বরূপ হতে পারে, যেখানে প্রচলিত ফাইবার বা মোবাইল নেটওয়ার্ক পৌঁছানো কঠিন। এর মাধ্যমে কেবল ইন্টারনেট নয়, ই-গভর্ন্যান্স, টেলিমেডিসিন, ডিজিটাল শিক্ষা এবং স্মার্ট এগ্রিকালচারের মতো ক্ষেত্রগুলিতেও অসাধারণ উন্নতি হতে পারে।
🇮🇳 ইন-স্পেস (IN-SPACe) থেকে সবুজ সংকেত, ভারতের মহাকাশ নীতিকে নতুন দিশা
অনন্ত টেকনোলজিস ইন-স্পেস (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল স্পেস প্রোমোশন অ্যান্ড অথরাইজেশন সেন্টার) থেকে ব্রডব্যান্ড ফ্রম স্পেস সার্ভিসের অনুমতি পেয়েছে। এর মানে হল কোম্পানিটি শুধু উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করার অনুমতিই পায়নি, বরং স্যাটেলাইট অপারেটর হিসেবেও কাজ করতে পারবে। এটি ভারতের বেসরকারি মহাকাশ ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায়, যেখানে এখন বেসরকারি কোম্পানিগুলিও বাণিজ্যিক পরিষেবা দেওয়ার জন্য মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠাতে পারে।
এটা কি স্টারলিঙ্কের জন্য চ্যালেঞ্জ?
অবশ্যই! স্টারলিঙ্ক এবং অন্যান্য বিদেশি কোম্পানিগুলি যেখানে এখনও ভারত সরকারের অনুমতি পাওয়ার চেষ্টা করছে, সেখানে অনন্ত টেকনোলজিস ইতিমধ্যেই এগিয়ে গেছে। যদি এই পরিকল্পনা সফল হয়, তাহলে ভারত শুধু স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবাতে স্বনির্ভর হবে না, বরং বিদেশি নির্ভরতাও দূর করবে।
ভারতের জন্য একটি স্যাটেলাইটই কি যথেষ্ট?
রিপোর্ট এবং বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের মতো একটি দেশকে কভার করার জন্য একটি জিও স্যাটেলাইটই যথেষ্ট হতে পারে। তবে যদি ব্যবহারকারীর সংখ্যা এবং ডেটার চাহিদা বাড়ে, তাহলে অনন্ত টেকনোলজিস আরও উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করতে পারে। কোম্পানিটি স্পষ্ট করেছে যে তারা একটি নমনীয় মডেলের উপর কাজ করছে, যেখানে প্রয়োজন অনুযায়ী উপগ্রহের সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে।
উৎক্ষেপণের সময়সীমা: পরবর্তী পদক্ষেপ কী?
- ২০২৫ সালের শেষ পর্যন্ত: স্যাটেলাইট নির্মাণ এবং পরীক্ষা
- ২০২৬: উৎক্ষেপণ (সম্ভাব্য জিএসএলভি বা ইসরোর রকেট থেকে)
- ২০২৭: গ্রাউন্ড স্টেশন, টার্মিনাল উন্নয়ন
- ২০২৮: গ্রাহকদের জন্য ব্রডব্যান্ড পরিষেবা শুরু