রবিবার ভোরে, ঘুম জড়ানো নিউ ইয়র্ক হঠাৎ কেঁপে উঠল হালকা ভূকম্পনে। স্থানীয় সময় সকাল ৬টা নাগাদ অনুভূত হয় কম্পন। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৩.০। যদিও ভূমিকম্পের মাত্রা খুব একটা বেশি নয়, তবু এত বড় শহরে এই ধরনের কম্পন বিরল বলেই মনে করছেন ভূবিজ্ঞানীরা। বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, হঠাৎই যেন বিছানা নাড়িয়ে উঠল। কেউ কেউ আবার জানালেন, মনে হচ্ছিল নিচ দিয়ে কিছু ভারী কিছু চলে গেল।
নিউ ইয়র্কের মতো ভূকম্পন-অপ্রবণ শহরে হঠাৎ কম্পন অনুভূত হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক ছড়ায়।
নিউ জার্সি সীমান্তে উৎসস্থল, তীব্রতা কম থাকলেও সতর্কতা জারি নিরাপত্তার খাতিরে মুহূর্তের মধ্যে সক্রিয় জরুরি পরিষেবা বিভাগজিওলজিক্যাল সার্ভে সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল নিউ জার্সি সীমান্তের কাছে। মাটির প্রায় ৫ কিমি গভীরে ছিল এই কম্পনের উৎস। যদিও এর গভীরতা ও তীব্রতা দুই-ই তুলনামূলকভাবে কম ছিল, তবু নিরাপত্তা ব্যবস্থা চাঙ্গা করতে তৎপর হয় প্রশাসন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জরুরি সতর্কতা জারি করা হয়। মেট্রো রেল থেকে শুরু করে বহুতল ভবনে সাময়িক নজরদারি চলে।কম্পনের উৎস নিউ জার্সির কাছাকাছি হওয়ায় আশপাশের অঞ্চলেও সামান্য কম্পন অনুভূত হয়েছে, যা প্রশাসনকে দ্রুত তৎপর হতে বাধ্য করে।
হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই, স্বস্তিতে নিউ ইয়র্কবাসীবহুতল নগরীতে ভূকম্পন নিয়ে নতুন করে চিন্তা বিজ্ঞানীদের
যদিও এই কম্পনে কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি, তবুও বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও ভূবিজ্ঞানীরা। কারণ, নিউ ইয়র্ক মূলত স্থির ভূত্বকে অবস্থান করছে, যেখানে বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা তুলনামূলক কম। তা সত্ত্বেও এমন কম্পনের ঘটনা কীভাবে ঘটল, তা নিয়ে তদন্তে নেমেছেন বিশেষজ্ঞরা। অনেকেই মনে করছেন, এটি হয়তো স্থানীয় কোন ভূত্বকীয় অসাম্যতার ফল, কিংবা মাইক্রোফল্ট লাইনের হালকা নড়াচড়া।কোনও ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না হলেও, নিউ ইয়র্কের মত মহানগরে ভূমিকম্প মানেই চিন্তার বিষয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সামাজিক মাধ্যমে চাঞ্চল্য, বহু বাসিন্দার ঘুম ভাঙল কম্পনে“দেয়ালের ঘড়িটা কাঁপছিল” – অভিজ্ঞতা শেয়ার নেটপাড়ায়
ভূমিকম্পের তীব্রতা যেহেতু কম ছিল, তাই অনেকেই হয়তো টের পাননি। তবে যাঁরা অনুভব করেছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে। টুইটার, রেডিট, ইনস্টাগ্রাম-সহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে অনেকেই জানিয়েছেন তাঁদের ভয় পাওয়ার অনুভব। কেউ লিখেছেন, সকালে বিছানা দুলছে দেখে মনে হল ভূত না ভূমিকম্প!” আবার একজন লিখেছেন, “ঘড়ির কাঁটা কাঁপতে দেখেই বুঝে গিয়েছিলাম, মাটি নড়ছে।ভূমিকম্পের পরে সামাজিক মাধ্যমে শোরগোল পড়ে যায়, সাধারণ মানুষ অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেয় হাস্যরস ও আতঙ্ক মিলিয়ে।
নিউ ইয়র্ক প্রশাসন আশ্বস্ত করল নাগরিকদের“এই কম্পনে চিন্তার কিছু নেই” – জানালেন মেয়র অফিস
নিউ ইয়র্ক সিটির প্রশাসনের তরফে এক বিবৃতি জারি করে জানানো হয়, ভূমিকম্পে শহরের কোথাও কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি এবং আতঙ্কের কিছু নেই। জরুরি পরিষেবা চালু রয়েছে এবং ভবিষ্যতের সম্ভাব্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে বিশেষ দল পর্যালোচনায় বসেছে। মেয়র অফিস আরও জানিয়েছে, এই ধরণের কম্পন কোনও অস্বাভাবিক নয়, তবে নজরে রাখা হচ্ছে প্রতিটি দিক।প্রশাসনের তরফে নাগরিকদের স্বস্তি দেওয়া হলেও, ভবিষ্যতে বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকি পুরোপুরি উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা।