চীনের তিয়ানজিনে অনুষ্ঠিত এসসিও (SCO) সম্মেলনে শীঘ্রই ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। সন্ত্রাসবাদ, অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়াও, আজ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে তার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এসসিও সামিট ২০২৫: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চীনের তিয়ানজিন শহরে আয়োজিত সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (SCO) সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিরাপত্তা, বাণিজ্য এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য এই সম্মেলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী শীঘ্রই এই সম্মেলনে ভাষণ দেবেন এবং বিশ্বের সামনে ভারতের চিন্তা-ভাবনা ও নীতি তুলে ধরবেন।
এসসিও সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনটি পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এরপর সদস্য দেশগুলোর ২৫তম বৈঠকের ফলাফল নিয়ে একটি যৌথ ঘোষণাও জারি করা হবে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর ভাষণে সন্ত্রাসবাদ এবং সীমান্ত-পার সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে ভারতের কঠোর নীতি পুনরায় বিশ্বের সামনে তুলে ধরবেন।
এসসিও সম্মেলনের সময়সূচী এবং প্রধান আলোচ্যসূচী
ভারতীয় সময় অনুযায়ী, এই সম্মেলন সকাল ৭:৩০ টা থেকে ৯:১০ টা পর্যন্ত চলবে। এরপর একটি যৌথ ঘোষণাপত্র জারি করা হবে, যেখানে সদস্য দেশগুলোর সম্মতিক্রমে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলির উল্লেখ থাকবে।
এসসিও-এর লক্ষ্য হল আঞ্চলিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং পারস্পরিক সহযোগিতাকে জোরদার করা। প্রধানমন্ত্রী মোদীর ভাষণে সন্ত্রাসবাদ, উগ্রবাদ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরুদ্ধে একযোগে লড়াই করার বার্তা থাকার সম্ভাবনা প্রবল। এছাড়াও, তিনি সীমান্ত-পার সন্ত্রাসবাদ রোধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিও জানাতে পারেন।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের কঠোর অবস্থান
সাম্প্রতিক সময়ে ভারত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর ভাষণে এই বিষয়টি পুনরায় উল্লেখ করবেন যে, সন্ত্রাসবাদ কেবল ভারতের জন্যই নয়, সমগ্র বিশ্বের জন্য একটি হুমকি।
সম্প্রতি पहलगाम (Pahalgam) হামলার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলতে পারেন যে, যারা সন্ত্রাসবাদকে উৎসাহিত করে, তাদের আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করা উচিত। ভারত সবসময়ই এই দাবি করে আসছে যে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কোনও দ্বৈত নীতি থাকা উচিত নয়।
অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং বাণিজ্যের উপর জোর
শুধুমাত্র নিরাপত্তাই নয়, এসসিও সম্মেলনে অর্থনৈতিক সহযোগিতা একটি বড় আলোচ্য বিষয়। প্রধানমন্ত্রী মোদী এই মঞ্চ থেকে স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য বাড়ানোর কথা বলতে পারেন। এর অর্থ হল, সদস্য দেশগুলি পারস্পরিক বাণিজ্যের জন্য মার্কিন ডলারের উপর নির্ভরতা কমিয়ে তাদের স্থানীয় মুদ্রা ব্যবহার করবে।
এছাড়াও, এসসিও ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবও আলোচনায় আসতে পারে। এই ব্যাংক সদস্য দেশগুলির অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং পরিকাঠামো প্রকল্পগুলিতে অর্থায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং পুতিনের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক
আজকের দিনটি ভারত এবং রাশিয়ার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এই বৈঠক সকাল ৯:১৫ মিনিটে শুরু হয়ে প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে চলবে। এই বৈঠকে উভয় নেতা পারস্পরিক সম্পর্ক, বাণিজ্যিক সহযোগিতা এবং ইউক্রেন যুদ্ধ সহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। আমেরিকার ট্যারিফ সংক্রান্ত বিষয়েও আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ভারতের ভূমিকা
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে সারা বিশ্বের নজর ভারতের উপরও রয়েছে। সম্প্রতি ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কি প্রধানমন্ত্রী মোদীর সাথে ফোনে কথা বলেছেন এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আবেদন জানিয়েছেন।
এমন পরিস্থিতিতে, পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোদী ইউক্রেন সংকটের শান্তিপূর্ণ ও কূটনৈতিক সমাধানের উপর জোর দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ভারত বরাবরই বলে আসছে যে, যুদ্ধের মাধ্যমে কারো কোনো লাভ হয় না এবং আলোচনা করাই হল এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র পথ।
এসসিও সম্মেলন থেকে ভারতের প্রত্যাশা
ভারত এই সম্মেলনের মাধ্যমে কেবল সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সমর্থনই जुटाতে চায় না, বরং অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তাতেও সুনির্দিষ্ট ফলাফল আশা করে। এসসিও-এর মতো মঞ্চে ভারতের লক্ষ্য হল বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে একটি বড় ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত থাকা।
এছাড়াও, ভারত চায় সদস্য দেশগুলি তাদের পারস্পরিক মতভেদ ভুলে গিয়ে সন্ত্রাসবাদ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অর্থনৈতিক সংকট-এর মতো চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলা করুক।