সেমিকন্ডাক্টর বিপ্লব ভারতে আত্মনির্ভরতার নতুন দিগন্ত খুললেন অশ্বিনী বৈষ্ণব

সেমিকন্ডাক্টর বিপ্লব ভারতে আত্মনির্ভরতার নতুন দিগন্ত খুললেন অশ্বিনী বৈষ্ণব

ডিজিটাল ভারতের রূপান্তরের নেপথ্যে এবার আসছে সেমিকন্ডাক্টর বিপ্লব। কেন্দ্রীয় আইটি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের দাবি, খুব শিগগিরই ভারত ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ চিপের যুগে প্রবেশ করতে চলেছে। শুধু প্রযুক্তি নয়, প্রতিরক্ষা থেকে মহাকাশ—সব ক্ষেত্রেই সেমিকন্ডাক্টর হয়ে উঠছে আগামী দিনের চালিকাশক্তি।

বিশাল যন্ত্র থেকে নখের সমান চিপ

একসময় কম্পিউটার মানেই ছিল ঘরভর্তি ভ্যাকুয়াম টিউব, যেন পুরনো টেলিফোন এক্সচেঞ্জ। আজ সেই প্রযুক্তির রূপান্তর হয়েছে নখের সমান সেমিকন্ডাক্টর চিপে। ছোট এই চিপ নিয়ন্ত্রণ করছে রকেট, ফাইটার প্লেন, স্যাটেলাইট থেকে শুরু করে দৈনন্দিন স্মার্টফোন পর্যন্ত। প্রযুক্তির জাদু এখানেই—যেখানে আকার ছোট হলেও ক্ষমতা অগাধ।

দেশের অগ্রগতির মেরুদণ্ড

বিদ্যুৎ, ইস্পাত, টেলিকম যেমন উন্নয়নের স্তম্ভ, তেমনই ডিজিটাল অর্থনীতির মেরুদণ্ড এখন সেমিকন্ডাক্টর। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, নবায়নযোগ্য শক্তি বা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা—সব ক্ষেত্রেই এই চিপ অপরিহার্য। যে দেশ চিপ তৈরি করতে পারে না, তাকে অন্যের উপর নির্ভর করতে হয়। তাই বৈষ্ণবের মতে, সেমিকন্ডাক্টর হল ভবিষ্যতের সবচেয়ে বড় সম্পদ।

কোভিডে শিক্ষা, ভূ-রাজনীতিতে গুরুত্ব

কোভিড-১৯ অতিমারির সময় চিপের ঘাটতি গোটা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। গাড়ি থেকে মোবাইল, শিল্পের উৎপাদন বন্ধ হয়ে ক্ষতি হয়েছিল হাজার হাজার কোটি টাকা। তখনই পরিষ্কার হয়ে যায়—চিপ শুধু প্রযুক্তি নয়, এটি আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতিরও মূল অস্ত্র। সামান্য ব্যাঘাতেই বিশ্বজুড়ে সরবরাহ শৃঙ্খল থমকে যায়।

ভবিষ্যতে চাহিদার বিস্ফোরণ

বর্তমানে ভারতে ৬৫ কোটিরও বেশি স্মার্টফোন ব্যবহারকারী। বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম তৈরির বাজার ইতিমধ্যেই বছরে ১২ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে এআই প্রযুক্তি, ডেটা সেন্টার এবং ইলেকট্রিক গাড়ি—যেখানে সেমিকন্ডাক্টর অপরিহার্য। তাই ভারতের সামনে এখন বিশাল সুযোগ আন্তর্জাতিক সাপ্লাই চেনে নিজেদের জায়গা করে নেওয়ার।

অতীতের আক্ষেপ কাটিয়ে নতুন যাত্রা

একসময় মনে করা হত, ভারত সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে সুযোগ হারিয়েছে। কিন্তু আজ ছবিটা সম্পূর্ণ আলাদা। ‘ইন্ডিয়া সেমিকন্ডাক্টর মিশন’-এর অধীনে ১০টি উৎপাদন কেন্দ্রের অনুমোদন হয়েছে। দ্রুত গতিতে গড়ে উঠছে কারখানা। বৈষ্ণব আশ্বাস দিয়েছেন, এ বছরই বাজারে আসবে প্রথম ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ চিপ।

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা

অ্যাপ্লায়েড মেটিরিয়ালস, ল্যাম রিসার্চ, মার্ক, লিন্ডে—বিশ্বের শীর্ষ সংস্থাগুলি ইতিমধ্যেই ভারতে বিনিয়োগ করছে। এরা একদিকে যেমন প্রযুক্তি আনছে, অন্যদিকে তেমনি ভারতের ভেতরে গড়ে তুলছে সাপ্লাই চেন। এতে ভারতের দীর্ঘমেয়াদি শিল্প প্রসারে আন্তর্জাতিক আস্থা স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

আত্মনির্ভর ভারতের সাফল্য

এই অল্প সময়ের সাফল্য প্রমাণ করছে প্রধানমন্ত্রীর দূরদৃষ্টি ও নীতির কার্যকর বাস্তবায়ন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সক্রিয় ভূমিকা, রাজ্য সরকারের সহযোগিতা এবং বিশেষজ্ঞদের অভিজ্ঞতা—সব মিলিয়েই ভারত আর আক্ষেপ করছে না, বরং বিশ্বের সামনে নতুন সম্ভাবনার দিশা দেখাচ্ছে।

আগামী দিনের লক্ষ্য

আগামী দশকে ভারতের সেমিকন্ডাক্টর শিল্প শক্ত অবস্থান নেবে বলেই আশাবাদী অশ্বিনী বৈষ্ণব। বিশ্বব্যাপী ভ্যালু-অ্যাডেড চেনের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠবে ভারত। দেশের প্রতিভা ও উদ্ভাবনী শক্তি এই বিপ্লবকে শুধু প্রযুক্তিগত নয়, অর্থনৈতিক এবং কৌশলগতভাবেও এগিয়ে নিয়ে যাবে।

 

Leave a comment