টানা পতনে বিপর্যস্ত শেয়ার বাজার তিন সপ্তাহে সেনসেক্স কমল ২৩০০ পয়েন্ট নিফটি নেমে গেল ২৫ হাজারের নিচে !

টানা পতনে বিপর্যস্ত শেয়ার বাজার তিন সপ্তাহে সেনসেক্স কমল ২৩০০ পয়েন্ট নিফটি নেমে গেল ২৫ হাজারের নিচে !

সপ্তাহের শেষ দিনেও পতন অব্যাহত, সেনসেক্স–নিফটির মুখ থুবড়ে পড়া থামছেই না

শুক্রবার, ১৮ জুলাই ছিল সপ্তাহের শেষ ট্রেডিং সেশন। কিন্তু আশা নয়, বিনিয়োগকারীরা পেলেন হতাশার ধাক্কা। সেনসেক্স এ দিন কমেছে ৫০১ পয়েন্ট বা ০.৬০ শতাংশ। ফলত সূচক এসে দাঁড়িয়েছে ৮১,৭৫৭–তে। নিফটিও পড়েছে ১৪৩ পয়েন্ট বা ০.৫৭ শতাংশ। এর ফলে নিফটি৫০ সূচক নেমে গেছে ২৫ হাজারের মনস্তাত্ত্বিক সীমার নিচে, অর্থাৎ ২৪,৯৬৮ পয়েন্টে। তিন সপ্তাহে নিফটি ও সেনসেক্স দুই-ই কমেছে প্রায় ৩ শতাংশ করে।

একাধিক সেক্টর পড়ল মুখ থুবড়ে, সামান্য উজ্জ্বলতা মিডিয়া ও মেটালে

শুক্রবার নিফটি মিডিয়া (০.৯৬%), নিফটি মেটাল (০.৩৭%) ও নিফটি ইন্ডিয়া ট্যুরিজ়ম (০.১৩%) সূচকে হালকা বৃদ্ধি দেখা গেলেও, বেশিরভাগ সেক্টরল সূচক ছিল রীতিমতো নেতিবাচক। নিফটি ইন্ডিয়া ডিফেন্স সূচক পড়েছে ২.৩২%, নিফটি প্রাইভেট ব্যাঙ্ক ১.৪৬%, নিফটি ব্যাঙ্ক ০.৯৬% এবং নিফটি ফিনান্সিয়াল সার্ভিস সূচক পড়েছে ০.৯৪%। একইসঙ্গে মিড ক্যাপ ও স্মল ক্যাপ সূচকও তীব্র পতনে পিষ্ট।

টানা তিন সপ্তাহের পতনের নেপথ্যে দুর্বল কর্পোরেট ফলাফল, ধাক্কা সেন্টিমেন্টে

বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, চলতি অর্থবর্ষের প্রথম কোয়ার্টারের কর্পোরেট রিপোর্ট বাজারকে ভীষণভাবে হতাশ করেছে। বহু সংস্থার আয়, মুনাফা কিংবা পরিচালন খরচ প্রত্যাশার তুলনায় নিচে। এর ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমেছে এবং বড় সংস্থাগুলির স্টক বিক্রি শুরু হয়েছে। এই চেইন রিঅ্যাকশনেই সূচক নামছে দিনে দিনে।

মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে ধোঁয়াশা, বিনিয়োগের পরিবেশে অনিশ্চয়তা

আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা নতুন করে বিনিয়োগে ব্রেক টেনেছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে নানা রিপোর্ট এলেও এখনো পর্যন্ত সরকারি স্তরে কোনও স্বচ্ছ বক্তব্য আসেনি। ফলে বৈদেশিক লগ্নিকারীদের একাংশ এই অবস্থাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন এবং নতুন বিনিয়োগ থেকে দূরে থাকছেন।

ভ্যালুয়েশন বেশি, লগ্নিকারীদের উদ্বেগ বেড়েছে নিফটির উচ্চ পিই নিয়ে

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজারের বর্তমান অবস্থা অনেকটাই স্ট্রেচড। নিফটির বর্তমান প্রাইস টু আর্নিং (P/E) রেশিও ২২.৬, যা গত দু’বছরের গড় ২২.৩–এর থেকেও বেশি। উচ্চ ভ্যালুয়েশন সাধারণত মুনাফার তুলনায় স্টকের দাম অনেক বেশি বোঝায়, যা বিনিয়োগকারীদের সাবধান করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ট্রেডারদের একাংশ স্টক বিক্রি করে বাজার থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন।

বিদেশি লগ্নিকারীদের টাকা তোলাই বাড়াচ্ছে চাপ, ধাক্কা বিনিয়োগের আবহে

FII (Foreign Institutional Investors)-রা গত কয়েক ট্রেডিং সেশনে ভারতীয় বাজার থেকে বড় অঙ্কের টাকা সরিয়ে নিচ্ছেন। এতে শুধু সূচকের ওপর চাপ বেড়েছে তা নয়, গোটা বিনিয়োগ আবহেই ছায়া ফেলেছে এই সিদ্ধান্ত। বিদেশি লগ্নিকারীদের আস্থা নড়ে গেলে সাধারণত বাজারে নেতিবাচক সেন্টিমেন্ট তৈরি হয়।

স্টক কেনাবেচায় সতর্কতা জরুরি, বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ আবশ্যিক

বর্তমান পরিস্থিতিতে শেয়ার কেনাবেচা বা নতুন বিনিয়োগে সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি। বাজারে পতনের ধারা অব্যাহত থাকায়, কোনও শেয়ার কিনবেন কি না—তা নির্ভর করছে সেই স্টকের ভিত, সংস্থার আয় রিপোর্ট, মার্কেট ট্রেন্ড এবং ভবিষ্যৎ দিশার উপর। বিনিয়োগের আগে সঠিক বিশ্লেষণ ও অভিজ্ঞ পরামর্শ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

Leave a comment