সেওনিতে ডাম্পার দুর্ঘটনায় ২ কাওড়িয়া নিহত, আহত ১৫

সেওনিতে ডাম্পার দুর্ঘটনায় ২ কাওড়িয়া নিহত, আহত ১৫

সেওনিতে বেনারস থেকে আকোলাগামী কাওড়িয়াদের একটি ডাম্পার ধাক্কা মেরেছে। দুর্ঘটনায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে এবং ১৫ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

দুর্ঘটনা: শ্রাবণ মাসে কাওড় যাত্রা চলাকালীন মধ্যপ্রদেশের সেওনি জেলায় একটি হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা ঘটেছে, যাতে দুই কাওড়িয়ার প্রাণহানি হয়েছে এবং আরও ১৫ জন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালে বান্ডোল থানা এলাকার চোর গরঠিয়া গ্রামের কাছে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে, যখন বেনারস থেকে গঙ্গাজল নিয়ে মহারাষ্ট্রের আকোলাগামী কাওড়িয়াদের একটি দলকে একটি দ্রুতগতির ডাম্পার পিছন থেকে ধাক্কা মারে।

প্রায় ৫০ জনের এই দলটি ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গের দর্শনে বেরিয়েছিল এবং গঙ্গাজল নিয়ে আকোলাতে তাদের গ্রাম পাতুরে ফিরছিল। দুর্ঘটনাটি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, ট্র্যাক্টর-ট্রলি উল্টে যায় এবং অনেক কাওড়িয়া রাস্তায় ছিটকে পড়েন।

কীভাবে ঘটল দুর্ঘটনা

এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি সেওনির জাতীয় সড়কে অবস্থিত সেন্ট্রাল পয়েন্ট হোটেলের কাছে ঘটেছে। স্থানীয় সময় প্রায় ৫টার দিকে যখন কাওড়িয়াদের দলটি ট্র্যাক্টর-ট্রলি নিয়ে হাইওয়ে ধরে যাচ্ছিল, তখন পিছন থেকে আসা একটি দ্রুতগতির ডাম্পার সজোরে ট্র্যাক্টরটিকে ও তার পিছনে হেঁটে যাওয়া কাওড়িয়াদের ধাক্কা মারে।

সংঘর্ষ এতটাই তীব্র ছিল যে ট্রলিটি উল্টে যায় এবং কাওড়িয়াদের চিৎকার-চেঁচামেচিতে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। ঘটনাস্থলেই দুই যুবকের মৃত্যু হয় এবং ১৫ জনেরও বেশি মানুষ আহত হন, যাদের মধ্যে ৯ জনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজন

ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজনের বক্তব্য, ডাম্পারটি খুব দ্রুত গতিতে ছিল এবং চালক ব্রেক করেননি। ট্র্যাক্টরে ধাক্কা মারার পরেই সে না থেমে পালিয়ে যায়। দুর্ঘটনার পরে স্থানীয় লোকজন এবং অন্যান্য কাওড়িয়ারা আহতদের সাহায্য করতে ছুটে আসেন।

প্রত্যক্ষদর্শী এক কাওড়িয়া জানান, 'আমরা শান্তিপূর্ণভাবে যাচ্ছিলাম। সকালের বাতাসে ভজন গাইছিলাম, তখনই পিছন থেকে প্রচণ্ড শব্দ হয় এবং সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। অনেকে রাস্তায় পড়ে যান, কারো মাথা ফেটে যায়, কারো হাত-পা ভেঙে যায়।'

প্রশাসনের পদক্ষেপ

ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই বান্ডোল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয় এবং আহতদের দ্রুত সেওনি জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়। একইসঙ্গে, মৃতদেহগুলো ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। পুলিশ ডাম্পারটি আটক করেছে, তবে ডাম্পার চালক ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেছে, যার খোঁজ শুরু হয়েছে। ঘটনার পর এনএইচ-৭-এ কিছু সময়ের জন্য যান চলাচল বন্ধ ছিল।

বান্ডোল থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক জানান, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে দ্রুত গতি ও গাফিলতির কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। 'আমরা মামলা নথিভুক্ত করেছি এবং ডাম্পার চালকের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।'

কাওড় যাত্রায় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন

এই দুর্ঘটনা আবারও কাওড় যাত্রীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ ভক্ত শ্রাবণ মাসে কাওড় যাত্রায় অংশ নেন, কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

এই যাত্রায় অংশ নেওয়া অন্য এক কাওড়িয়া কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, 'আমরা ভগবান শিবের জন্য জল ঢালতে বেরিয়েছিলাম, কিন্তু পথে এই ধরনের গাফিলতির কারণে আমাদের দুই সঙ্গীকে হারালাম। সরকারের উচিত এই ধরনের যাত্রায় ট্র্যাফিক এবং নিরাপত্তার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া।'

পরিবারের কাছে খবর, গ্রামে শোকের ছায়া

দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মৃত ও আহতদের পরিবারকে জানানো হয়েছে। খবরটি মহারাষ্ট্রের আকোলা জেলার পাতুর গ্রামে পৌঁছতেই শোকের ছায়া নেমে আসে। গ্রামের লোকেরা যে যুবকদের উৎসাহের সঙ্গে যাত্রায় পাঠিয়েছিল, তাদের মধ্যে দু'জনের মরদেহ হয়ে ফেরা ছাড়া আর কিছু অবশিষ্ট রইল না।

Leave a comment