আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত রবিবার H1B ভিসা এবং মার্কিন নীতির প্রসঙ্গে ভারতের জন্য একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। ভাগবত বলেছেন যে ভারতকে তার সমস্যার সমাধান নিজেই খুঁজে বের করতে হবে এবং কোনও বিদেশি চাপের কাছে মাথা নত করা উচিত নয়।
নয়াদিল্লি: রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-এর প্রধান মোহন ভাগবত H1B ভিসা সংক্রান্ত মার্কিন সিদ্ধান্তের ওপর রবিবার একটি বড় বিবৃতি দিয়েছেন। ভাগবত বলেছেন যে, ভারতের উচিত উদীয়মান চ্যালেঞ্জগুলি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপ নেওয়া। তবে একই সাথে, ভবিষ্যতে এই ধরনের সমস্যা এড়াতে, দেশকে উন্নয়ন ও অগ্রগতির সনাতন দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করে নিজের পথ নিজেই তৈরি করতে হবে।
একটি গ্রন্থ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন যে, ভারত ও বিশ্বের সামনে বর্তমান সমস্যাগুলো সেই ২০০০ বছরের পুরোনো ব্যবস্থার ফল, যা উন্নয়ন ও সুখের খণ্ডিত দৃষ্টিভঙ্গির উপর ভিত্তি করে ছিল।
সমস্যাগুলির সমাধান নিজেই করা জরুরি
ভাগবত একটি গ্রন্থ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বলেন যে, বিশ্বে বর্তমানে যে সমস্যাগুলি বিদ্যমান, সেগুলি গত ২০০০ বছর ধরে চলে আসা সেই খণ্ডিত দৃষ্টিভঙ্গির ফল, যা শুধুমাত্র উন্নয়ন ও সুখকে একটি সীমিত দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, "আমরা পরিস্থিতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারি না। এটি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য যা কিছু প্রয়োজনীয়, তা আমাদের করতে হবে। কিন্তু চোখ বন্ধ করে আমরা এগিয়ে যেতে পারি না। তাই আমাদের নিজেদের পথ নিজেদেরই তৈরি করতে হবে।"
ভাগবত আরও বলেন যে, ভবিষ্যতে কোনো না কোনো পর্যায়ে আমাদের আবারও এই সমস্যাগুলির মুখোমুখি হতে হবে, কারণ এই খণ্ডিত দৃষ্টিভঙ্গি সর্বদা 'আমি' এবং 'বাকি বিশ্ব'-এর মধ্যে একটি পার্থক্য বজায় রাখে।
জীবনের চারটি লক্ষ্য অনুসরণ করা
মোহন ভাগবত বলেন যে, ভারতের উচিত জীবনের চারটি লক্ষ্য – ধর্ম, অর্থ, কাম এবং মোক্ষ – অনুসরণ করা। তিনি স্পষ্ট করে বলেন যে, অর্থ (সম্পদ) এবং কাম (ইচ্ছা ও আনন্দ) কে অস্বীকার করা হয়নি, বরং এগুলি ধর্ম দ্বারা আবদ্ধ হওয়া উচিত যাতে কেউ পিছিয়ে না পড়ে। ভাগবত বলেন, "ধর্মের অর্থ পূজা পদ্ধতি নয়। এটি সেই নৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামো যা জীবনে ভারসাম্য বজায় রাখে। আর যে নিয়ম এই সবের উপর নজর রাখে, তা হল প্রাকৃতিক নিয়ম। এর অনুসরণ করা অত্যাবশ্যক।"
ভাগবত তিন বছর আগে আমেরিকায় একটি আলোচনার কথা উল্লেখ করেন, যেখানে ভারত-মার্কিন অংশীদারিত্ব, নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। তিনি বলেন যে, আলোচনার সময় মার্কিন পক্ষ বারবার বলতে থাকে যে, "যদি মার্কিন স্বার্থ সুরক্ষিত থাকে।" ভাগবত জানান, "প্রত্যেকের ভিন্ন ভিন্ন স্বার্থ রয়েছে, তাই সংঘাত চলতে থাকবে। কিন্তু শুধু জাতীয় স্বার্থই গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমারও স্বার্থ আছে। আমি সবকিছু আমার হাতে রাখতে চাই।"
পরিবেশ এবং বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি
আরএসএস প্রধান বলেন যে, ভারত পরিবেশগত বিষয়ে তার সমস্ত প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন যে, আর কে এমন করেছে, কারণ এই বিষয়ে কোনো প্রামাণিক প্রমাণ নেই। ভাগবত বলেন, "খাদ্য শৃঙ্খলে যে সবচেয়ে উপরে থাকে, সে সবাইকে খেয়ে ফেলে, আর সবার নিচে থাকাটা অপরাধ। তাই আমাদের নিজেদের স্বার্থ এবং কৌশলকে একটি ভারসাম্যপূর্ণ উপায়ে দেখতে হবে।"
ভাগবত ১৯৪৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ভারতের যুদ্ধ এবং সংঘাতের উপর আলোকপাত করে বলেন যে, যদি প্রতিটি সংঘর্ষে আমাদের যুদ্ধ করতে হত, তাহলে আমরা ক্রমাগত লড়াই করতে থাকতাম। কিন্তু আমরা এই সব সহ্য করেছি। আমরা যুদ্ধ হতে দেইনি। অনেক সময় আমরা তাদেরও সাহায্য করেছি, যারা আমাদের নীতির বিরোধিতা করেছিল।