বিহার নির্বাচন ২০২৫: বড়হরা আসনের চালচিত্র, জাতিগত সমীকরণ ও সম্ভাব্য ফলাফল

বিহার নির্বাচন ২০২৫: বড়হরা আসনের চালচিত্র, জাতিগত সমীকরণ ও সম্ভাব্য ফলাফল

বিহার বিধানসভা নির্বাচনের উত্তেজনার মধ্যে ভোজপুর জেলার বড়হরা আসনের দিকেও সবার নজর রয়েছে। এই বিধানসভা কেন্দ্রটি আরা লোকসভা আসনের অধীনে আসে এবং ১৯৫১ সাল থেকে এটি সাধারণ শ্রেণীর মর্যাদা পেয়েছে।

বড়হরা: বিহার বিধানসভা নির্বাচন ২০২৫ যতই কাছে আসছে, রাজ্যের প্রতিটি বিধানসভা আসনে রাজনৈতিক তৎপরতা ততই তীব্র হচ্ছে। ভোজপুর জেলার বড়হরা বিধানসভা আসনটি এবারও আলোচনার কেন্দ্রে। এই আসনটি আরা লোকসভা ক্ষেত্রের অধীনে আসে এবং ১৯৫১ সাল থেকে এটি সাধারণ শ্রেণীর মর্যাদা পেয়েছে। গঙ্গার তীরে অবস্থিত এই এলাকা তার উর্বর কৃষি জমির জন্য বিখ্যাত, কিন্তু বর্ষায় আসা বন্যা এখানকার সবচেয়ে বড় সমস্যা।

সামাজিক ও জাতিগত সমীকরণের প্রাধান্য

বড়হরা বিধানসভা কেন্দ্রে জাতিগত সমীকরণ বরাবরই নির্বাচনী রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু। এখানে ‘MY-বিহারী’ (মুসলিম-যাদব) এবং ‘লভ-কুশ’ (কুশওয়াহা-কোয়েরী) ভোট ব্যাঙ্কের বিশেষ প্রভাব দেখা যায়। এনডিএ (NDA) এর মনোযোগ রাজপুত, ব্রাহ্মণ এবং ইবিসি (অতি অনগ্রসর শ্রেণী) এর উপর থাকে। মহাজোট (আরজেডি-কংগ্রেস-বাম) যাদব, মুসলিম এবং তফসিলি জাতির উপর তাদের দখল বজায় রাখে।

নির্বাচনী পণ্ডিতদের মতে, কুশওয়াহা সম্প্রদায়ের ভোট এবারও নির্ণায়ক প্রমাণিত হবে এবং ২০২৫ সালে কার পাল্লা ভারী হবে, তা এই ঝুঁকের উপরই নির্ভর করবে।

২০১৫ সালের নির্বাচন – মহাজোটের জয়

বড়হরা আসনের বর্তমান বিধায়ক হলেন রাঘবেন্দ্র প্রতাপ সিং (বিজেপি)। তিনি ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী সরোজ যাদব (আরজেডি) কে প্রায় ৫,০০০ ভোটে পরাজিত করেছিলেন। সেই নির্বাচনে এনডিএ-এর হাওয়া সারা বিহারে চলেছিল এবং তার প্রভাব এখানেও স্পষ্ট দেখা গিয়েছিল। ২০১৫ সালে পরিস্থিতি ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত। সে সময় বিহারে মহাজোটের ঝড় বয়ে গিয়েছিল এবং এর সুফল বড়হরা আসনেও দেখা যায়। আরজেডি-এর সরোজ যাদব বিজেপি প্রার্থী আশা দেবীকে ১৩,৩০৮ ভোটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছিলেন।

  • সেই নির্বাচনে আরজেডি-এর ভোট ভাগ ছিল ৪৪.৩৪%,
  • অন্যদিকে বিজেপি পেয়েছিল মাত্র ৩৫.২৬% ভোট।

এই ফলাফল স্পষ্ট করে যে এই আসনে পরিবেশ এবং জাতিগত সমীকরণ বদলালেই ফলাফলও দ্রুত পরিবর্তিত হয়। ২০১০ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও বড়হরা অত্যন্ত আকর্ষণীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখেছিল। সে সময় আরজেডি থেকে রাঘবেন্দ্র প্রতাপ সিং প্রার্থী ছিলেন এবং তিনি জেডিইউ-এর আশা দেবীকে মাত্র ১,০৮৩ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছিলেন। সেবার মোট ১,১১,০৪৯ ভোট পড়েছিল, যেখানে জয়-পরাজয়ের ব্যবধান ছিল অত্যন্ত সামান্য।

নির্বাচনী সমীকরণ ২০২৫: কী বলছে হিসাব?

আসন্ন নির্বাচনে বড়হরা বিধানসভা আসনটি আরও একবার আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে। এনডিএ রাজপুত এবং ব্রাহ্মণ ভোট ব্যাঙ্ককে শক্তিশালী রাখার কৌশল নিয়ে কাজ করবে। মহাজোট যাদব ও মুসলিম ভোটের পাশাপাশি দলিত ভোটগুলিও একত্রিত করার চেষ্টা করবে। কুশওয়াহা এবং কোয়েরী ভোটাররা – যাদের প্রায়শই ‘কিংমেকার’ বলা হয় – এবারও নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করতে পারেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যদি মহাজোট কুশওয়াহা ভোট নিজেদের দিকে টানতে সফল হয়, তাহলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কঠিন হয়ে উঠবে। অন্যদিকে, যদি এনডিএ এই ভোটগুলি একত্রিত করতে পারে, তাহলে বর্তমান বিধায়ক পুনরায় জয়লাভ করতে পারেন।

Leave a comment