ভারত সরকারের তদন্তকারী সংস্থা ডিজিটিআর (DGTR) চীন থেকে আমদানি করা কোল্ড রোল্ড নন-অরিয়েন্টেড ইলেকট্রিক্যাল স্টিলের উপর পাঁচ বছরের জন্য অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপের সুপারিশ করেছে। এর উদ্দেশ্য হল দেশীয় সংস্থাগুলিকে সস্তা চীনা আমদানি থেকে রক্ষা করা এবং ন্যায্য বাণিজ্যকে উৎসাহিত করা। ভারত-চীনের ১০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বাণিজ্য ঘাটতির মধ্যে এই পদক্ষেপকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
শুল্ক ধার্য করুন: নয়াদিল্লিতে বাণিজ্য মন্ত্রকের তদন্তকারী সংস্থা ডিজিটিআর (DGTR) চীনের বিরুদ্ধে একটি বড় সুপারিশ করেছে। তারা চীন থেকে আমদানি করা কোল্ড রোল্ড নন-অরিয়েন্টেড ইলেকট্রিক্যাল স্টিলের উপর পাঁচ বছরের জন্য অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপের সুপারিশ করেছে। তদন্তে দেখা গেছে যে চীনা সংস্থাগুলি এই পণ্যটি ভারতে স্বাভাবিক মূল্যের চেয়ে কম দামে বিক্রি করছে, যার ফলে ডাম্পিং হচ্ছে। শুল্কের হার প্রতি টন ২২৩.৮২ থেকে ৪১৪.৯২ ডলার পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হল দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করা এবং বাজারে ন্যায্য প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা।
কেন ডাম্পিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে
ডিজিটিআর (DGTR)-এর তদন্তে দেখা গেছে যে চীন এই ইস্পাতটি ভারতে স্বাভাবিক মূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে রপ্তানি করছে। এর ফলে ভারতীয় সংস্থাগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং বাজারে অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হচ্ছে। তদন্তের পর ডিজিটিআর (DGTR) তাদের রিপোর্টে স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে চীনা রপ্তানি ডাম্পিংয়ের আওতায় পড়ে। এই ভিত্তিতেই চীন থেকে আসা এই পণ্যের উপর অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপের সুপারিশ করা হয়েছে।
ডাম্পিং শুল্ক কত হবে
রিপোর্ট অনুযায়ী, কিছু চীনা সংস্থার উপর প্রতি টন ২২৩.৮২ ডলার শুল্ক আরোপের সুপারিশ করা হয়েছে। অন্যদিকে, অন্যান্য সংস্থার উপর এই শুল্ক প্রতি টন ৪১৪.৯২ ডলার পর্যন্ত রাখা হয়েছে। ডিজিটিআর (DGTR) মনে করে যে এই পদক্ষেপ ভারতীয় ইস্পাত সংস্থাগুলিকে স্বস্তি দেবে এবং চীনা আমদানি থেকে সৃষ্ট সমস্যাগুলি হ্রাস করবে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অর্থ মন্ত্রককে নিতে হবে। মন্ত্রক নির্ধারণ করবে কখন থেকে শুল্ক কার্যকর হবে এবং কোন স্তরে এটি প্রয়োগ করা হবে।
কেন ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করা হয়
ডাম্পিং শুল্ক কোনো দেশের দেশীয় সংস্থাগুলিকে রক্ষা করার জন্য আরোপ করা হয়। যখন কোনো বিদেশী সংস্থা তাদের পণ্য অত্যন্ত কম দামে অন্য কোনো দেশে বিক্রি করে, তখন স্থানীয় সংস্থাগুলি প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে না। এমন পরিস্থিতিতে সরকার ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করে মূল্যকে ভারসাম্যপূর্ণ করার চেষ্টা করে। এর ফলে দেশীয় শিল্পগুলি সমান সুযোগ পায় এবং বাজারে ন্যায্য প্রতিযোগিতা বজায় থাকে।
ভারত ও চীনের বাণিজ্য
ভারত ও চীন বিশ্বের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদারদের মধ্যে অন্যতম। ২০২৫ অর্থবর্ষে উভয় দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১২৭.৭১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এর মধ্যে ভারতের আমদানি চীন থেকে ছিল ১১৩.৫ বিলিয়ন ডলার, যেখানে ভারত থেকে চীনে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ১৪.২ বিলিয়ন ডলার। এই কারণেই ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি বা ট্রেড ডেফিসিট ৯৯.২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এই ঘাটতি ভারতের জন্য ক্রমাগত উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভারত কী আমদানি করে
ভারত চীন থেকে প্রধানত ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, শিল্প যন্ত্রপাতি, পাওয়ার সরঞ্জাম, রাসায়নিক এবং মোবাইল ফোনের যন্ত্রাংশ আমদানি করে। চীন এই পণ্যগুলি কম দামে প্রচুর পরিমাণে ভারতে পাঠায়। এই কারণে ভারতীয় বাজার এই আমদানিকৃত পণ্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে এবং দেশীয় সংস্থাগুলির তাদের পণ্য বিক্রি করতে অসুবিধা হয়।
এর আগেও শুল্ক আরোপ করা হয়েছে
ভারত এর আগেও চীন থেকে আসা বেশ কয়েকটি পণ্যের উপর অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে রাসায়নিক, ইস্পাত পণ্য, প্লাস্টিক এবং ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী। সরকার জানিয়েছে যে এই পদক্ষেপগুলি দেশীয় শিল্পগুলিকে শক্তিশালী করেছে এবং বাজারে ভারসাম্য বজায় রেখেছে। এখন কোল্ড রোল্ড নন-অরিয়েন্টেড ইলেকট্রিক্যাল স্টিলকেও এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তুতি চলছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত ও চীনের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে সম্পর্ক কিছুটা স্বাভাবিক হতে দেখা গেছে। কিন্তু এর মধ্যেই চীনা ডাম্পিংয়ের ঝুঁকি আবার বেড়েছে। ভারত চায় না যে দেশীয় শিল্পগুলি আবার ক্ষতির সম্মুখীন হোক। এই কারণেই ডিজিটিআর (DGTR) ভারতকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেছে।