শ্যাম কৌশল ক্যান্সার জয় করে এবং আত্মহত্যার চিন্তা থেকে বেরিয়ে এসে নতুন জীবন পেয়েছেন। তাঁর গল্প সাহস, আশা এবং পরিবারের ভালোবাসার উদাহরণ।
Vicky Kaushal: বলিউডের জনপ্রিয় অ্যাকশন পরিচালক এবং ভিকি কৌশলের বাবা, শ্যাম কৌশল, সম্প্রতি তাঁর ক্যান্সার জয়ের এবং সেই সময়ের মানসিক কষ্টের কথা জানিয়েছেন। যেখানে তিনি পর্দায় সবসময় বিপজ্জনক স্টান্টস এবং অ্যাকশন সিকোয়েন্সের মাস্টার ছিলেন, সেখানে বাস্তবে তিনি মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ফিরে এসে জীবনের এক নতুন সংজ্ঞা খুঁজে পেয়েছেন।
হাসপাতালের তিন তলা থেকে ঝাঁপ দেওয়ার চিন্তা
২০০৩ সালে একটি সাধারণ সার্জারির পর শ্যাম কৌশল জানতে পারেন যে তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত। এই খবর এতটাই হৃদয়বিদারক ছিল যে তিনি কিছুক্ষণের জন্য জীবন শেষ করে দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন। একটি পডকাস্টে কথা বলার সময় তিনি বলেন, 'সেই রাতে আমার মনে হয়েছিল যে আমি হাসপাতালের তিন তলা থেকে ঝাঁপ দিই। আমি ভেবেছিলাম যদি মরতেই হয়, তাহলে এখনই কেন নয়?' কিন্তু শরীরে সার্জারির ব্যথা থাকার কারণে তিনি নড়াচড়া করতেও পারছিলেন না এবং সম্ভবত এই কারণেই তিনি চিন্তা করার এবং বেঁচে থাকার আরও একটি সুযোগ পেয়েছিলেন।
ভগবানের কাছে শুধুমাত্র ১০ বছরের সময় চেয়েছিলেন
শ্যাম কৌশল বলেন যে সেই রাতের পর যখন পরের সকাল হল, তখন তাঁর মনে হয়েছিল যেন তিনি একটি নতুন শুরু পেয়েছেন। তিনি জানান, 'আমি ভগবানের কাছে শুধু ১০ বছরের জীবন চেয়েছিলাম। কিন্তু আজ ২২ বছর হয়ে গেছে। এটা কোনো অলৌকিক ঘটনার থেকে কম নয়।' এই ঘটনা তাঁর জীবনের টার্নিং পয়েন্ট ছিল।
জীবনের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন
ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করার পর শ্যাম কৌশলের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণভাবে বদলে যায়। আগে যে জীবন শুধু কাজ এবং দায়িত্বের মধ্যে আবদ্ধ ছিল, এখন তাতে আশা, বিশ্বাস এবং পরিবারের গুরুত্ব যোগ হয়েছে। তিনি জানান যে ক্যান্সারের সেই সময়ে তিনি তাঁর ইচ্ছাশক্তিকে আরও শক্তিশালী করেছিলেন এবং কখনও হার মানেননি। 'জীবন ধারণের ইচ্ছা খুব শক্তিশালী হয়। আমি আমার সন্তানদের জন্য, পরিবারের জন্য এবং নিজের জন্য বাঁচতে চেয়েছি।'
ছেলে ভিকি এবং সানীর সাফল্য থেকে শক্তি পেয়েছেন
শ্যাম কৌশলের ছেলে ভিকি কৌশল আজ বলিউডের প্রথম সারির অভিনেতাদের মধ্যে একজন। অন্যদিকে ছোট ছেলে সানী কৌশলও ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের পরিচিতি তৈরি করেছেন। তাঁর পুত্রবধূ ক্যাটরিনা কাইফও ইন্ডাস্ট্রির জনপ্রিয় অভিনেত্রী। শ্যাম কৌশল মনে করেন যে তাঁর পরিবারের সাফল্য এবং তাঁদের সঙ্গ তাঁকে সাহস জুগিয়েছে। 'আমি আমার সন্তানদের চোখে আশা দেখতাম এবং সেটাই আমার সবচেয়ে বড় শক্তি হয়ে উঠেছিল।'
অ্যাকশনের জগতের পর আসল জীবনের হিরো
শ্যাম কৌশল ‘গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর’, ‘পিকে’, ‘পদ্মাবত’, ‘সঞ্জু’, ‘স্লামডগ মিলিয়নেয়ার’ এর মতো ব্লকবাস্টার সিনেমায় অ্যাকশন পরিচালনা করেছেন। কিন্তু তিনি বলেন আসল স্টান্ট ছিল যখন তিনি মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করেছিলেন এবং তাকে হারিয়েছিলেন। তিনি বলেন, 'অ্যাকশন সিনে কাট বলা হয়ে যায়, কিন্তু আসল জীবনে লড়াই ততক্ষণ চলে যতক্ষণ না আপনি নিজে হেরে যান।'
ইন্ডাস্ট্রিতে সংগ্রাম থেকে খ্যাতি
পাঞ্জাব থেকে মুম্বাই আসা শ্যাম কৌশল শুরুতে স্টান্টম্যান হিসেবে কাজ করতেন। তিনি অনেক বছর ধরে সংগ্রাম করেছেন এবং তারপর অ্যাকশন ডিরেক্টর হিসেবে পরিচিতি পান। তাঁর প্রথম সিনেমা ছিল মালয়ালম ইন্ডাস্ট্রির ‘ইন্দ্রজালাম’ (1990)। এর পর তিনি বলিউডে নিজের ছাপ ফেলেন।
ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করার সময় কারা সঙ্গ দিয়েছিলেন
এই কঠিন সময়ে শ্যাম কৌশলের কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং পরিবার তাঁকে মানসিকভাবে সমর্থন জুগিয়েছিলেন। তিনি জানান, 'আমি সেই সময় অনেক ভালো মানুষকে জেনেছি, যাদের ভালোবাসা এবং দোয়া আমার সঙ্গে ছিল। কিছু ডাক্তার এবং হাসপাতালের কর্মীরাও আমার কাছে পরিবারের মতো হয়ে গিয়েছিলেন।'
আজ অনুপ্রেরণার উৎস
আজ যখন শ্যাম কৌশল তাঁর গল্প বলেন, তখন তিনি শুধু একজন অ্যাকশন ডিরেক্টর নন, বরং সেই লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য আশার আলো, যাঁরা ক্যান্সারের মতো গুরুতর রোগের সঙ্গে লড়াই করছেন। তিনি একটি আবেগপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন, 'যদি কখনও মনে হয় জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাহলে থামুন, ভাবুন এবং তারপর বাঁচার পথ খুঁজুন। হতে পারে সেই মুহূর্তটিই আপনার সবচেয়ে বড় জয় হয়ে উঠবে।'