সিম বন্ধের বার্তা: সাইবার জালিয়াতি ও সুরক্ষার উপায়

সিম বন্ধের বার্তা: সাইবার জালিয়াতি ও সুরক্ষার উপায়

SIM বন্ধ হওয়ার কথা বলে সাইবার অপরাধীরা জাল কল এবং মেসেজ পাঠিয়ে লোকেদের থেকে ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে SIM Swap জালিয়াতি করছে। এর মাধ্যমে OTP হ্যাক করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খালি করা যেতে পারে। DoT সতর্কবার্তা জারি করেছে এবং সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে।

SIM Swap Fraud: দেশে ডিজিটাল জালিয়াতির ঘটনা দ্রুত বাড়ছে। এখন একটি নতুন পদ্ধতি সামনে এসেছে যেখানে সাইবার অপরাধীরা 'SIM কার্ড বন্ধ হওয়ার' ভয় দেখিয়ে ব্যবহারকারীদের ফাঁদে ফেলছে। ভারত সরকারের টেলিযোগাযোগ বিভাগ (DoT) সম্প্রতি এ বিষয়ে সতর্কবার্তা জারি করে বলেছে যে, লোকেরা এই জাল কল এবং মেসেজ থেকে সাবধান থাকুক।

কী এই ‘SIM বন্ধ হওয়ার’ নতুন স্ক্যাম?

অনেক ব্যবহারকারীর মোবাইল নম্বরে সম্প্রতি একটি SMS বা কল আসে, যেখানে বলা হয় যে আপনার SIM-এর KYC অসম্পূর্ণ এবং এটি অবিলম্বে সম্পন্ন না করলে আপনার SIM বন্ধ করে দেওয়া হবে। সেইসাথে একটি লিঙ্ক বা নম্বর দেওয়া হয়, যেখানে কল করতে বা ক্লিক করতে বলা হয়।

এটা শুনতে স্বাভাবিক মনে হতে পারে, তবে আসলে এটি একটি সাইবার জালিয়াতির ফাঁদ। এতে, আপনি লিঙ্কটিতে ক্লিক করা বা তথ্য শেয়ার করার সাথে সাথেই, অপরাধীরা আপনার পরিচয় ব্যবহার করে আপনার নম্বরের নামে নতুন SIM কার্ড ইস্যু করে নেয়। এই প্রক্রিয়াকে SIM Swap বলে।

DoT কী বলেছে?

টেলিযোগাযোগ বিভাগ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম X-এ একটি পোস্ট জারি করে জানিয়েছে যে:

'DoT, TRAI বা কোনো টেলিকম কোম্পানি SIM বন্ধ করার বিষয়ে কোনো ব্যবহারকারীকে ফোন বা মেসেজ করে না। যদি এই ধরনের কোনো বার্তা আসে, তাহলে সতর্ক থাকুন এবং কোনো লিঙ্কে ক্লিক বা কল ব্যাক করবেন না।'

কীভাবে হয় SIM Swap জালিয়াতি?

১. জাল কল বা মেসেজের মাধ্যমে তথ্য চুরি

অপরাধীরা নিজেদের টেলিকম কোম্পানির কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ব্যবহারকারীর কাছ থেকে আধার কার্ড, জন্ম তারিখ, ঠিকানা-এর মতো ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে।

২. নতুন SIM ইস্যু করা

একই তথ্য ব্যবহার করে কোনো নিকটবর্তী স্টোর থেকে আপনার নম্বরের উপর নতুন SIM ইস্যু করা হয়।

৩. আপনার নম্বর বন্ধ, তাদের সক্রিয়

পুরনো SIM হঠাৎ কাজ করা বন্ধ করে দেয় এবং নতুন SIM অপরাধীর কাছে সক্রিয় হয়ে যায়।

৪. OTP এবং ব্যাংকিং কন্ট্রোল

এর পরে, সমস্ত OTP, ব্যাংক অ্যালার্ট এবং পাসওয়ার্ড তাদের কাছে পৌঁছায়। এবং তারা আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, UPI এবং সোশ্যাল মিডিয়ার নিয়ন্ত্রণ নেয়।

কেন এই জালিয়াতি এত বিপজ্জনক?

  • OTP-এর মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট অ্যাক্সেস করে ব্যাংক থেকে টাকা স্থানান্তর করতে পারে।
  • সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল হাইজ্যাক করে অন্যদের কাছ থেকে টাকা চাইতে পারে।
  • আপনার পরিচয়কে ভুলভাবে ব্যবহার করতে পারে।
  • কিছু মিনিটের মধ্যে আপনার পুরো ডিজিটাল জীবন হ্যাক হতে পারে।

কীভাবে চিনবেন এই ধরনের জালিয়াতি?

  • মেসেজে অশুদ্ধ ভাষা, সন্দেহজনক লিঙ্ক বা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানানোর চাপ।
  • ফোনে অতিরিক্ত তথ্য চাওয়া, যা সাধারণত টেলিকম কোম্পানিগুলি করে না।
  • মেসেজে ‘KYC আপডেট করুন’, ‘SIM বন্ধ হয়ে যাবে’, ‘এখনই ক্লিক করুন’-এর মতো ভয় সৃষ্টিকারী শব্দ।

কীভাবে SIM Swap-এর মতো সাইবার হামলা থেকে বাঁচবেন?

  1. OTP, পিন এবং পাসওয়ার্ড কাউকে দেবেন না: টেলিকম, ব্যাংক বা সরকারি সংস্থা কখনোই আপনার কাছ থেকে এটি চায় না।
  2. আলাদা মোবাইল নম্বর ব্যবহার করুন: ব্যাংকিং এবং OTP-এর জন্য একটি আলাদা নম্বর রাখুন, যা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হয়নি।
  3. SIM-এ কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করুন: হঠাৎ নেটওয়ার্ক চলে যাওয়া, কল বা SMS না আসা—এগুলো লক্ষণ হতে পারে।
  4. আপনার নেটওয়ার্ক প্রদানকারীর সাথে যোগাযোগ করুন: কোনো সন্দেহজনক কার্যকলাপ দেখা গেলে, টেলিকম কাস্টমার কেয়ারে কথা বলুন।
  5. SANCHAR SATHI পোর্টাল ব্যবহার করুন: DoT-এর পোর্টাল https://sancharsathi.gov.in-এ গিয়ে স্প্যাম মেসেজ এবং কলের অভিযোগ করুন।
  6. ব্যাংক এবং সোশ্যাল মিডিয়া: অ্যাকাউন্টগুলিতে ২-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু করুন। এর মাধ্যমে শুধুমাত্র OTP-এর মাধ্যমেই লগ-ইন বা লেনদেন সম্ভব হবে।
  7. আপনার নম্বরের কার্যকলাপের উপর নজর রাখুন: যদি ব্যাংক বা অন্য কোনো সাইট থেকে ‘SIM পরিবর্তন’ বা ‘নতুন ডিভাইস লগইন’-এর মেসেজ আসে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক হোন।

যদি জালিয়াতি হয়ে যায়, তাহলে কী করবেন?

  • অবিলম্বে মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারীকে ফোন করুন এবং নম্বরটি ব্লক করুন।
  • আপনার ব্যাংককে অবহিত করুন এবং লেনদেন বন্ধ করুন।
  • https://cybercrime.gov.in ওয়েবসাইটে অভিযোগ করুন।
  • নিকটস্থ সাইবার সেল বা পুলিশ স্টেশনে FIR দায়ের করুন।

Leave a comment