বাজার নয় সোশ্যালে বাজি-বিক্রি: ইনবক্সে হচ্ছে চকোলেট বোমার ডিল

বাজার নয় সোশ্যালে বাজি-বিক্রি: ইনবক্সে হচ্ছে চকোলেট বোমার ডিল

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে চকোলেট বোমাসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ বাজি হোম-বেসড বিক্রি করা হচ্ছে—ইনবক্সেই ডিল চুটকিতে সম্পন্ন করছেন বিক্রেতা-গ্রাহকরা। উত্তর কলকাতার দমদম-নাগেরবাজারের স্থানীয় ফেসবুক গ্রুপে প্রকাশিত পোস্টে বিক্রেতা সরাসরি মোবাইল নম্বর দিয়ে অর্ডার এবং ডেলিভারির প্রস্তাব দিয়েছেন। বিধাননগর কমিশনারেট জানায়, সামাজিক প্রচারণা ও তল্লাশি শুরু হলেও সোশ্যাল নেটওয়ার্কে লেনদেন রোধে কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি।

সোশ্যাল মিডিয়ায়ই চলছে বাজি-বিক্রি

ফেসবুক গ্রুপগুলোতে বাজির ছবি ও দাম দিয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে; বিক্রেতারা সরাসরি ফোন নম্বর দিয়ে যোগাযোগের অনুরোধ করছেন। কেউ বাড়িতে ডেলিভারি, কেউ নির্দিষ্ট পয়েন্টে “হাতবদল” করার কথা বলছেন—সবই ইনবক্সে চ্যাট করে ঠিক হয়ে যাচ্ছে। গ্রাহকদের ভয় কাটাতে বিক্রেতারা স্পষ্টভাবে জানাচ্ছেন পুলিশ ঝামেলা হবে না” বা অন্যভাবে প্যাক করে দেওয়া হবে।এই নতুন প্রক্রিয়ায় পুলিশি নজর এড়ানোর কৌশল নিয়ে দোকানদাররা পরামর্শও দিচ্ছেন। অনেক পোস্টে চকোলেট বোমা-সহ নিষিদ্ধ আইটেমের ছবি রেখে হোম-ডেলিভারি পরিষেবা বিজ্ঞাপন করা হচ্ছে। গ্রুপ অ্যাডমিন কেন অনুমোদন দিল—এ ধরেও প্রশ্ন উঠেছে স্থানীয় কমিউনিটিতে।

কিভাবে চলছে লেনদেন — আহ্বান থেকে ডেলিভারি পর্যন্ত

প্রতিপাদিত কথোপকথনে দেখা যায়, বিক্রেতারা বলছেন তাদের কোনো দোকান নেই; সবকিছু হোম-বেসড। ক্রেতারা দরজায় ডেলিভারি বা নির্দিষ্ট স্থানে ডাউনলোড করে পণ্য নেওয়ার অপশন পাচ্ছেন — প্রয়োজন হলে আগের দিন ফোন করে রেডি রাখার কথাও বলা হচ্ছে। দামের কথাও ভর্তি: পিস ভিত্তিক ও প্যাকেট অর্ডারে ছাড় মিলছে।গ্রাহককে আশ্বস্ত করতে পোস্টে কমেন্টে বিক্রেতারা সতর্কতা চালাচ্ছেন—কিছু ছবি মুছে ফেলেও সীমিত ছবিই রাখা হচ্ছে। তবু পুরোপুরি হাইড করা সম্ভব হচ্ছে না; শনিবার রাত পর্যন্ত কিছু চকোলেট বোমার ছবি গ্রুপে রয়ে গিয়েছিল।

প্রশাসন-পুলিশের পদক্ষেপ ও সীমাবদ্ধতা

বিধাননগর কমিশনারেট জানিয়েছে, আবাসন, সিভিল ও অন্যান্য প্রতিরক্ষা প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে; সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে সতর্কতা প্রচার, তল্লাশি ও বাজি বাজেয়াপ্তির উদ্যোগ চলছে। কিছু নিষিদ্ধ বাজি জব্দ করা হলেও অনলাইন-অফলাইন মিশ্র মডেলে লেনদেন বন্ধ করা পুরোপুরি কঠিন।পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সোশ্যাল মিডিয়ার প্রাইভেট মেসেজে হওয়া লেনদেন খতিয়ে দেখা কঠিন—অ্যাকাউন্ট লুকোচুরি বা একাধিক আইডি, দ্রুত মেসেজ ডিলিট ইত্যাদি এতক্ষণ ধরে কাজকে জটিল করে তোলে। ফলে নজরদারি ছাড়াও কমিউনিটি-সচেতনতা বাড়ানো জরুরি বলে তারা মনে করছে।

স্থানীয় প্রতিক্রিয়া ও নিরাপত্তা-আশঙ্কা

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, দীপাবলিতে রাতভর শব্দবাজির কারণে পরিবেশ ও জননিরাপত্তা ভুগে—বিশেষ করে শিশু ও পশুদের উপর প্রভাব পড়ছে। কিছু সচেতন নাগরিক অনলাইনে রিপোর্ট করে গ্রুপ অ্যাডমিনকে নিয়ন্ত্রণে আনার দাবি তুলেছেন। এক অ্যাডমিন কমেন্টে বলেছে, কিছু ছবি রিমুভ করা হয়েছে, তবু পুরো পোস্ট মুছে ফেলাই হল না।শিক্ষাবর্ধক ও পরিবেশ কর্মীরা মনে করেন, সামাজিক প্ল্যাটফর্মেও বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত কর্মযজ্ঞ না হলে প্রতিটি উৎসবে অনিয়ম বাড়তেই থাকবে। তাদের দাবি—প্ল্যাটফর্ম পর্যায়ে দ্রুত রিপোর্টিং-মেকানিজম, স্থানীয় পুলিশ-অ্যাডমিন সমন্বয় ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা দরকার।

অফলাইন বাজারে না রেখে সোশ্যাল মিডিয়া ও ইনবক্সে বেআইনী বাজি-বিক্রি ছড়াচ্ছে। বিক্রেতারা গ্রুপে ছবি দিয়েছে, হোম-ডেলিভারি ও “পুলিশ ঝামেলা নেই” নিশ্চিত করে ডিল করছেন। বিধাননগর কমিশনারেট বলেছে সতর্কতা ও তল্লাশি চলছে, তবুও সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বোঝা যাচ্ছে না।

Leave a comment