দক্ষিণ কলকাতা আইন কলেজের বহুল আলোচিত গণধর্ষণ মামলায় ফের নতুন মোড়। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত নিরাপত্তারক্ষী পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায় চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন, ঘটনার দিন সকাল থেকেই কলেজের ইউনিয়ন রুমে ছিলেন আরও এক ছাত্রী। জানা যাচ্ছে, ওই ছাত্রী বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত সেখানে ছিলেন এবং রাত সাড়ে আটটা নাগাদ কলেজ থেকে বেরিয়ে যান। এখন প্রশ্ন উঠছে— ওই দীর্ঘ সময় তিনি সেখানে কী করছিলেন? কিছু দেখেছেন বা শুনেছেন কি? তদন্তকারীরা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছে। পুলিশ সূত্রের খবর, তাঁর বক্তব্য এই মামলার মোড় ঘোরাতে পারে।
নিরাপত্তারক্ষীর মোবাইল কেড়ে নিয়ে একপ্রকার বন্দি করে রেখেছিল অভিযুক্তরা! দাবি তদন্তে
ধৃত পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ঘটনার দিন অভিযুক্ত মনোজিত, জায়েব ও প্রমিত পরিকল্পিতভাবে তাঁর মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। উদ্দেশ্য ছিল, তিনি যেন কোনওভাবেই বাইরের জগৎকে ঘটনাটি জানাতে না পারেন। নিরাপত্তারক্ষীর এমন অভিযোগে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে তদন্তমহলে। পুলিশ এখন খতিয়ে দেখছে, ঠিক কখন এবং কোথায় তাঁর মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। এমনকি ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করে জানতে চাওয়া হচ্ছে, ঘটনাকালীন কোথায় ছিল ফোনটি। তদন্তে উঠে আসতে পারে আরও বিস্ফোরক তথ্য।
ডে শিফটের নিরাপত্তারক্ষীর ভূমিকা নিয়ে রহস্য! তদন্তে বাড়ছে চাপ, খতিয়ে দেখা হচ্ছে দিনের প্রতিটি মুহূর্ত
শুধু রাতের নিরাপত্তারক্ষী নয়, এবার পুলিশের নজরে দিনের শিফটের নিরাপত্তারক্ষীও। ঘটনার দিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কলেজের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই তাঁকে শনাক্ত করেছে তদন্তকারী দল। শীঘ্রই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।ইউনিয়ন রুম কিংবা কলেজের অন্যান্য গোপন জায়গায় কোনও অস্বাভাবিক গতিবিধি তিনি লক্ষ্য করেছিলেন কি? কলেজ চত্বরে বহিরাগত প্রবেশ, ছাত্রদের সন্দেহজনক চলাফেরা বা অন্য কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা?পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, "ডে শিফটের কর্মীর তথ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ঘটনার পটভূমি তৈরি হয়েছিল দিনের মধ্যেই।" তদন্তকারী দল কলেজের সিসিটিভি ফুটেজ, উপস্থিতির রেজিস্টার এবং অন্যান্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত নথি খতিয়ে দেখছে। ওই নিরাপত্তারক্ষীর বয়ানে উঠে আসতে পারে এমন কিছু তথ্য, যা মামলার গতিপথ সম্পূর্ণ ঘুরিয়ে দিতে পারে বলে মনে করছে লালবাজার।
সকাল থেকে রাত— ইউনিয়ন রুমের অন্দরের রহস্য ঘনীভূত
সকাল থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত ইউনিয়ন রুমের অন্দরে ঠিক কী ঘটেছিল, তা নিয়ে বাড়ছে রহস্য। সংশ্লিষ্ট ছাত্রী কীভাবে সেখানে সময় কাটাচ্ছিলেন, তাঁর উপস্থিতি ও গতিবিধি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছে পুলিশ। তদন্তকারীরা কলেজের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছেন। জানা গিয়েছে, কলেজের অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রী বা কর্মীদের কেউ তাঁকে সেখানে দেখেছে কিনা, সেটাও জানার চেষ্টা চলছে। ওই ছাত্রী কি ঘটনার কোনও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সাক্ষী? এই প্রশ্নের উত্তর এখন তদন্তের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক।
চারটার পর থেকে কলেজ চত্বরে কারা ছিলেন? ১৭ জনের তালিকায় বাড়ছে উত্তেজনা
ঘটনার দিন বিকেল চারটার পর কলেজে যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের নিয়ে ইতিমধ্যেই বিস্তারিত তালিকা তৈরি করেছে পুলিশ। মোট ১৭ জনের নাম রয়েছে এই তালিকায়। সূত্রের খবর, তাঁদের মধ্যে দুজনকে ইতিমধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বাকিদেরও আজ ডেকে পাঠানো হচ্ছে। প্রত্যেকের গতিবিধি, মোবাইল কল ডিটেলস এবং সিসিটিভি ফুটেজের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। কোনও সন্দেহজনক আচরণ বা অসঙ্গতি ধরা পড়লেই নেওয়া হতে পারে কড়া পদক্ষেপ।
প্রত্যক্ষদর্শী থেকে শুরু করে কলেজ কর্মী— সবাই পুলিশের জেরার আওতায়
তদন্তের গতিপ্রকৃতি দেখে স্পষ্ট, এবার আর কোনও ফাঁক রাখছে না পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শী হোক বা কলেজের সাধারণ কর্মী, ঘটনার দিন কলেজ চত্বরে যাঁরা ছিলেন, সবাইকেই একে একে ডেকে জেরা করা হচ্ছে। ফরেনসিক রিপোর্ট, মেডিক্যাল রিপোর্ট, সিসিটিভি ফুটেজ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান— সব কিছু মিলিয়েই সাজানো হচ্ছে ঘটনার পূর্ণ খতিয়ান। তদন্তের গতি দেখে অনুমান করা হচ্ছে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই এই মামলায় বড়সড় টার্ন আসতে চলেছে।