হাই কোর্টে টেন্টেড প্রার্থীদের আর্জি নতুন নিয়োগে অংশগ্রহণের দাবি

হাই কোর্টে টেন্টেড প্রার্থীদের আর্জি নতুন নিয়োগে অংশগ্রহণের দাবি

প্রকাশিত তালিকার পরেই আদালতের দ্বারস্থ

শনিবার রাতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) প্রকাশ করেছে ১,৮০৬ জনের ‘টেন্টেড’ তালিকা। রবিবার রাত পর্যন্ত এই তালিকা আপডেট হওয়ার পরই সোমবার একাংশ প্রার্থী কলকাতা হাই কোর্টে নয়া আবেদন জমা দিলেন। তাঁদের দাবি, নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে।

প্রায় ৩৫০ জনের আবেদন

এসএসসি–র প্রকাশিত তালিকায় নাম থাকা প্রায় ৩৫০ জন প্রার্থী আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, তাঁরা কোনও অনিয়মে যুক্ত নন, অথচ এসএসসি তাঁদেরও ‘টেন্টেড’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ফলে ভবিষ্যতের চাকরির পরীক্ষায় বসতে বাধা আসছে।

আইনজীবীর অভিযোগ

মামলাকারীদের পক্ষের আইনজীবীর দাবি, ডিভিশন বেঞ্চ অনেক প্রার্থীকে ‘দাগি’ হিসেবে চিহ্নিত করেনি। তবুও কমিশন তাঁদের নাম টেন্টেড তালিকায় ঢুকিয়ে দিয়েছে। এটি আদালতের নির্দেশ লঙ্ঘন বলেই অভিযোগ।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানা হয়নি?

আইনজীবীরা মনে করাচ্ছেন, সুপ্রিম কোর্ট আগেই বলেছিল দাগিদের আলাদা আলাদা ক্যাটেগরিতে ভাগ করতে হবে। যোগ্য–অযোগ্য এবং সন্দেহভাজন—এই তিনভাবে আলাদা করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এসএসসি সেই নির্দেশ মানেনি বলেই অভিযোগ তুলেছেন মামলাকারীরা।

বিচারপতির অনুমতি

এদিন মামলা দায়েরের অনুমতি দিয়েছেন বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য। আদালতের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী ২ সেপ্টেম্বর এই মামলার শুনানি হতে পারে। সেই শুনানিতে এসএসসি–র ভূমিকা নিয়ে আরও প্রশ্ন উঠতে পারে বলে অনুমান।

কমিশনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ

প্রার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। যাঁরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করছেন, তাঁদের অভিযোগ—একই তালিকায় প্রকৃত দোষী ও নির্দোষ প্রার্থীদের নাম ফেলা হয়েছে। এতে তাঁদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে এবং ভবিষ্যতের কর্মজীবন বিপন্ন হতে পারে।

১,৮০৬ জনের পুরো তালিকা

শনিবার রাত থেকে রবিবার পর্যন্ত প্রকাশিত তালিকায় মোট ১,৮০৬ জনের নাম রয়েছে। এই তালিকাই এখন মূল বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু। আদালতের রায় কার্যকর হলে এঁদের চাকরি বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের কঠোর হুঁশিয়ারি

গত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিল, সাত দিনের মধ্যে অযোগ্য প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। বিচারপতি সঞ্জয় কুমার ও সতীশচন্দ্র শর্মার বেঞ্চ কড়া সতর্কবার্তা দিয়ে জানায়—অন্যায়ভাবে অযোগ্যদের চাকরি দেওয়ার চেষ্টা হলে ফের সিবিআই তদন্তের নির্দেশ আসতে পারে।

নয়া নিয়োগে অংশগ্রহণের দাবি

হাই কোর্টে যাঁরা আবেদন করেছেন, তাঁদের বক্তব্য, যদি বর্তমান চাকরি নিয়ে সন্দেহ থাকে, তবে অন্তত নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বসার সুযোগ দিতে হবে। না হলে তাঁদের ভবিষ্যৎ একেবারে অন্ধকার হয়ে যাবে।

শিক্ষাক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা

এই পরিস্থিতিতে আবারও অনিশ্চয়তার ছায়া নেমেছে পশ্চিমবঙ্গের স্কুলশিক্ষক নিয়োগে। একদিকে পুরনো চাকরিপ্রার্থীরা আদালতের রায়ের অপেক্ষায়, অন্যদিকে নতুন করে সুযোগ পাওয়ার দাবিতে সরব হচ্ছেন ‘টেন্টেড’ প্রার্থীরা।

রাজনীতির মঞ্চে ফের তরজা

‘টেন্টেড’ তালিকা প্রকাশের পর থেকেই শাসক ও বিরোধীর তরজা শুরু হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, এই ঘটনা দুর্নীতির প্রমাণ। অন্যদিকে তৃণমূলের দাবি, কমিশন আদালতের নির্দেশ মেনে কাজ করছে, রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করছে বিজেপি।

ছাত্র–যুব সমাজের প্রশ্ন

চাকরিপ্রার্থীদের পরিবার ও সমাজে এখন একটাই প্রশ্ন—নিয়োগ প্রক্রিয়ার এই জট কখন কাটবে? টানা আন্দোলন, মামলা-মোকদ্দমার পরও সমাধান আসছে না। ফলে শিক্ষাক্ষেত্র ক্রমশ অচল হয়ে পড়ছে।

আদালতের উপর নির্ভরতা

বর্তমানে প্রার্থীদের ভরসা কেবল আদালত। হাই কোর্টের রায়ই নির্ধারণ করবে, টেন্টেড তালিকায় থাকা এই প্রার্থীরা ভবিষ্যতে আবারও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসতে পারবেন কি না।

ভবিষ্যত নির্ভর করছে রায়ের উপর

সব মিলিয়ে, টেন্টেড প্রার্থীদের আবেদন নতুন করে আলোচনার জন্ম দিল। তাঁদের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে, তা ঠিক করবে আদালতের রায়। ২ সেপ্টেম্বরের শুনানি এই বিতর্কের বড় মোড় ঘোরাতে পারে বলেই মনে করছেন শিক্ষামহল।

Leave a comment