আদালতে রুদ্ধদ্বার কক্ষে কণ্ঠস্বর সংগ্রহ
এসএসসি গ্রুপ সি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তদন্তে নতুন গতি আনল সিবিআই। আলিপুর আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে রুদ্ধদ্বার কক্ষে পাঁচ অভিযুক্তের কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করা হল। চূড়ান্ত চার্জশিট দাখিলের আগে এই পদক্ষেপকে মামলার মোড় ঘোরানো সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
অভিযুক্তদের তালিকায় প্রাক্তন এসএসসি কর্তা
কণ্ঠস্বরের নমুনা দেওয়া পাঁচ অভিযুক্তের তালিকায় সবার আগে উঠে এসেছে এসএসসি-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্যের নাম। তদন্তকারী সংস্থার দাবি, নিয়োগ দুর্নীতির গোটা চক্রের কেন্দ্রবিন্দুতেই ছিলেন তিনি। এ ছাড়া প্রাক্তন শীর্ষ কর্তাদের মধ্যে রয়েছেন সমরজিৎ আচার্য এবং পর্ণা বসু, যাঁদের বিরুদ্ধেও গুরুতর অভিযোগের পাহাড় জমেছে।
বেসরকারি সংস্থার দুই কর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ
শুধু প্রাক্তন এসএসসি কর্তারা নন, নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত বেসরকারি সংস্থা ‘নাইসা’-র দুই কর্তা নীলাদ্রি দাস ও পঙ্কজ বনসলেরও কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। অভিযোগ, এই সংস্থার মাধ্যমেই কোটি কোটি টাকা হাতবদল হয়েছে এবং চাকরির জন্য প্রার্থীদের কাছ থেকে অঙ্ক তুলতে বড় ভূমিকা নিয়েছিল এই কোম্পানি।
অডিও-ভিডিও ফুটেজ ঘিরে চাঞ্চল্য
সিবিআই সূত্রে খবর, তদন্তে তাদের হাতে এসেছে একটি অডিও ও ভিডিও ফুটেজ। তাতে দেখা যাচ্ছে, অভিযুক্তরা নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করছেন। ঠিক এই প্রমাণের সত্যতা যাচাই করতেই ফরেনসিক বিশ্লেষণের জন্য কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সিবিআই জানিয়েছে, প্রমাণ মজবুত করতেই এ পদক্ষেপ।
ফরেনসিকে পাঠানো হবে নমুনা
আদালতের উপস্থিতিতে সংগৃহীত এই পাঁচজনের কণ্ঠস্বরের নমুনা এখন পাঠানো হবে ফরেনসিক ল্যাবে। সেখানেই পরীক্ষা করে দেখা হবে অডিও-ভিডিও ফুটেজের শব্দের সঙ্গে এই নমুনা মেলে কি না। মিল পাওয়া গেলে মামলার প্রমাণ আরও শক্ত হবে এবং আদালতে অভিযুক্তদের দোষ প্রমাণে সিবিআই-র হাত মজবুত হবে।
চার্জশিট দাখিলের আগে বড় পদক্ষেপ
আইনজীবী মহলের মতে, এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এই পদক্ষেপ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, তদন্ত শেষ হওয়ার পর চূড়ান্ত চার্জশিট জমা দেওয়ার আগে প্রমাণ যাচাই করা জরুরি। কণ্ঠস্বরের মিল থাকলে আদালতে প্রমাণের শক্তি বহুগুণে বাড়বে, যা অভিযুক্তদের আইনি সুরক্ষা দুর্বল করবে।
অভিযুক্তদের অস্বস্তি বাড়ল
এই নমুনা সংগ্রহের পর থেকেই অভিযুক্তদের মধ্যে অস্বস্তি বাড়তে শুরু করেছে। তাঁদের আইনজীবীরা ইতিমধ্যেই বলছেন, তদন্তে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ হচ্ছে। তবে তদন্তকারীদের দাবি, আদালতের অনুমতি নিয়েই কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তাই এই প্রমাণ আদালতে টিকবে বলেই তাঁদের বিশ্বাস।
নিয়োগ দুর্নীতির কেলেঙ্কারি আবার আলোচনায়
এই মামলাকে ঘিরে বহুদিন ধরেই রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় চলছে। কয়েক হাজার চাকরিপ্রার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এই দুর্নীতির কারণে। এখন কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহের ঘটনায় মামলার গুরুত্ব আবারও সামনে এল। রাজনৈতিক মহলেও এই পদক্ষেপ নিয়ে নতুন করে চাপানউতোর শুরু হয়েছে।
রাজনীতির মঞ্চে নতুন তরঙ্গ
তৃণমূলের দাবি, এই মামলার আড়ালে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য লুকিয়ে আছে। অন্যদিকে বিরোধীদের বক্তব্য, কণ্ঠস্বরের প্রমাণ নিয়োগ দুর্নীতির বাস্তব চিত্র স্পষ্ট করে তুলবে। দুই পক্ষের এই রাজনৈতিক টানাপড়েনে সাধারণ চাকরিপ্রার্থীরা আবারও আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
সামনে কী হতে চলেছে?
তদন্তের পরবর্তী ধাপ হিসেবে ফরেনসিক রিপোর্ট আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। রিপোর্টে যদি প্রমাণ মেলে যে অভিযুক্তদের কণ্ঠস্বরই ফুটেজে শোনা যাচ্ছে, তবে এই মামলার রায় প্রক্রিয়া আরও দ্রুত হতে পারে। সিবিআই শিগগিরই আদালতে চার্জশিট দাখিল করবে বলে মনে করা হচ্ছে।