বিহারের রাজনীতিতে স্ট্যালিন: মহাজোটের জন্য সুযোগ নাকি বিজেপির হাতিয়ার?

বিহারের রাজনীতিতে স্ট্যালিন: মহাজোটের জন্য সুযোগ নাকি বিজেপির হাতিয়ার?

বিহারের ভোটার অধিকার যাত্রায় এমকে স্ট্যালিনের প্রবেশে রাজনীতি সরগরম। সনাতন ও হিন্দি বিরোধী ভাবমূর্তির মাঝে প্রশ্ন - মহাজোটের কি লাভ হবে নাকি বিজেপির জন্য নতুন ইস্যু তৈরি হবে?

Bihar Election: বিহার নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতিতে চাঞ্চল্য বাড়ছে। ভোটার তালিকা নিয়ে গরমিল ও ভোট চুরির অভিযোগ তুলে বিরোধীরা সরকারের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে। রাহুল গান্ধী ও তেজस्वी যাদবের নেতৃত্বে শুরু হওয়া ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ এখন রাজ্য জুড়ে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই যাত্রায় প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও যোগ দিয়েছেন এবং তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিনও ২৭শে আগস্ট দ্বারভাঙ্গাতে এতে অংশ নেবেন। প্রশ্ন হল, স্ট্যালিনের উপস্থিতি মহাজোটের জন্য লাভজনক হবে নাকি ক্ষতির কারণ হবে?

স্ট্যালিনের বিহার সফর... কী সমীকরণ বদলাবে?

তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন দক্ষিণ ভারতে সামাজিক ন্যায়বিচার ও সমতার রাজনীতির বড় মুখ হিসাবে পরিচিত। তাঁর দল ডিএমকে সবসময় জাতি ও ভাষা ভিত্তিক সমস্যাগুলি তুলে ধরেছে। কিন্তু বিহারের রাজনীতির মেজাজ আলাদা। এখানে ধর্মীয় বিশ্বাস ও জাতিগত সমীকরণ সবচেয়ে বড় শক্তি হিসাবে বিবেচিত হয়। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে স্ট্যালিনের দক্ষিণী স্টাইল বিহারের ভোটারদের আকর্ষণ করতে পারবে কিনা।

সনাতন ধর্ম নিয়ে মন্তব্যে বাড়ল সমস্যা

স্ট্যালিনের ছেলে উদয়নিধি স্ট্যালিন ২০২৩ সালে সনাতন ধর্ম নিয়ে একটি বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে "সনাতন ধর্মকে শেষ করে দেওয়া উচিত, কারণ এটি সাম্য ও সামাজিক ন্যায়ের বিরোধী।" এই মন্তব্যের পরে বিজেপি বিরোধীদের সনাতন বিরোধী আখ্যা দিয়ে নির্বাচনে এই ইস্যুকে ভালোভাবে কাজে লাগিয়েছিল। এখন যখন স্ট্যালিন বিহারে মহাজোটের মঞ্চে দাঁড়াবেন তখন বিজেপি আবার এই মন্তব্যকে হাতিয়ার করতে পারে।

হিন্দি বিরোধী ইমেজ ও বিহারের রাজনীতি

স্ট্যালিন ও তাঁর দল ডিএমকে এর আগেও হিন্দি বিরোধিতা নিয়ে শিরোনামে এসেছে। নতুন শিক্ষা নীতির সময় ত্রিভাষা সূত্রের বিরোধিতা এবং তামিলনাড়ুতে হিন্দি বোর্ডের ওপর কালি লাগানোর মতো ঘটনা তাঁদের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। বিহারের মতো রাজ্যে, যেখানে হিন্দি সবচেয়ে বেশি বলা হয়, এই ইমেজ মহাজোটের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। যদিও স্ট্যালিন পরে বলেছিলেন যে যদি হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা না হয় তাহলে বিরোধিতাও হবে না।

বিহারের আবেগপূর্ণ সমীকরণ ও স্ট্যালিনের রণনীতি

বিহারের রাজনীতি আবেগের উপর ভিত্তি করে চলে। এখানে জাতিগত সমীকরণ ও ধর্মীয় বিশ্বাসের বড় প্রভাব রয়েছে। প্রবীণ সাংবাদিকদের মতে তামিলনাড়ুর পেরিয়ার ব্র্যান্ডের রাজনীতি বিহারের ভোটারদের উপর তেমন প্রভাব ফেলবে না যেমন দক্ষিণ ভারতে হয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে স্ট্যালিনের উপস্থিতি বিরোধী ঐক্যকে দেখালেও ভোটারদের উপর এর প্রভাব সীমিত হতে পারে।

ইন্ডিয়া জোটের ঐক্য নাকি ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ

ইন্ডিয়া জোটের চেষ্টা হল সারা দেশে বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে শক্তিশালী বিকল্প পেশ করবে। ভোটার অধিকার যাত্রা সেই রণনীতির অংশ। রাহুল গান্ধী, তেজस्वी যাদব ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর সঙ্গে স্ট্যালিনের উপস্থিতি এই ঐক্যকে শক্তিশালী বার্তা দেবে। কিন্তু এই চাল উল্টোও হতে পারে যদি বিজেপি সনাতন ও হিন্দি বিরোধী ইমেজকে ইস্যু করে জনগণের মধ্যে নিয়ে যায়।

Leave a comment