ভারতে স্টারলিঙ্ক: গ্রামীণ এলাকায় স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা, দাম ও স্পিড

ভারতে স্টারলিঙ্ক: গ্রামীণ এলাকায় স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা, দাম ও স্পিড

স্টারলিঙ্ক শীঘ্রই ভারতে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা শুরু করবে, যার দাম ₹৩,০০০–₹৪,২০০ হবে এবং স্পিড ২৫–২২০ Mbps থাকবে। এই পরিষেবা বিশেষভাবে গ্রামীণ এলাকার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করবে।

স্টারলিঙ্ক: স্পেসএক্স-এর স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সার্ভিস স্টারলিঙ্ক এখন ভারতে প্রবেশ করার জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত। এই পরিষেবা বিশেষ করে সেই অঞ্চলগুলোতে বিপ্লব আনতে পারে, যেখানে আজও ইন্টারনেটের পৌঁছ সীমিত অথবা তার গুণমান খুবই খারাপ। পিটিআই-এর নতুন রিপোর্ট এবং টেলিকম মন্ত্রকের সাম্প্রতিক বিবৃতিগুলো স্টারলিঙ্কের ভারত লঞ্চের সঙ্গে জড়িত অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করেছে।

দাম কত হবে?

স্টারলিঙ্কের মাসিক সাবস্ক্রিপশন খরচ ₹৩,০০০ থেকে ₹৪,২০০-এর মধ্যে হবে। এই পরিমাণ ব্যবহারকারীর লোকেশন ও ডেটা ব্যবহারের উপর নির্ভর করে আলাদা হতে পারে। এছাড়া, পরিষেবা শুরু করার জন্য ইউজারদের একটি হার্ডওয়্যার কিট (যাতে ডিশ ও রাউটার অন্তর্ভুক্ত থাকবে) কিনতে হবে, যার আনুমানিক দাম ₹৩৩,০০০ হতে পারে। কোম্পানি শুরুতে প্রি-বুকিংয়ের বিকল্পও উপলব্ধ করতে পারে, যেখানে ইচ্ছুক গ্রাহকরা অগ্রিম পেমেন্ট করে কানেকশন বুক করতে পারবেন।

স্পিড কতটা পাওয়া যাবে?

স্টারলিঙ্ক ভারতে ব্যবহারকারীদের ২৫ Mbps থেকে ২২০ Mbps পর্যন্ত ইন্টারনেট স্পিড প্রদান করবে। এই স্পিড গ্রামীণ ভারতের জন্য একটি আশীর্বাদ প্রমাণ হতে পারে, যেখানে এখনও লোকেরা ৫ থেকে ১০ Mbps-এর সীমিত স্পিডের উপর নির্ভর করে থাকে। এছাড়া, ভবিষ্যতে কোম্পানি নেক্সট-জেনারেশন স্যাটেলাইট লঞ্চ করতে যাচ্ছে, যেগুলোতে প্রতিটি স্যাটেলাইটে ১,০০০ Gbps-এর বেশি ক্যাপাসিটি থাকবে। এই স্যাটেলাইটগুলো ২০২৬ সাল থেকে লঞ্চ হতে পারে এবং বর্তমান স্পিডকে ১০ গুণ পর্যন্ত বাড়াতে সক্ষম হবে।

২০ লক্ষ ইউজার্স পর্যন্ত সীমিত থাকবে কানেকশন

ভারতে স্টারলিঙ্কের পরিষেবা শুরুতে সর্বাধিক ২০ লক্ষ ইউজার্স পর্যন্ত সীমিত থাকবে। এর প্রধান কারণ হল নেটওয়ার্ক ক্যাপাসিটি এবং স্পেস এক্স-এর স্ট্র্যাটেজিক রোলআউট প্ল্যান। কোম্পানির ফোকাস শহুরে নয়, বরং গ্রামীণ ও দূরবর্তী অঞ্চলের উপর হবে যেখানে ঐতিহ্যবাহী ব্রডব্যান্ড পরিষেবা উপলব্ধ নেই।

কবে নাগাদ লঞ্চ হতে পারে?

স্টারলিঙ্ক বর্তমানে ভারতে লঞ্চের কোনও অফিসিয়াল তারিখ ঘোষণা করেনি, কিন্তু রিপোর্ট অনুযায়ী পরিষেবা ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ শুরু করা যেতে পারে। শীঘ্রই প্রি-বুকিং উইন্ডো খোলা হতে পারে, যেখানে ইচ্ছুক ইউজার্সকে অগ্রিম পেমেন্ট করে নিজের জন্য কানেকশন রিজার্ভ করতে হবে। স্টারলিঙ্কের ওয়েবসাইট ও অথরাইজড রিটেল চ্যানেল থেকে প্রি-বুকিংয়ের প্রক্রিয়া সম্ভব হবে।

এয়ারটেল ও জিও-এর সঙ্গে পার্টনারশিপ

আকর্ষণীয় বিষয় হল, স্টারলিঙ্ক জিও, এয়ারটেল ও বিএসএনএল-এর মতো বিদ্যমান টেলিকম অপারেটরদের সঙ্গে সরাসরি প্রতিযোগিতা করবে না। এর পরিবর্তে, এই কোম্পানিগুলো স্টারলিঙ্কের সঙ্গে ইনফ্রাস্ট্রাকচার-শেয়ারিং এগ্রিমেন্টে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যাতে হার্ডওয়্যারের ডেলিভারি ও সার্ভিস ইনস্টলেশনকে সহজ করা যায়। স্টারলিঙ্কের উদ্দেশ্য শহুরে অঞ্চলে বিদ্যমান শক্তিশালী নেটওয়ার্ককে চ্যালেঞ্জ করা নয়, বরং যেখানে ইন্টারনেট পৌঁছাতে পারেনি, সেই এলাকাগুলোতে পরিষেবা দেওয়া।

নেক্সট-জেনারেশন স্যাটেলাইট থেকে স্পিড বাড়বে ১০ গুণ

স্টারলিঙ্ক কেবল লঞ্চের প্রস্তুতিতেই নয়, বরং আগামী বছরগুলোতে টেকনোলজি আপগ্রেডের উপরও ফোকাস করছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৬ সাল থেকে কোম্পানি তাদের নেক্সট-জেনারেশন এলইও স্যাটেলাইট লঞ্চ করতে যাচ্ছে, যেগুলোর প্রতিটি ইউনিটে ১,০০০ Gbps-এর বেশি ক্যাপাসিটি থাকবে। এর মানে হল ভবিষ্যতে স্টারলিঙ্কের ইন্টারনেট স্পিড বর্তমান স্তর থেকে ১০ গুণ বেশি হতে পারে, যার ফলে হাই-স্পিড ইন্টারনেট এখন কেবল শহর পর্যন্ত সীমিত থাকবে না।

চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা

যেখানে স্টারলিঙ্ক গ্রামীণ ভারতের জন্য একটি গেম-চেঞ্জার প্রমাণ হতে পারে, সেখানে কিছু চ্যালেঞ্জও সামনে আসতে পারে:

  • বিদ্যুতের অভাব: ডিশ ও রাউটার চালানোর জন্য বিদ্যুৎ জরুরি, যা অনেক গ্রামীণ এলাকায় নিয়মিতভাবে উপলব্ধ নয়।
  • দামের বাধা: ₹৩৩,০০০-এর প্রাথমিক খরচ এবং ₹৩,০০০+ এর মাসিক ফি প্রতিটি পরিবারের বাজেটে ফিট নাও হতে পারে।

তবে যদি সরকার এতে ভর্তুকি বা গ্রামীণ পরিকল্পনা লাগু করে, তবে এই পরিষেবা লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য ডিজিটাল জীবনের নতুন সূচনা হতে পারে।

Leave a comment