নবরাত্রি ও কালীপুজোয় বলি প্রথা: আধ্যাত্মিক গুরুর মতামত

নবরাত্রি ও কালীপুজোয় বলি প্রথা: আধ্যাত্মিক গুরুর মতামত

দেশের বিভিন্ন অংশে নবরাত্রি, কালী পূজা এবং দশেরা'র মতো উৎসবে দেবীকে বলি দেওয়ার প্রথা আজও প্রচলিত। কিছু মানুষ একে শ্রদ্ধার প্রতীক মনে করেন, আবার কিছু মানুষ একে হিংসা বলে বিরোধিতা করেন। বিশেষ করে যখন দেবী পূজার কথা আসে, তখন বলি প্রথা নিয়ে সমাজ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। এই বিষয়ে আধ্যাত্মিক গুরু স্বামী কৈলাশানন্দ গিরি তাঁর স্পষ্ট মতামত দিয়েছেন এবং ধর্মগ্রন্থ ও শাস্ত্রের আলোকে কথা বলেছেন।

স্বামী কৈলাশানন্দ গিরি: বলির অর্থ কেবল পশু বলি নয়

স্বামী কৈলাশানন্দ গিরি এক ধর্মীয় আলোচনায় জানান যে, বলি দেওয়ার প্রথা প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। তিনি দুর্গা সপ্তশতীর উল্লেখ করে বলেন, “বলি প্রধান পূজায়া মগ্ন কার্য মহোৎসব” অর্থাৎ যখন দেবীর মহোৎসব পালিত হয়, তখন বলি দেওয়া আবশ্যক বলে মনে করা হয়। কিন্তু তিনি এটাও যোগ করেন যে, বলির মানে শুধু পশু বলি নয়।

স্বামীজির মতে, বলি বিভিন্ন রকমের হতে পারে, যেমন - নারকেল, কুমড়ো, বিউলির ডাল, কলা, দই ইত্যাদিও বলি হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি জানান যে, অনেক ভক্ত আজও ছাগলের পরিবর্তে এই জিনিসগুলি দেবীকে অর্পণ করেন এবং এটি ধর্মীয়ভাবেও গ্রহণযোগ্য।

দেবীর রক্তপানের ধারণা এবং তার অর্থ

স্বামী কৈলাশানন্দ গিরি আরও বলেন যে, কিছু দেবী রূপ যেমন মা কালী, মা তারা, মা ছিন্নমস্তা, মা কামাখ্যা, মা ধূমাবতী ইত্যাদি সম্পর্কে বলা হয় যে, তারা রক্ত পান করেন। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, তাঁরা পশু বলির দাবি করেন। তিনি বলেন যে, দেবী স্বয়ং দুষ্টদের সংহার করে রক্ত পান করেন, যাতে संसारের रक्षा होते परे।

শাক্ত ঐতিহ্যে বলির স্থান

হিন্দু ধর্মের শাক্ত ঐতিহ্যে দেবীকে শক্তির পরম উৎস হিসেবে মনে করা হয়। এই ঐতিহ্যে বিশেষ করে মা দুর্গা, মা কালী এবং মা তারার পূজা করা হয়। কালিকাপুরাণ ও দেবী ভাগবত পুরাণের মতো শাস্ত্রে দেবীকে প্রসন্ন করার জন্য বলি অর্পণের কথা উল্লেখ আছে।

এই প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, অসম এবং নেপালের মতো অঞ্চলের উদাহরণ দেওয়া হয়, যেখানে আজও নবরাত্রি, কালী পূজা এবং অন্যান্য বিশেষ উৎসবে ছাগল, মুরগি বা মোষের বলি দেওয়া হয়।

বেদে হিংসার निषेध

অন্যদিকে, বেদে বলি প্রথা নিয়ে अलग दृष्टिकोण পাওয়া যায়। সামবেদের একটি ऋचा-য় বলা হয়েছে:
"ন কি देवा ইনীমसि ন क्या योपयामसि। মন্ত্রश्रुत्यं चरामसि।"
এর অর্থ হল: “হে দেবগণ, আমরা হিংসা করি না এবং এমন কোনো অনুষ্ঠানও করি না। আমরা মন্ত্রের আদেশ অনুসারে আচরণ করি।”

এই মন্ত্র নিয়ে বিদ্বানদের ধারণা যে, বৈদিক ঐতিহ্যে হিংসা বা পশু বলিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।

ধর্মীয় ঐতিহ্য বনাম আধুনিক চিন্তা

বলি প্রথা নিয়ে আজও সমাজে দুটি পক্ষ বিদ্যমান। একদিকে ঐতিহ্য ও आस्था-র নামে একে প্রয়োজনীয় মনে করা হয়, তো অন্যদিকে একে অমানবিক মনে করে ত্যাগ করার দাবি ওঠে।

স্বামী কৈলাশানন্দ গিরির মতো সাধুদের কথায় এটা স্পষ্ট হয় যে, বলির সঠিক অর্থ কেবল পশু বলি নয়। তিনি এও জানান যে, বলি কেবল प्रतीकात्मक হতে পারে, যা সাধকের ভক্তি ও समर्पण-কে दर्शाता है।

কোথায় কোথায় আজও বলি হয়?

দেশজুড়ে কিছু प्रमुख মন্দিরে বলি আজও দেওয়া হয়:

  • কামাখ্যা মন্দির (অসম): এখানে अंबुवाची मेले में বলি प्रथा विशेष रूप से দেখা যায়
  • কালীঘাট (কলকাতা): এখানেও কিছু অনুষ্ঠানে पारंपरिक বলি দেওয়া হয়
  • ছিন্নমস্তিকা মন্দির (ঝাড়খণ্ড): এখানে মাকে বলি দেওয়ার প্রথা আজও প্রচলিত আছে
  • नेपाल-এর গढीमाई मंदिर: এখানে বলি মহোৎসবে हजारों पशुओं की बलि दी जाती है

आस्था-র কথা এবং নতুন প্রজন্মের দৃষ্টিকোণ

আজকের নতুন প্রজন্ম যেখানে अधिक जागरूक, সেখানে ধর্মের প্রতি श्रद्धा-ও कायम আছে। অনেক যুবক ধর্মীয় রীতি-নীতি বোঝার চেষ্টা করছেন এবং ঐতিহ্যকে मानवता-র দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে শুরু করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে স্বামী কৈলাশানন্দ গিরির মতো সাধুদের কথা ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

Leave a comment