নির্বাচনী পরিচয়পত্র হিসেবে আধার কার্ড ব্যবহারে সুপ্রিম কোর্টের ছাড়পত্র, জালিয়াতির সম্ভাবনা নিয়ে সব নথি সমানভাবে আলোচিত

নির্বাচনী পরিচয়পত্র হিসেবে আধার কার্ড ব্যবহারে সুপ্রিম কোর্টের ছাড়পত্র, জালিয়াতির সম্ভাবনা নিয়ে সব নথি সমানভাবে আলোচিত

সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচনী পরিচয়পত্র হিসেবে আধার কার্ড ব্যবহারের আপত্তি খারিজ করেছে। আদালত বলেছে যে জালিয়াতি শুধু আধারে নয়, ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং রেশন কার্ডের মতো অন্যান্য নথিতেও সম্ভব।

বিহার এসআইআর (SIR): বিহারে বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন এবং এরই মধ্যে বিশেষ নিবিড় সংশোধন (Special Intensive Revision – SIR) নিয়ে একটি বড় বিতর্ক শুরু হয়েছে। এই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে আধার কার্ড। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়ে নাগরিকত্ব প্রমাণের নথিপত্রের তালিকায় আধার কার্ড অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু এই আদেশের বিরুদ্ধে একটি পিটিশন দাখিল করা হয়, যেখানে বলা হয় যে লোকেরা নকল আধার কার্ড তৈরি করে অপব্যবহার করতে পারে।

সুপ্রিম কোর্ট এই পিটিশনটি খারিজ করে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে কেবল আধার নয়, ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং রেশন কার্ডের মতো অন্যান্য নথিপত্রও জাল তৈরি করা যেতে পারে। তাই কেবল আধারকেই সন্দেহের চোখে দেখা সঠিক নয়।

কেন পিটিশন দাখিল করা হয়েছিল

প্রকৃতপক্ষে, নির্বাচন কমিশন SIR প্রক্রিয়ার অধীনে ১১টি নথির একটি তালিকা জারি করেছিল যা নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য বৈধ বলে বিবেচিত হত। এর মধ্যে আধার কার্ড অন্তর্ভুক্ত ছিল না। পরে সুপ্রিম কোর্ট তার আদেশে আধার কার্ডকে ১২তম নথি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলে। এর বিরুদ্ধে আবেদনকারীরা আদালতে আপিল করে এবং বলে যে জাল আধার কার্ড তৈরি করা সহজ। তাই এটিকে নাগরিকত্ব প্রমাণের উপায় হিসেবে গণ্য করা উচিত নয়।

সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্য

সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চে বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি ছিলেন। শুনানির সময় আদালত স্পষ্ট করে যে প্রতিটি নথির ক্ষেত্রেই জালিয়াতির সম্ভাবনা থাকে।

আদালত বলেছে, "ড্রাইভিং লাইসেন্স জাল হতে পারে, রেশন কার্ডও জাল হতে পারে। অন্যান্য নথিও নকল তৈরি করা যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে কেবল আধারকেই সন্দেহের চোখে দেখা যায় না।" এছাড়াও আদালত পুনর্ব্যক্ত করেছে যে আধার ব্যবহার আইন দ্বারা নির্ধারিত সীমা পর্যন্তই করা উচিত।

নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা

নির্বাচন কমিশন বিহার নির্বাচনের আগে নাগরিকত্ব এবং পরিচয় প্রমাণের জন্য নথিপত্রের একটি তালিকা জারি করেছিল। এই তালিকায় ড্রাইভিং লাইসেন্স, রেশন কার্ড, পাসপোর্ট, ব্যাংক পাসবুকের মতো নথি অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু আধার কার্ডের নাম ছিল না। ৮ সেপ্টেম্বর শুনানির সময় সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল যে আধারকেও স্বীকৃতি দেওয়া উচিত।

আধার নিয়ে কেন বিতর্ক

ভারতে আধার কার্ড একটি অনন্য পরিচয়পত্র হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে। এতে বায়োমেট্রিক এবং ডেমোগ্রাফিক তথ্য থাকে। কিন্তু সময়ে সময়ে আধার কার্ডের নিরাপত্তা এবং এর অপব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বেশ কয়েকবার নকল আধার কার্ড তৈরির খবরও সামনে এসেছে।

আবেদনকারীদের যুক্তি ছিল যে যদি আধারকে নাগরিকত্ব প্রমাণের বৈধ উপায় হিসেবে গণ্য করা হয়, তাহলে বিপুল সংখ্যক লোক জাল আধার কার্ড তৈরি করে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

আদালতের ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান

সুপ্রিম কোর্ট এই পুরো বিষয়ে একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান নিয়েছে। আদালত এই সিদ্ধান্তে আসতে রাজি হয়নি যে কেবল আধারই অপব্যবহারের একটি মাধ্যম হতে পারে। আদালত বলেছে যে প্রতিটি নথির নিজস্ব দুর্বলতা থাকে। যেকোনো নথিতে জালিয়াতি সম্ভব। তাই কেবল আধারকে আলাদা করে দেখা উচিত নয়।

Leave a comment