বিশ্ব বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণ জিতে ভারতের মুখ উজ্জ্বল করলেন হরিয়ানার মীনাক্ষী হুডা

বিশ্ব বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণ জিতে ভারতের মুখ উজ্জ্বল করলেন হরিয়ানার মীনাক্ষী হুডা

হরিয়ানার মীনাক্ষী হুডা ইংল্যান্ডে বিশ্ব বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণপদক জিতে ভারতের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। অটো চালক বাবা এবং পরিবারের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সমর্থন তাঁর এই সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

বিশ্ব বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৫: হরিয়ানার ভিওয়ানি জেলার ছোট্ট গ্রাম রুড়কি-র মীনাক্ষী হুডা ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণপদক জিতে দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন। ফাইনালে তিনি কাজাখ মুষ্টিযোদ্ধা নাজিম কাইজেবেকে ৪:১ পয়েন্টের বিভক্ত সিদ্ধান্তে পরাজিত করেন। এই জয়ের সাথে সাথেই ভারত টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় স্বর্ণপদক অর্জন করে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মীনাক্ষীকে এই অর্জনের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং তাঁর সাহসিকতার প্রশংসা করেছেন।

দারিদ্র্য ও ভয়ের মধ্যে মীনাক্ষীর প্রতিভার স্ফুরণ

মীনাক্ষীর বাবা কৃষ্ণ একজন অটো চালক। ছোটবেলায় আর্থিক অনটন এবং সমাজের ভয়ের কারণে তিনি মেয়েকে বক্সিং থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেছিলেন। সমাজের লোকেরা বলত যে যদি মেয়ে বক্সিং করে তবে তার মুখ খারাপ হবে এবং বিয়ে কঠিন হয়ে পড়বে। তা সত্ত্বেও, মীনাক্ষীর মা সুনিতা বাবার কাছ থেকে লুকিয়ে মেয়েকে খেলার প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন।

মীনাক্ষীর কঠোর পরিশ্রম এবং পরিবারের সমর্থন প্রমাণ করে যে সামাজিক বাধা এবং আর্থিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, যদি সংকল্প এবং পরিশ্রম থাকে তবে কিছুই অসম্ভব নয়। বাবা আজ তাঁর মেয়ের এই সাফল্যে গর্বিত এবং বলেন যে ছেলে বা মেয়ের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই, শুধু সঠিক দিকনির্দেশনা এবং সমর্থনের প্রয়োজন।

মীনাক্ষী জিতেছেন স্বর্ণপদক

৫৭ কেজি বিভাগে মীনাক্ষী কাজাখ মুষ্টিযোদ্ধা নাজিম কাইজেবেকে ৪:১ পয়েন্টে পরাজিত করে স্বর্ণপদক জিতেছেন। এই জয় কেবল বিশ্ব মঞ্চে ভারতের নাম উজ্জ্বল করেনি, বরং ভারতীয় মহিলা বক্সিংকেও একটি নতুন পরিচয় দিয়েছে। টুর্নামেন্টে ভারতের হয়ে অন্যান্য খেলোয়াড়রাও এর আগে পদক জিতেছিলেন, যার মধ্যে জ্যাসমিন পোল্যান্ডের অলিম্পিক পদকজয়ী জুলিয়াকে পরাজিত করে স্বর্ণপদক অর্জন করেন এবং নূপুর ৮০+ কেজি বিভাগে রৌপ্য পদক জেতেন।

মীনাক্ষীর জয় প্রমাণ করেছে যে ভারতীয় যুবকরা, বিশেষ করে মহিলারা, আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাদের প্রতিভা এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে কতটা সাফল্য অর্জন করতে পারে। ফাইনালে তাঁর আত্মবিশ্বাস এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা ছিল প্রশংসনীয়।

পরিবারের সমর্থনে মীনাক্ষীর সাফল্য

মীনাক্ষীর বাবা কৃষ্ণ জানিয়েছেন যে তিনি তাঁর মেয়ের খেলাধুলা নিয়ে সমাজের কাছ থেকে অনেক অপবাদ সহ্য করেছেন। অনেকে বলত যে মেয়ের খেলাধুলা তার ভবিষ্যত এবং বিয়েতে প্রভাব ফেলবে। তা সত্ত্বেও, তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন মীনাক্ষীর জন্য - দুধ, ফল এবং সঠিক পুষ্টি সরবরাহ করেছেন। তাঁর বিশ্বাস, মেয়ের জয় তাঁকে একটি অটো এনে দিয়েছে এবং এটি পরিবারের জন্য গর্বের মুহূর্ত।

মীনাক্ষীর মা সুনিতাও আবেগপ্রবণ। তিনি বলেছেন যে তিনি কখনও ভাবেননি যে তাঁর মেয়ে এত বড় সম্মান অর্জন করবে। সমাজের ভয় এবং সমালোচনা সত্ত্বেও, মা সবসময় মেয়ের মনোবল বাড়িয়েছেন এবং তার পাশে দাঁড়িয়েছেন।

Leave a comment