সুপ্রিম কোর্ট নিমিষা প্রিয়া মামলায় গ্যাগ অর্ডার (মুখ বন্ধের নির্দেশ) এর আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। ভারত সরকারই শুধুমাত্র এই বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দেবে। এই মামলাটি ইয়েমেনের মৃত্যুদণ্ড এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টার সাথে সম্পর্কিত।
নয়াদিল্লি: ইয়েমেনে মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হওয়া কেরালার নার্স নিমিষা প্রিয়ার সাথে জড়িত মামলায় গ্যাগ অর্ডার জারির আবেদন সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করে দিয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল আর. ভেঙ্কটারমানি আশ্বাস দেওয়ার পরে আদালত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, এই মামলায় শুধুমাত্র ভারত সরকারই মিডিয়া বা অন্য কোনও সংস্থার মাধ্যমে বিবৃতি দিতে পারবে। অন্য কোনও ব্যক্তি বা সংগঠনকে এই মামলায় বিবৃতি দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে না।
আবেদনের উদ্দেশ্য ও দাবি
আবেদনকারী কে.এ. পল সুপ্রিম কোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করেছিলেন। এতে অনুরোধ করা হয়েছিল, নিমিষা প্রিয়ার সাথে জড়িত মামলায় যাচাই না করা কোনো প্রকার সর্বজনীন বিবৃতি এবং মিডিয়া রিপোর্টিং বন্ধ করার জন্য একটি গ্যাগ অর্ডার জারি করা হোক।
আবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, যদি কোনও ব্যক্তি সরকার কর্তৃক অনুমোদিত কোনো সংস্থা ছাড়া এই মামলায় কোনো বিবৃতি দেয়, তবে তাকে থামানোর জন্য যেন নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সাথে ইয়েমেনের সাথে অবিলম্বে কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছিল, যাতে প্রিয়াকে মৃত্যুদণ্ডের হাত থেকে বাঁচানো যায় এবং তার সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড করা যায়।
অ্যাটর্নি জেনারেলের আশ্বাস
সুপ্রিম কোর্টে শুনানির সময় অ্যাটর্নি জেনারেল আশ্বাস দিয়েছেন যে, সরকার এই মামলায় শুধুমাত্র তারাই বিবৃতি দেবে এবং অন্য কোনও ব্যক্তিকে মিডিয়াতে বিবৃতি দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে না।
আদালত আবেদনকারীকে জিজ্ঞাসা করে, "আপনি কী চান? আপনি কি চান যে কেউ যেন মিডিয়াতে কিছু না বলে?" অ্যাটর্নি জেনারেল নিশ্চিত করেছেন যে, এই স্পর্শকাতর মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে প্রেস ব্রিফিং শুধুমাত্র সরকারের মাধ্যমেই হবে। এই আশ্বাসের ভিত্তিতে আদালত আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছে।
মামলার সংবেদনশীলতা
নিমিষা প্রিয়ার মামলাটি ভারত এবং ইয়েমেন উভয় দেশেই অত্যন্ত সংবেদনশীল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রিয়া ২০১৭ সালে ইয়েমেনের তার ব্যবসায়িক অংশীদারকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। ২০২০ সালে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় এবং ২০২৩ সালে তার শেষ আপিল খারিজ হয়ে যায়। বর্তমানে প্রিয়া ইয়েমেনের রাজধানী সানার কারাগারে বন্দী রয়েছেন। এই মামলার সংবেদনশীলতার কারণে সুপ্রিম কোর্ট এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, মিডিয়াতে কোনও প্রকার উস্কানিমূলক বা অসত্য তথ্য ছড়ানো উচিত নয়।
নিমিষা প্রিয়া ফাউন্ডেশন ও মিডিয়া বিতর্ক
আবেদনকারীর মতে, নিমিষা প্রিয়া ফাউন্ডেশন মিডিয়াতে মিথ্যা বিবৃতি দিয়েছে এবং একটি ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিবরণ শেয়ার করেছে। এর কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
ফাউন্ডেশন দাবি করেছিল যে, লোকেরা যেন ওই অ্যাকাউন্টে দান করে। কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন যে, এই অ্যাকাউন্টটি ভারত সরকারের অনুমতি ছাড়া খোলা হয়েছে। এই ধরনের ভুল তথ্য ছড়ানোর ফলে মামলার কূটনৈতিক আলোচনা এবং রক্ষার প্রচেষ্টা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
সরকারের ভূমিকা
অ্যাটর্নি জেনারেল সুপ্রিম কোর্টকে আশ্বাস দিয়েছেন যে, ভারত সরকার প্রিয়ার নিরাপদ মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য সম্ভাব্য সকল প্রকার চেষ্টা করছে। যেকোনো প্রেস ব্রিফিং বা বিবৃতি শুধুমাত্র সরকার নিয়ন্ত্রণ করবে।
কে.এ. পল বলেছেন যে, তিনি মৃতের পরিবার এবং উভয় সরকারের সাথে যোগাযোগ রাখছেন। মিডিয়াতে বিবৃতি দেওয়ার অধিকার শুধুমাত্র অনুমোদিত ব্যক্তির কাছেই থাকবে।
সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত
বিচারপতি বিক্রম নাথ এবং বিচারপতি সন্দীপ মেহতার বেঞ্চ আবেদন খারিজ করে দিয়ে বলেছে যে, মামলায় অন্য কেউ যেন কোনো বিবৃতি না দেয়, সেই দায়িত্ব ভারত সরকার নেবে। আদালত স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, আবেদনে যে গ্যাগ অর্ডার চাওয়া হয়েছিল, তা প্রয়োজনীয় নয়, কারণ অ্যাটর্নি জেনারেল যথেষ্ট আশ্বাস দিয়েছেন।