জামশেদপুর: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতে স্টিল আমদানি বাড়ার কারণে টাটা স্টিল (TISCO) কঠিন সময়ের মুখোমুখি হয়। সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা দোরাবজি টাটার নেতৃত্বে কার্যত সর্বস্ব পণ করা হয়। কিন্তু সেই সময় সংস্থাকে বাঁচাতে কার্যকর ভূমিকা নিয়েছিলেন দুই অপ্রত্যাশিত বন্ধু—জওহরলাল নেহেরু এবং মহম্মদ আলি জিন্নাহ। তারা বৃটিশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে ভারতে আমদানি শুল্ক আরোপ করাতে সহায়তা করেছিলেন। ফলে ব্রিটেন থেকে আসা সস্তা স্টিলের চাপে টাটার ইস্পাত পুনরায় শক্ত অবস্থানে আসে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সঙ্কট ও সমাধান
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতে ইংল্যান্ড থেকে সস্তা স্টিল প্রবেশ শুরু হয়। দেশের বাজারে কম খরচে ব্রিটিশ স্টিল আসায় টাটা স্টিলের উৎপাদন ও বিক্রি মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়। তৎকালীন প্রধান স্যর দোরাবজি টাটা সমস্ত উদ্যোগ নিয়ে সংস্থার ভিত রক্ষা করার চেষ্টা করেন।এই পরিস্থিতিতে জওহরলাল নেহেরু ও মহম্মদ আলি জিন্নাহ রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে আমদানি শুল্ক বসানোর উদ্যোগ নেন। এতে ব্রিটিশ স্টিলের বাজার নিয়ন্ত্রণ হয় এবং টাটার ইস্পাত পুনরায় প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে আসে।
নেতাজির মধ্যস্থতা ও শ্রমিক আন্দোলন
১৯২৮ সালে সুভাষ চন্দ্র বসু, যিনি তখনও নেতাজি পরিচয়ে পরিচিত ছিলেন না, টাটা স্টিলের শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘর্ষ সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। শ্রমিকদের স্বার্থে একাধিক স্ট্রাইক ও লকআউটের মধ্য দিয়ে সংস্থা কার্যক্রমে সমস্যা সৃষ্টি হয়।সুভাষ বসুর মধ্যস্থতায় শ্রমিকরা পুনরায় কাজে যোগ দেন এবং টাটা ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হয়। শ্রমিকদের সমস্যা সমাধান ও সংস্থার পুনরুদ্ধার ঘটায়, যা টাটা স্টিলের দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতার ভিত্তি স্থাপন করে।
আর্থিক পুনরুদ্ধার ও সংস্থার বৃদ্ধি
১৯২৫ সালে টাটা স্টিল ৬৫ লক্ষ টাকার লাভ করে। এই অর্থ সংস্থার ভিতকে আরও শক্তিশালী করে। শুধু আর্থিক পুনরুদ্ধারই নয়, এই সময়ে সংস্থা ভিতরে শ্রমিক কল্যাণ ও সমন্বয়মূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে।এতে ভবিষ্যতে সংস্থার বৃদ্ধিতে সহায়ক প্রভাব পড়ে এবং ভারতের শিল্পায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। টাটা স্টিলের পুনরুদ্ধার প্রমাণ করে যে, রাজনৈতিক সহায়তা ও শ্রমিক সমর্থন কৌশলগতভাবে কর্পোরেট স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে পারে।
টাটা স্টিলের ইতিহাসের শিক্ষণীয় দিক
টাটা স্টিলের ইতিহাস দেখায়, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান কখনও কখনও রাজনৈতিক চাপ ও আন্তর্জাতিক বাজারের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। নেহেরু, জিন্নাহ এবং নেতাজির মতো নেতৃত্ব সংস্থাকে স্থিতিশীল রাখতে বড় ভূমিকা পালন করেছে।এই সময়ে TISCO শ্রমিকদের সঙ্গে সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে উৎপাদন পুনরায় শুরু করে। এটি সংস্থার দীর্ঘমেয়াদী সফলতার ভিত্তি স্থাপন করে।