হরিয়ানার ভিওয়ানি জেলার সিঙ্ঘানি গ্রামের একটি জমিতে ১৩ই আগস্ট এক মহিলার বিকৃত মৃতদেহ সন্দেহজনক অবস্থায় পাওয়া যায়। তদন্তের পর জানা যায় যে মৃত ব্যক্তি ভিওয়ানির ১৯ বছর বয়সী মনীষা, যিনি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষিকা পদে কর্মরত ছিলেন।
ভিওয়ানি: হরিয়ানার ভিওয়ানি জেলার সিঙ্ঘানি গ্রামে ১৯ বছর বয়সী শিক্ষিকা মনীষার মৃতদেহ সন্দেহজনক অবস্থায় উদ্ধারের পর ঘটনাটি দেশজুড়ে শিরোনামে এসেছে। মনীষা একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াতেন এবং তাঁর মৃতদেহের অবস্থা ছিল অত্যন্ত উদ্বেগজনক। দুবার ময়নাতদন্তের পরেও মৃত্যুর সঠিক কারণ স্পষ্ট না হওয়ায়, মৃতদেহটি দিল্লির এইমস-এ (AIIMS) পাঠিয়ে তৃতীয়বারের মতো ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী নায়ব সিং সাইনি এই মামলার তদন্ত সিবিআই-এর (CBI) হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মৃতার পরিবার এবং গ্রামবাসীরা হত্যার আশঙ্কা প্রকাশ করে ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছেন।
মনীষার মৃত্যুর সম্পূর্ণ টাইমলাইন
- ১১ই আগস্ট, ২০২৫: মনীষা সকালে তাঁর বাড়ি থেকে খাবার খেয়ে সিঙ্ঘানি গ্রামের একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের পড়াতে যান। এরপর তিনি নিখোঁজ হন। পরিবারের সদস্যরা তাঁর খোঁজে লেগে পড়েন।
- ১৩ই আগস্ট, ২০২৫: গ্রামবাসীরা একটি জমিতে মনীষার মৃতদেহ দেখতে পান। মৃতদেহের অবস্থা গুরুতর ছিল—গলা কাটা, মুখ বিকৃত এবং চোখ বেরিয়ে আসা। গ্রামবাসীরা তৎক্ষণাৎ পুলিশ ও সরপঞ্চকে খবর দেন।
- ১৫ই আগস্ট, ২০২৫: মামলার প্রাথমিক তদন্তে ভিওয়ানি হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর পিজিআই (PGI) রোহতকে মৃতদেহের পুনরায় ময়নাতদন্ত করা হয়। একই দিনে, মনীষার বাবার অভিযোগের পর ভিওয়ানির এসপি-কে (SP) বদলি করা হয় এবং চারজন পুলিশকর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়।
- ১৬ই আগস্ট, ২০২৫: পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে জানতে পারে যে মনীষা একটি দোকান থেকে মনোস্প্রে (Monospray) নামের কীটনাশক কিনেছিলেন। ভিসেরা রিপোর্টেও শরীরে পেস্টিসাইড (Pesticide) পাওয়া যায়।
- ১৭ই আগস্ট, ২০২৫: পুলিশ একটি ফরেনসিক দল এবং ডগ স্কোয়াডের (Dog squad) সাথে ঘটনাস্থলে তদন্ত করে। দু'বার ময়নাতদন্তে গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। মৃতার চোখ এবং মাথার কিছু অংশ নিখোঁজ ছিল।
- ১৮ই আগস্ট, ২০২৫: ঘটনার প্রতিবাদে গ্রামবাসীরা ও মহিলারা মোমবাতি মিছিল বের করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এ সময় পুলিশ ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া হয়।
- ১৯শে আগস্ট, ২০২৫: ভিসেরা রিপোর্টের ভিত্তিতে পুলিশ প্রাথমিক রিপোর্টে মৃত্যুর কারণ হিসেবে পেস্টিসাইডকে উল্লেখ করে। মনীষার বাবা পুলিশের রিপোর্টের ওপর প্রশ্ন তোলেন এবং অভিযোগ করেন যে প্রশাসন কমিটির ওপর চাপ সৃষ্টি করে শেষকৃত্যের জন্য সম্মতি নিয়েছে।
- ২০শে আগস্ট, ২০২৫: মুখ্যমন্ত্রী নায়ব সিং সাইনি মামলাটি সিবিআই-এর হাতে তুলে দেওয়ার ঘোষণা করেন। মনীষার মৃতদেহ তৃতীয়বারের মতো ময়নাতদন্তের জন্য দিল্লি এইমস-এ (AIIMS) পাঠানো হয়।
মনীষা মৃত্যু মামলায় এখন পর্যন্ত তদন্ত
রোহতক রেঞ্জের আইজি ওয়াই পুরণ কুমার জানিয়েছেন যে মনীষার মৃত্যুর তদন্তে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ভিওয়ানি এবং পিজিআই (PGI) রোহতকে দু'বার ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ, ভিসেরা রিপোর্ট এবং ফরেনসিক তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করেছে।
যদিও ময়নাতদন্তের রিপোর্টে আত্মহত্যার বিষয় উঠে এসেছে, তবে পরিবার ও গ্রামবাসীরা তা মানতে নারাজ। তাঁদের বিশ্বাস, মনীষা হত্যার শিকার হয়েছেন এবং সঠিক বিচার তখনই পাওয়া যাবে যখন একটি স্বাধীন সংস্থা সিবিআই (CBI) দ্বারা সম্পূর্ণরূপে তদন্ত করা হবে। মনীষার পরিবার ও গ্রামবাসীরা ক্রমাগত এই মামলায় ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছেন।