বাড়ি থেকে বেরিয়ে উধাও শিক্ষক, ঘন্টা কয়েক পরেই স্ত্রীর মোবাইলে ১৫ লক্ষ টাকার মুক্তিপণ দাবি | নালিকুলের প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক দেবকুমার দাস ৪ জুলাই দুপুরে ‘তারকেশ্বর যাচ্ছি’ বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন। বিকেল গড়িয়ে রাত হতেই তাঁর স্ত্রীর ফোনে আসে ভয়াবহ এক কল—স্বামীর মুক্তিপণ বাবদ ১৫ লক্ষ টাকা দাবি! এরপরই নড়ে-চড়ে বসে পুলিশ প্রশাসন।
ফোনে প্রথম হুমকি, পরে মেসেজ—পুলিসে গেলে ‘শেষ’!
স্ত্রীর ফোনে আসে ভয়াল হুমকি, সঙ্গে মুক্তিপণের অঙ্ক—ভয়ার্ত পরিবার দৌড়য় থানায় | রাত ৯টার সময় দেবকুমারের ফোন থেকেই তাঁর স্ত্রীকে ফোন করে বলা হয়, টাকা না দিলে প্রাণ যাবে। পরে এসএমএসে সাফ জানানো হয়—পুলিসে জানালে খুন করে গুম করে দেওয়া হবে। তবে সাহস হারাননি স্ত্রী, তড়িঘড়ি গিয়ে হরিপাল থানায় দায়ের করেন অপহরণের অভিযোগ।
ট্র্যাকিংয়ে উঠে এল আসানসোলের নাম, পুলিশ নড়ে চড়ে বসল
মোবাইল ট্র্যাক করে দেখা গেল লোকেশন প্রথমে আসানসোলে, রহস্য আরও ঘনাল | অভিযোগ পাওয়ার পরেই ফোন ট্র্যাকিংয়ে নামে হরিপাল থানার পুলিশ। প্রথমেই দেখা যায়, ফোনটি আসানসোল হয়ে কোনও দূরের গন্তব্যে যাচ্ছে। একের পর এক স্টেশনে যোগাযোগ শুরু হয় জিআরপি ও রেল পুলিশের সঙ্গে।
চম্বল এক্সপ্রেসে ধরা পড়ল ‘নিখোঁজ’ শিক্ষক!
মধ্যপ্রদেশে যাচ্ছিলেন শিক্ষক, ট্রেনেই উদ্ধার, কাকতালীয়ভাবে তদন্তকারী দলও ছিল ট্রেনে | পুলিশের তদন্তে উঠে আসে, দেবকুমার চম্বল এক্সপ্রেসে উঠেছেন এবং তাঁর লোকেশন মধ্যপ্রদেশ। ভাগ্যক্রমে ধনিয়াখালি থানার এক তদন্তকারী দল ওই সময় সেই ট্রেনেই যাচ্ছিল গোয়ালিয়রের উদ্দেশে। হরিপাল থানার বার্তায় চমকে ওঠে গোটা দল।
ট্রেন তল্লাশিতে মিলল দেবকুমার, রহস্য আরও জটিল
ঝাঁসিতে নামিয়ে আনা হল শিক্ষককে, প্রশ্ন উঠছে—স্বেচ্ছায় গিয়েছিলেন, না অপহরণ? | চম্বল এক্সপ্রেসে খোঁজাখুঁজির পর অবশেষে এক কামরায় পাওয়া যায় দেবকুমারকে। তাঁকে ঝাঁসিতে নামিয়ে হুগলি গ্রামীণ পুলিশের হেফাজতে আনা হয়। সোমবার ভোরে তাঁকে ফিরিয়ে এনে তোলা হয় চন্দননগর আদালতে, গোপন জবানবন্দি দিতে।
অপহরণ না কি নাটক? তদন্তে নেমে ধন্দে পুলিশ
তারকেশ্বর যাওয়ার কথা বলে চম্বল এক্সপ্রেসে, মধ্যপ্রদেশেই কেন? রহস্য খুঁজছে তদন্তকারীরা | তাঁকে কি সত্যিই অপহরণ করা হয়েছিল? নাকি পুরোটাই সাজানো চক্রান্ত? কিংবা কোনও ব্যক্তিগত গোপন চক্রান্ত লুকিয়ে আছে এই ঘটনার আড়ালে? এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই এখন দেবকুমারের গোপন জবানবন্দির উপর নির্ভর করছে তদন্ত।