কৈশোরের পিরিয়ডের ব্যথা বড় স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে: অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা

কৈশোরের পিরিয়ডের ব্যথা বড় স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে: অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে বয়ঃসন্ধিকালে হওয়া পিরিয়ডের ব্যথা ভবিষ্যতে মহিলাদের জন্য একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তীব্র বা মাঝারি পিরিয়ড ব্যথা থেকে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, মাথাব্যথা, কোমর ও পায়ের ব্যথার ঝুঁকি ৬৫-৭৬% পর্যন্ত বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা সময়মতো চিকিৎসা এবং সচেতনতার উপর জোর দিচ্ছেন। 

কৈশোরে পিরিয়ডের ব্যথা: অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নতুন গবেষণা অনুসারে, কিশোরী মেয়েদের মাঝারি বা তীব্র পিরিয়ডের ব্যথা ভবিষ্যতে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার (ক্রনিক পেন) কারণ হতে পারে। ১১০০-র বেশি তরুণ-তরুণীর ডেটা নিয়ে করা এই গবেষণা বলছে যে, ১৫ বছর বয়সে পিরিয়ডের ব্যথায় ভোগা মেয়েদের ২৬ বছর বয়সে ক্রনিক ব্যথার ঝুঁকি ৬৫-৭৬% পর্যন্ত বেড়ে যায়। কোমর, মাথা, পা এবং জয়েন্টে একটানা ব্যথার ঝুঁকিও বেশি পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পিরিয়ডের ব্যথাকে সাধারণ ভেবে অবহেলা করা উচিত নয়, বরং সময়মতো চিকিৎসা এবং সচেতনতার মাধ্যমে একে গুরুতর পরিস্থিতি তৈরি হওয়া থেকে আটকানো যেতে পারে।

কৈশোরের ব্যথা কেন উদ্বেগের কারণ

প্রতি মাসে পিরিয়ডের সময় অনেক মেয়ে তীব্র ব্যথায় ভোগে। এই ব্যথা পেট, কোমর ও পায়ে এতটাই বেশি হয় যে তারা বিছানা থেকে উঠতে পারে না। কিছু মেয়ের বমি হয়, আবার কারো জন্য দাঁড়ানোও কঠিন হয়ে পড়ে। এর ফলে অনেক সময় তারা স্কুল বা কলেজে যেতে পারে না। পুরনো দিনে একে সামান্য ভেবে অবহেলা করা হত। কিন্তু এখন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে এই ব্যথা মেয়েদের ভবিষ্যতের জীবনকে প্রভাবিত করতে পারে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ১,১০০-র বেশি মানুষের ডেটা পরীক্ষা করেছেন। এতে দেখা গেছে, যেসব মেয়ের ১৫ বছর বয়সে খুব বেশি পিরিয়ডের ব্যথা হতো, তাদের ২৬ বছর বয়স পর্যন্ত একটানা ব্যথা অর্থাৎ ক্রনিক পেন হওয়ার ঝুঁকি ৭৬ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে, যেসব মেয়ের মাঝারি ব্যথা হতো, তাদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি ৬৫ শতাংশ বেশি পাওয়া গেছে।

পেট ও কোমরের পাশাপাশি শরীরের অন্য অংশেও প্রভাব

এই গবেষণার বিশেষত্ব হল যে এতে কেবল পেট বা শ্রোণী অঞ্চলে ব্যথা নয়, শরীরের অন্যান্য অংশেও দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেসব মেয়ের তীব্র পিরিয়ডের ব্যথা ছিল, তাদের বড় হয়ে মাথাব্যথা, হাঁটু, হাত-পা, কবজি এবং গোড়ালির ব্যথার ঝুঁকি দ্বিগুণ বেশি পাওয়া গেছে। এছাড়াও তাদের নিতম্বের ব্যথা ৮১ শতাংশ এবং উপরের কোমরের ব্যথা ৭৮ শতাংশ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।

মস্তিষ্কের উপরও প্রভাব ফেলে

বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে কৈশোরে মস্তিষ্কের শেখার এবং পরিবর্তনের ক্ষমতা অর্থাৎ নিউরোপ্লাস্টিসিটি বেশি থাকে। এই সময় বারবার হওয়া ব্যথার সংকেত মস্তিষ্ককে আরও সংবেদনশীল করে তোলে। এর ফলস্বরূপ, মস্তিষ্ক ব্যথাকে ভিন্নভাবে অনুভব করতে শুরু করে এবং ভবিষ্যতে ক্রনিক পেন হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

সাহায্য চাইলেও মেলে না স্বস্তি

গবেষণায় দেখা গেছে যে বেশিরভাগ কিশোরী মেয়ে পিরিয়ডের ব্যথার জন্য সাহায্য চায় না। আর যারা সাহায্য চায়, তাদের প্রায়শই বলা হয় যে এটি স্বাভাবিক। এই ধারণার কারণে অনেক মেয়ে চিকিৎসা ছাড়াই এই ব্যথা সহ্য করে থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পিরিয়ডের ব্যথা অবহেলা করলে তা ভবিষ্যতে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে।

ব্রিটেনে বাড়ছে মনোযোগ

রয়্যাল কলেজ অফ অবস্টেট্রিশিয়ানস অ্যান্ড গাইনোকোলজিস্টস-এর সভাপতি অধ্যাপক রানি ঠাকর বলেছেন যে পিরিয়ড এমন হওয়া উচিত নয় যে কোনো মেয়েকে স্কুল বা কর্মস্থলে যেতে বাধা দেয়। যদি ব্যথা খুব তীব্র হয় এবং ওষুধে না সারে, তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। অন্যদিকে, ব্রিটিশ সরকার মহিলা স্বাস্থ্য কৌশলের উপর জোর দিয়েছে। এতে গাইনোকোলজির অপেক্ষার তালিকা কমানো, অতিরিক্ত অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেওয়া এবং বিনামূল্যে জরুরি হরমোনাল গর্ভনিরোধক সরবরাহ করা অন্তর্ভুক্ত।

ভারতেও পরিস্থিতি গুরুতর

ভারতে পিরিয়ডস নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর প্রচেষ্টা চলছে। কিন্তু এখনও অনেক জায়গায় মহিলারা তথ্য এবং চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত। ২০২৪ সালে তামিলনাড়ুর ত্রিচি জেলায় একটি ঘটনা ঘটে। এখানে ১৮ বছর বয়সী একটি মেয়ের পিরিয়ডের সময় তীব্র ব্যথা হতো। ব্যথা কমানোর জন্য সে বেশি মাত্রায় ব্যথানাশক গ্রহণ করে। ওষুধের অতিরিক্ত মাত্রার কারণে তার মৃত্যু হয়। এই ঘটনা দেখায় যে চিকিৎসা এবং সচেতনতার অভাব কতটা বিপজ্জনক প্রমাণিত হতে পারে।

Leave a comment