তেজ প্রতাপ যাদবের রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন: আরজেডি থেকে দূরে, নতুন পথের সন্ধানে

তেজ প্রতাপ যাদবের রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন: আরজেডি থেকে দূরে, নতুন পথের সন্ধানে

বিহারের রাজনীতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। আরজেডি সুপ্রিমো লালু প্রসাদ যাদবের বড় ছেলে এবং প্রাক্তন মন্ত্রী তেজ প্রতাপ যাদব রাজনৈতিক ময়দানে ফিরে আসার প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করে ফেলেছেন। দল ও পরিবার থেকে আলাদা হওয়ার পর প্রথমবার তেজ প্রতাপ তাঁর পুরনো বিধানসভা কেন্দ্র মहुआ সফর করেন, যেখানে তিনি কেবল মেডিকেল কলেজ পরিদর্শন করেননি, বরং রোড শোয়ের মাধ্যমে জনসাধারণের মধ্যে তাঁর শক্তিশালী উপস্থিতি জানান দিয়েছেন।

তেজ প্রতাপের এই সফর নিছক একটি আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি ছিল না, বরং এতে আসন্ন নির্বাচনগুলির কৌশল এবং তাঁর পরিবর্তিত রাজনৈতিক মনোভাবের ঝলক স্পষ্ট দেখা গেছে। মাথায় পাগড়ি এবং সবুজ রঙের টুপি পরে তেজ প্রতাপ স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তিনি এখন নিজের শক্তিতে রাজনীতিতে সক্রিয় এবং একটি নতুন রাজনৈতিক পরিচিতি তৈরির দিকে এগিয়ে গিয়েছেন।

আরজেডির পতাকা থেকে দূরত্ব

মওয়ার এই সফরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল, তেজ প্রতাপ যাদব আরজেডির পতাকা ও ব্যানার ব্যবহার করেননি। পুরো অনুষ্ঠানের সময় শুধুমাত্র তাঁর নতুন রাজনৈতিক দল ‘টিম তেজ প্রতাপ যাদব’-এর পতাকা উড়তে দেখা গেছে। এর থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে তেজ প্রতাপ এখন নিজের রাজনৈতিক ভিত্তি তৈরি করছেন এবং আরজেডি থেকে দূরত্ব বজায় রাখছেন।

তিনি নিজেও বলেছেন যে মানুষ ‘টিম তেজ প্রতাপ যাদব’-কে আগে থেকেই চেনে এবং এটি কোনও নতুন পরিচিতি নয়। তেজ প্রতাপের এই পরিবর্তিত আচরণ এবং আলাদা পরিচয় দেখানোর চেষ্টা স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করে যে তিনি দলের ছায়া থেকে বেরিয়ে এসে নিজের স্বাধীন রাজনৈতিক পথ তৈরি করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

জনগণ চাইলে নির্বাচন লড়ব

তেজ প্রতাপ যাদবকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল তিনি কোন দল থেকে নির্বাচন লড়বেন, তখন তিনি বলেন, আগামী সময় বলবে কোন দল থেকে নির্বাচন লড়া হবে। যদিও, তিনি অবশ্যই যোগ করেছেন যে যদি জনগণ চায়, তবে তিনি অবশ্যই নির্বাচন লড়বেন।

এই সময়ে তেজ প্রতাপ আরও একবার জানান যে তিনি তাঁর মেয়াদে মওয়াকে একটি মেডিকেল কলেজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং এখন সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়েছে। এর সঙ্গে তিনি আরও একটি নতুন প্রতিশ্রুতি দেন—যদি নতুন সরকার গঠিত হয়, তাহলে মওয়া একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজও পাবে।

তাঁর রোড শো-তে বিপুল সংখ্যক সমর্থক এবং ‘মওয়ার বিধায়ক কেমন হোক, তেজ প্রতাপ যাদবের মতো হোক’—এই ধরনের স্লোগান প্রমাণ করে যে তিনি জনগণের সমর্থনও পাচ্ছেন। তেজ প্রতাপ সরাসরি নির্বাচনের ঘোষণা না করলেও, তাঁর আচরণ এবং সক্রিয়তা স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে যে তিনি মওয়া থেকে নির্বাচন লড়ার মনস্থির করেছেন।

মওয়াতে দুই আরজেডি নেতার মধ্যে লড়াই

মওয়া আসনে তেজ প্রতাপের ক্রমবর্ধমান সক্রিয়তা দলের অভ্যন্তরেও আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে এই আসন থেকে আরজেডির বিধায়ক মুকেশ রোশন, যিনি তেজস্বী যাদবের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। তেজ প্রতাপের সফর এবং নির্বাচন লড়ার ইঙ্গিত পাওয়ার পর তাঁর উদ্বেগও বাড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে।

জানা যায়, যখন তেজ প্রতাপ মওয়া থেকে নির্বাচন লড়ার কথা বলেছিলেন, তখন মুকেশ রোশন আবেগপ্রবণ হয়ে কেঁদেছিলেন। এখন তিনিও এলাকায় সক্রিয় হয়ে উঠেছেন এবং প্রকাশ্যে বলছেন যে যদি মওয়ার মানুষ চায়, তবে তিনিও নির্বাচনী ময়দানে নামবেন।

মওয়া আসনে তেজ প্রতাপ এবং মুকেশ রোশন উভয়ের উপস্থিতি আরজেডির মধ্যে অভ্যন্তরীণ উত্তেজনা বাড়িয়ে দিয়েছে। এই সংঘর্ষ কেবল একটি আসনের লড়াই নয়, এটি দলের অভ্যন্তরে আধিপত্যের লড়াইয়েরও ইঙ্গিত দিচ্ছে। তেজ প্রতাপের দাবি, তিনি মওয়ার জন্য মেডিকেল কলেজ এনেছেন, যেখানে বর্তমান বিধায়ক মুকেশ রোশন তাঁর জনভিত্তি নিয়ে ময়দানে টিকে আছেন।

রাজনৈতিক কৌশলের নতুন ইঙ্গিত

তেজ প্রতাপ যাদবের পরিবর্তিত আচরণ এবং আরজেডি থেকে দূরত্ব বজায় রাখার কৌশল দেখাচ্ছে যে তিনি নিজের স্বাধীন রাজনৈতিক পরিচিতি তৈরি করতে চান। ‘টিম তেজ প্রতাপ যাদব’-এর পতাকার সঙ্গে তাঁর জনসভা এবং রোড শো এখন এটা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে চান।

যদিও তিনি এখনও জানাননি যে কোন দল থেকে নির্বাচন লড়বেন, তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে তেজ প্রতাপ হয় নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারেন অথবা অন্য কোনও জোটের অংশ হয়ে নির্বাচনী ময়দানে নামতে পারেন।

যাইহোক, তেজ প্রতাপ যাদবের প্রত্যাবর্তন এবং তাঁর ক্রমবর্ধমান সক্রিয়তা কেবল মওয়াতেই নয়, বিহারের রাজনীতিতেও আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

Leave a comment