বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিপ্লবীদের 'সন্ত্রাসবাদী' বলার অভিযোগে বিতর্ক

বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিপ্লবীদের 'সন্ত্রাসবাদী' বলার অভিযোগে বিতর্ক

বিদ্যাসাগর ইউনিভার্সিটির ইতিহাসের একটি প্রশ্নে বিপ্লবীদের 'সন্ত্রাসবাদী' হিসেবে উল্লেখ করা নিয়ে বিতর্ক। বিজেপি মমতা সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় এটিকে টাইপিংয়ের ভুল বলে উল্লেখ করেছে এবং তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। বিষয়টি রাজনৈতিক এবং শিক্ষাগত উভয় স্তরেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

পশ্চিমবঙ্গ: পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা জগতে আবারও এমন একটি বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, যা রাজ্যের রাজনীতিকে উত্তপ্ত করে তুলেছে। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস সম্মান ষষ্ঠ সেমিস্টারের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে এমন একটি প্রশ্ন এসেছে, যা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ভাবমূর্তি নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। প্রশ্নপত্রে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করা বিপ্লবীদের 'সন্ত্রাসবাদী' হিসেবে উল্লেখ করায় রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

প্রশ্ন যা ইতিহাসকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে

বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস সম্মান ষষ্ঠ সেমিস্টারের পরীক্ষার প্রশ্নে ছাত্রছাত্রীদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল – 'মেদিনীপুরের তিনজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নাম বলুন, যাদের সন্ত্রাসবাদীরা হত্যা করেছিল?' এই প্রশ্নে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের 'সন্ত্রাসবাদী' বলার কারণে রাজনৈতিক ঝড় উঠেছে। প্রশ্নপত্রে যাদের 'সন্ত্রাসবাদী' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, তারা ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর যোদ্ধা, যারা ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের – বার্গ (১৯৩৩), পেডি (১৯৩১) এবং ডগলাসকে (১৯৩২) হত্যা করেছিলেন।

শুভেন্দু অধিকারীর মমতা সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই পুরো ঘটনা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন: 'এটা কেবল টাইপিংয়ের ভুল নয়, বরং একটি সুপরিকল্পিতideological ষড়যন্ত্র। বীর বিপ্লবীদের সন্ত্রাসী বলা শুধু তাদের নয়, গোটা জাতির অপমান। এটা সেই লক্ষ লক্ষ আত্মত্যাগের অপমান, যা ভারতকে স্বাধীন করতে দেওয়া হয়েছিল।' অধিকারী আরও অভিযোগ করেন যে, এমন বিতর্কিত প্রশ্ন ২০২৩ সালেও বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিল, কিন্তু তখনও কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাফাই

বিতর্ক বাড়তে দেখে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জে কে নন্দী একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি জারি করে এই প্রশ্নটিকে "টাইপিংয়ের ভুল" বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, প্রশ্নপত্রে এই শব্দটি ভুল করে এসেছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় এর দায় নেয়।

রেজিস্ট্রার ক্ষমা চেয়ে বলেন – 'আমরা এই ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে জরুরি বৈঠক ডেকেছি। প্রশ্ন তৈরি করার দায়িত্বে থাকা অধ্যাপককে কারণ দর্শানোর জন্য বলা হয়েছে। উপাচার্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন এবং এক সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলেছেন। ভবিষ্যতে এই ধরনের ভুল আর হবে না।'

ছাত্র সংগঠনগুলির প্রতিবাদ

এই প্রশ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরেও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (ABVP), রাষ্ট্রীয় ছাত্র সংগঠন এবং আরও অনেক স্থানীয় সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। ছাত্র সংগঠনগুলি দাবি করেছে, শুধু প্রশ্ন তৈরি করার শিক্ষককে বরখাস্ত করা হোক তাই নয়, পরীক্ষা বোর্ডের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

বিজেপির ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি, তৃণমূলের সাফাই

বিজেপি নেতারা এই ইস্যুটি বিধানসভায় তোলারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্ররা বলেছেন, এটি সম্পূর্ণরূপে একটি একাডেমিক ভুল এবং এটিকে রাজনৈতিক রং দেওয়া উচিত নয়। দলের বক্তব্য, তদন্তের পর দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদিও বিরোধীদের বক্তব্য, এটি 'একাডেমিক ভুল' নয়, বরং সুপরিকল্পিত মানসিকতার ফল। তারা প্রশ্ন তুলছেন যে, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা বোর্ড কীভাবে এত বড় ভুল করতে পারে, এবং প্রশ্ন আগে থেকে তৈরি ও পর্যালোচনার একাধিক স্তর থাকার পরেও এটি টাইপিংয়ের ভুল কীভাবে হতে পারে?

ইতিহাসের সঙ্গে কারসাজি, নাকি প্রশাসনিক গাফিলতি?

এই প্রশ্নটি আবারও শিক্ষা ব্যবস্থা এবং একাডেমিক প্রতিষ্ঠানগুলির দায়িত্বের উপর প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করে। যদি এটি নিছক টাইপিংয়ের ভুল ছিল, তাহলে প্রশ্ন ওঠে, এত স্তরে পরীক্ষার খাতা দেখার পরেও এই ভুল কীভাবে থেকে গেল? এটি কি নিছক কাকতালীয় ঘটনা, নাকি সত্যিই ইতিহাসের তথ্য বিকৃত করার চেষ্টা?

Leave a comment