সমরাবতা হিংসা মামলায় ৮ মাস ধরে জেলে বন্দী নরেশ মীনাকে অবশেষে হাইকোর্ট থেকে জামিন দেওয়া হলো। এটি ছিল তাঁর তৃতীয় আবেদন, যার শুনানিতে বিচারপতি প্রবীর ভাটনগর-এর একক বেঞ্চ স্বস্তি দিয়েছে। ফলে তাঁর মুক্তির পথ সুগম হলো।
নরেশ মীনার জামিন: রাজস্থানের রাজনীতিতে পুনরায় আলোচিত মুখ নরেশ মীনা অবশেষে ৮ মাস পর বড় স্বস্তি পেলেন। দেওলি-উনিয়ারা বিধানসভা উপনির্বাচনের সময় সমরাবতা গ্রামে ঘটে যাওয়া সহিংসতার মামলায় হাইকোর্ট নরেশ মীনার জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেছে। এটি ছিল নরেশ মীনার তৃতীয় প্রচেষ্টা, যেখানে তিনি অবশেষে স্বস্তি পেলেন।
হাইকোর্ট জামিন মঞ্জুর করলো, মুক্তির পথ পরিষ্কার
নরেশ মীনার এটি ছিল তৃতীয় জামিনের আবেদন। এর আগে, আদালত দুবার তাঁর আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল। এবার বিচারপতি প্রবীর ভাটনগরের একক বেঞ্চ মামলার শুনানি করেন এবং জানান যে আবেদনকারীকে জামিন দেওয়া যেতে পারে, কারণ পুলিশ ইতিমধ্যে এই মামলায় চার্জশিট পেশ করেছে এবং তদন্তের প্রধান প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। নরেশ মীনার পক্ষে আইনজীবী ফতেহরাম মীনা জোরালো সওয়াল করেন এবং আদালতের সামনে সমস্ত তথ্য পেশ করেন। আদালত দেখেছে যে আবেদনকারী দীর্ঘদিন ধরে জেলে রয়েছেন এবং বিচার প্রক্রিয়া এখনো সম্পন্ন হতে সময় লাগবে, তাই তাঁকে জামিন দেওয়া যেতে পারে।
পুরো ঘটনা কী ছিল?
২০২৪ সালের ১৩ই নভেম্বর, দেওলি-উনিয়ারা উপনির্বাচনের সময় টোঙ্ক জেলার সমরাবতা গ্রামে ভোট বয়কটের ঘোষণা করা হয়েছিল। গ্রামবাসীদের অভিযোগ ছিল যে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা গ্রামের সমস্যাগুলি উপেক্ষা করছেন। নরেশ মীনাও গ্রামবাসীদের এই সিদ্ধান্তের সমর্থন করেছিলেন। বিতর্ক বাধে যখন গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেন যে এসডিএম অমিত চৌধুরী কিছু গ্রামবাসীকে জোর করে ভোট দিতে বাধ্য করেছেন। ক্ষিপ্ত হয়ে নরেশ মীনা এসডিএমকে থাপ্পড় মারেন বলে অভিযোগ। এই ঘটনাটি দ্রুত ছড়িয়ে পরে এবং পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
ধরনা থেকে সহিংসতার দিকে যাত্রা
এসডিএমকে থাপ্পড় মারার পর নরেশ মীনা গ্রামে ফিরে আসেন এবং ধরনায় বসেন। তখনই পুলিশ তাঁকে আটক করে। খবরটি তাঁর সমর্থকদের কাছে পৌঁছানো মাত্র বিপুল সংখ্যক মানুষ একত্রিত হয় এবং পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে শুরু করে। লোকেরা পুলিশের গাড়ি আটকাতে চেষ্টা করে এবং বিতর্ক বাড়ে।
গাড়িগুলিতে আগুন
এই ঘটনার চরম রূপ দেখা যায় যখন বিক্ষোভকারীরা বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশ এর প্রতিক্রিয়ায় লাঠিচার্জ করে এবং গ্রামবাসীদের উপর পাথর নিক্ষেপের অভিযোগও ওঠে। পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর হয়ে উঠেছিল যে কয়েক ঘণ্টা ধরে গ্রামে উত্তেজনা বিরাজ করে।
পুলিশ গ্রেফতার করে, দুবার জামিনের আবেদন খারিজ
সহিংসতার ঘটনার পরের দিন পুলিশ নরেশ মীনাকে গ্রেপ্তার করে এবং নগরফোর্ট থানায় তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়। এরপর মামলাটি আদালতে চলে, কিন্তু প্রথম দুবার তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন কারাবাসের পর অবশেষে তৃতীয়বারে হাইকোর্ট থেকে তিনি স্বস্তি পান এবং এখন তাঁর জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ সুগম হয়েছে।
রাজনৈতিক মহলে তোলপাড়
নরেশ মীনার জামিন নিয়ে এখন রাজনৈতিক মহলেও তোলপাড় শুরু হয়েছে। তাঁর সমর্থকদের ধারণা, নরেশ মীনাকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার করা হয়েছে, যেখানে বিরোধী গোষ্ঠী এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করছে। কেউ কেউ বলছেন, এই ঘটনা কেবল আইন-শৃঙ্খলার বিষয় নয়, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের মধ্যে আস্থার সংকটকেও তুলে ধরেছে।
আদালতের সিদ্ধান্তে সমর্থকদের মধ্যে আনন্দের ঢেউ
হাইকোর্ট থেকে জামিনের খবর ছড়িয়ে পড়তেই নরেশ মীনার গ্রাম এবং সমর্থকদের মধ্যে আনন্দের ঢেউ লাগে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও তাঁর সমর্থকরা এই সিদ্ধান্তের স্বাগত জানিয়েছেন। সমরাবতা গ্রামে মিষ্টি বিতরণ করা হয় এবং ঢাক-ঢোল বাজিয়ে উদযাপন করা হয়। গ্রামবাসীরা বলছেন, নরেশ মীনা সবসময় তাঁদের অধিকারের জন্য লড়াই করেছেন এবং এবারও তাই করেছেন।
ভবিষ্যতের পথ
এখন প্রশ্ন হলো, নরেশ মীনা কি রাজনৈতিকভাবে পুনরায় সক্রিয় হবেন, নাকি এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে তাঁর কৌশল পরিবর্তন করবেন? তাঁর সমর্থকরা আশা করছেন যে তিনি আরও শক্তিশালীভাবে তাঁর রাজনৈতিক জীবন এগিয়ে নিয়ে যাবেন। যদিও আইনি প্রক্রিয়া এখনো চলছে, এবং বিচারের সময় তাঁকে আদালতে হাজির হতে হবে।