ভারতের উপর ট্রাম্পের শুল্ক এবং চীনকে দেওয়া হুমকির বিষয়ে বেইজিং আমেরিকাকে স্পষ্ট জবাব দিয়েছে। চীন বলেছে যে চাপের নীতিতে কোনও লাভ নেই, আমরা আমাদের জাতীয় স্বার্থের সাথে আপস করব না।
Trump Tariff: আমেরিকা ও চীনের মধ্যে শুল্ক এবং জ্বালানি নীতি নিয়ে উত্তেজনা আবারও বেড়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি চীন ও ভারত উভয়কেই নিশানা করেছেন। ট্রাম্প সতর্ক করেছেন যে চীন যদি রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখে তবে তার উপর ভারী শুল্ক আরোপ করা হবে। এর প্রতিক্রিয়ায় চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন বলেছেন যে চীন তার জাতীয় স্বার্থ অনুযায়ী জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করবে এবং কোনও চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না।
গুও জোর দিয়ে বলেন যে শুল্ক যুদ্ধে কোনও বিজয়ী হয় না। জোরজবরদস্তি ও চাপ দিয়ে কোনো পক্ষই লাভবান হয় না। তিনি আরও স্পষ্ট করে বলেন যে চীন তার সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা এবং উন্নয়ন স্বার্থ রক্ষার জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত।
ভারতের উপর ২৫% শুল্কের ঘোষণা
একদিকে আমেরিকা যখন চীনকে টার্গেট করছে, অন্যদিকে ভারতকে ধাক্কা দেওয়া হয়েছে। ট্রাম্প ভারতের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা করেছেন, যা ১ আগস্ট ২০২৫ থেকে কার্যকর হবে। এই সিদ্ধান্তের ফলে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কের অবনতি হতে পারে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প এক্স (সাবেক টুইটার)-এ পোস্ট করে বলেছেন যে ভারত আমাদের বন্ধু, কিন্তু তার উচ্চ শুল্ক, রাশিয়া থেকে সামরিক সরঞ্জাম এবং জ্বালানি কেনার মতো নীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এই যুক্তির ভিত্তিতে ট্রাম্প ভারতকে শুধু ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণাই করেননি, বরং একটি অতিরিক্ত জরিমানা আরোপের কথাও বলেছেন।
ভারত সরকারের জবাব
ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর ভারত সরকার তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে তারা আমেরিকার বক্তব্যকে গুরুত্বের সাথে নিচ্ছে এবং এর প্রভাবগুলি খতিয়ে দেখছে। সরকার স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ভারত সরকারের সূত্র অনুযায়ী, এই বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক শুরু হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বিদেশ মন্ত্রণালয় যৌথভাবে আমেরিকার সিদ্ধান্তের প্রভাব এবং কৌশলগত জবাবের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
মনীষ তিওয়ারির কটাক্ষ
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় কংগ্রেস নেতা ও প্রাক্তন মন্ত্রী মনীষ তিওয়ারি বলেছেন যে আমেরিকার এই কঠোরতা आत्मनिर्भर ভারত-এর শক্তিকে তুলে ধরে। তিওয়ারির মতে, ভারতের বিদেশ ও বাণিজ্য নীতি কোনো চাপের মুখে চলে না। যদি ভারতকে শুল্কের সম্মুখীন হতেও হয়, তবে এটি তার স্বাধীন নীতির ফল হবে, যা আমেরিকা বা অন্য কোনও দেশের নীতির উপর নির্ভরশীল নয়।
ট্রাম্পের রণনীতি
এক্ষেত্রে ট্রাম্পের রণনীতি হল ভারতকে রাশিয়া ও চীনের প্রভাব থেকে আলাদা করা। তিনি চান যে ভারত আমেরিকার নেতৃত্বে কাজ করুক এবং রাশিয়া থেকে দূরত্ব বজায় রাখুক। কিন্তু ভারতের বিদেশ নীতি 'স্ট্যান্ড অ্যালোন' দৃষ্টিভঙ্গির উপর ভিত্তি করে তৈরি, যা তার জাতীয় স্বার্থকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়। ভারত এখনও পর্যন্ত রাশিয়া থেকে কম দামে তেল কিনেছে এবং এটিকে সে তার জ্বালানি সুরক্ষা সংক্রান্ত বিষয় মনে করে। ভারতের এই মনোভাব ট্রাম্প বা বাইডেন যেই মার্কিন প্রশাসনে থাকুক না কেন, মতভেদের কারণ হতে পারে।
চীনের স্পষ্ট জবাব
চীনের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন আরও বলেন যে আমেরিকার চাপের নীতি না যুক্তিযুক্ত, না কার্যকর। তিনি পুনরায় বলেন যে চীন রাশিয়া থেকে তেল কেনার কৌশল চালিয়ে যাবে, কারণ এটি তার জ্বালানি চাহিদা এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থের সঙ্গে জড়িত। গুও বলেন, 'শুল্ক যুদ্ধে কোনো পক্ষই বিজয়ী হয় না। জোরজবরদস্তি করে কোনো সমাধান হয় না। চীন তার সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে।'