ফিল্ম ‘উদয়পুর ফাইলস’ মুক্তির আগেই আইনি জটিলতায় জড়িয়ে পড়েছে এবং ক্রমাগত বিতর্কের মধ্যে রয়েছে। তবে, এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁকে সুপ্রিম কোর্ট ফিল্মটির মুক্তি আটকানোর জন্য সরাসরি কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি করতে অস্বীকার করেছে।
Udaipur Files Row: বহুল আলোচিত ফিল্ম ‘উদয়পুর ফাইলস’ নিয়ে চলা বিতর্ক এখন একটি নতুন দিকে মোড় নিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট শুক্রবার এই ফিল্মের মুক্তি আটকানোর আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। আদালত স্পষ্ট জানিয়েছে যে, এই মামলা দিল্লি হাইকোর্টের বিচারিক সীমার মধ্যে পড়ে এবং সেখানেই এর নিষ্পত্তি হওয়া উচিত। এর সাথে সুপ্রিম কোর্ট আবেদনকারীদের ২৮ জুলাই, ২০২৫ তারিখে দিল্লি হাইকোর্টে শুনানির জন্য যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
কী এই 'উদয়পুর ফাইলস' বিতর্ক?
‘উদয়পুর ফাইলস’ ফিল্মটির পরিচালনা করেছেন ভরত শ্রীनेत এবং এতে অভিনেতা বিজয় রাজ মুখ্য ভূমিকায় রয়েছেন। এই ফিল্মটি ২০২২ সালে রাজস্থানের উদয়পুরে দর্জি কানহাইয়ালালের হত্যার সত্য ঘটনার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে। নির্মাতাদের দাবি, ফিল্মে কোনো রকম পক্ষপাতিত্ব ছাড়া ঘটনাগুলি তুলে ধরা হয়েছে, কিন্তু মুসলিম সংগঠনগুলি এটিকে একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা বলছে।
সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য
শুনানির সময় সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, তারা এই ফিল্মের মুক্তির উপর সরাসরি নিষেধাজ্ঞা জারি করবে না, তবে ফিল্মটি সম্পর্কিত সমস্ত আইনি এবং সংবেদনশীল দিকগুলি দিল্লি হাইকোর্ট বিবেচনা করতে পারে। আদালত জানিয়েছে, যদি আবেদনকারীদের কোনো আপত্তি থাকে, তবে তারা দিল্লি হাইকোর্টে তাদের বক্তব্য পেশ করতে পারে।
সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের পর এই মামলাটি ২৮শে জুলাই দিল্লি হাইকোর্টের সামনে পেশ করা হবে, যেখানে আবেদনকারী জমিয়ত উলেমা-এ-হিন্দ এবং কানহাইয়ালাল হত্যাকাণ্ডের অভিযুক্তের তরফে দাখিল করা আবেদনগুলির উপর বিবেচনা করা হবে।
আবেদনকারীদের আপত্তিগুলি কী কী?
জমিয়ত উলেমা-এ-হিন্দের প্রধান মৌলানা আরশাদ মাদানির তরফে দাখিল করা আবেদনে বলা হয়েছে যে, ফিল্মটিতে মুসলিম সম্প্রদায়কে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যার ফলে সমাজে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়াতে পারে। আবেদনে আরও অভিযোগ করা হয়েছে যে, সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ফিল্ম সার্টিফিকেশন (CBFC) ফিল্মটিকে ছাড়পত্র দেওয়ার সময় নিরপেক্ষতা বজায় রাখেনি। আবেদনকারীদের মতে, CBFC প্যানেলের অনেক সদস্য একই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত, যা পক্ষপাতিত্বের আশঙ্কা তৈরি করে।
কানহাইয়ালাল হত্যাকাণ্ডের অভিযুক্ত মহম্মদ জাভেদও একটি আবেদন দায়ের করেছে, যাতে তার অপরাধমূলক বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফিল্মটির মুক্তি আটকানোর দাবি জানিয়েছে, যাতে ফিল্মটি তার বিরুদ্ধে সামাজিক কুসংস্কার তৈরি করতে না পারে।
নির্মাতাদের প্রতিক্রিয়া এবং মুক্তির নতুন তারিখ
সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের পর, ফিল্মের পরিচালক ভরত শ্রীनेत অবিলম্বে মুক্তির নতুন তারিখ ঘোষণা করে জানিয়েছেন যে, ‘উদয়পুর ফাইলস’ এখন ২০২৫ সালের ৮ই অগাস্ট সিনেমা হলে মুক্তি পাবে। ভরত শ্রীनेत বলেছেন যে, তারা CBFC থেকে প্রয়োজনীয় সমস্ত ছাড়পত্র পেয়েছেন এবং ফিল্মে কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে কোনো বিদ্বেষপূর্ণ বিষয় নেই।
নির্মাতাদের আরও দাবি, এই ফিল্মটি মত প্রকাশের স্বাধীনতার মধ্যে পড়ে এবং এর উদ্দেশ্য শুধুমাত্র সত্যকে সামনে আনা, কোনো ধর্ম বা শ্রেণীকে নিশানা করা নয়।
আইনি এবং সামাজিক দৃষ্টিকোণ
ফিল্ম ‘উদয়পুর ফাইলস’ আবারও ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি এবং বিচার ব্যবস্থার মধ্যে জটিল সম্পর্ককে তুলে ধরেছে। একদিকে ফিল্ম নির্মাতারা তাদের সৃজনশীল স্বাধীনতার কথা বলছেন, অন্যদিকে ধর্মীয় সংগঠন এবং মানবাধিকার কর্মীদের যুক্তি, এই ধরনের ফিল্ম থেকে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, আদালতগুলির এই ধরনের ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি, যাতে সংবিধানে দেওয়া মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং ধর্মীয় সম্প্রীতি উভয়ই সুরক্ষিত থাকতে পারে।