মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আকর্ষণীয় মোড় এসেছে। ত্রিভাষা বিষয়ক জিআর (সরকারি আদেশ) বাতিল হওয়াকে রাজ ঠাকরের মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (এমএনএস) এবং উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা (ইউবিটি) তাঁদের জয় হিসেবে তুলে ধরছে।
মহারাষ্ট্র: মুম্বাইয়ের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রতীকী ঘটনা ঘটতে চলেছে। প্রায় দুই দশক পর শিবসেনা (ইউবিটি)-র প্রধান উদ্ধব ठाकरे এবং মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (এমএনএস)-এর সভাপতি রাজ ठाकरे একই মঞ্চে আসতে চলেছেন। এই যৌথ জনসভা ৫ জুলাই ওয়ার্লির ডোম অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘মারাঠি বিজয় দিবস’।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি মহারাষ্ট্র সরকার ত্রিভাষা নীতির বাধ্যতামূলক আদেশ (জিআর) প্রত্যাহার করে নিয়েছিল, যার তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন মারাঠি ভাষা প্রেমীরা। এই সিদ্ধান্তকে দুই ঠাকরে ভাই মারাঠি ভাষা এবং আত্ম-পরিচয়ের জয় হিসেবে বর্ণনা করে একটি যৌথ জনসভার মাধ্যমে জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
রাজনৈতিক ব্যানার থেকে দূরে সভা
এই ঐতিহাসিক মঞ্চে কোনো দলের পতাকা বা পোস্টার ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, এই সভাটি সম্পূর্ণরূপে অরাজনৈতিক হিসেবে উপস্থাপন করা হবে, যার মূল উদ্দেশ্য মারাঠি ভাষা ও সংস্কৃতির পক্ষে হওয়া ‘বিজয়ের’ উদযাপন করা। রাজ ঠাকরে নিজে এই বিষয়ে জোর দিয়েছেন যে কোনো রাজনৈতিক প্রতীক ব্যবহার করা হবে না, যাতে মারাঠি সমাজের মধ্যে ঐক্যের বার্তা যায়।
রাজ ঠাকরে সম্প্রতি বলেছিলেন যে ত্রিভাষা নীতি বাতিল হওয়ার পর সঞ্জয় রাউত তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং ৫ জুলাই একটি বিজয় সভা আয়োজনের প্রস্তাব দেন। রাজ রাজি হন, তবে তিনি স্পষ্ট করে দেন যে এটিকে কোনো রাজনৈতিক পতাকার অধীনে নয়, বরং মারাঠি জনগণের একতা উদযাপনের জন্য আয়োজন করতে হবে।
ওয়ার্লিতে ঐতিহাসিক সভার প্রস্তুতি তুঙ্গে
সূত্র অনুযায়ী, ৫ জুলাইয়ের সভাটিকে সফল করতে শিবসেনা (ইউবিটি) এবং এমএনএস-এর শীর্ষ নেতারা একসঙ্গে বসে কৌশল তৈরি করছেন। কোনো ধরনের সমন্বয়হীনতা এড়াতে উভয় দলের সমন্বয়কারীরা ক্রমাগত বৈঠক করছেন। সভায় মারাঠি ভাষা প্রেমী এবং আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলিরও অংশগ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে।
আয়োজকদের মতে, মঞ্চের ডিজাইনও সম্পূর্ণরূপে ‘মারাঠি আত্ম-পরিচয়’-এর রঙে সজ্জিত করা হবে, তবে কোনো দলের চিহ্ন ব্যবহার করা হবে না। এই অনুষ্ঠানে মারাঠি শিল্পকলা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলিও অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যাতে উৎসবের পরিবেশ তৈরি হয়।
মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে সমীকরণ বদলাবে?
২০ বছর পর রাজ এবং উদ্ধব ঠাকরের একসঙ্গে আসা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের জন্য একটি বড় ইঙ্গিত। গত কয়েক মাস ধরে জল্পনা চলছিল যে দুই ভাইয়ের মধ্যে সম্পর্ক আবার বাড়ছে। মনে করা হচ্ছে, এই যৌথ মঞ্চ ভবিষ্যতে রাজনৈতিক জোটের ভিত্তি স্থাপন করতে পারে, যদিও বর্তমানে উভয়পক্ষই এটিকে সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক হিসেবে বর্ণনা করেছে।
মহারাষ্ট্রে মারাঠি ভাষা এবং সাংস্কৃতিক আত্ম-পরিচয় সবসময়ই একটি নির্বাচনী ইস্যু ছিল। এমতাবস্থায়, ঠাকরে ভাইদের একত্রিত হয়ে এটিকে ‘বিজয় দিবস’ হিসেবে তুলে ধরা রাজ্যের রাজনীতিতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে। উভয়পক্ষের সমর্থকরা এই পুনর্মিলন নিয়ে অত্যন্ত উৎসাহিত এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
কেন ৫ জুলাইয়ের তারিখটি বিশেষ?
৫ জুলাই অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই জনসভাটি কেবল একটি অনুষ্ঠান নয়, বরং একটি প্রতীকে পরিণত হতে চলেছে—মারাঠি স্বাভিমান রক্ষার জন্য ভিন্ন পথে চলা দুই ঠাকরে ভাইয়ের পুনরায় একসঙ্গে আসা। গত ২০ বছরে মহারাষ্ট্র তাঁদের দূরত্ব এবং বিরোধিতা দেখেছে, কিন্তু এখন মারাঠি ভাষার বিষয়টি তাঁদের কাছাকাছি এনে দাঁড় করিয়েছে।