উল্টোরথ উপলক্ষে শনিবার সোনার বাজারে দেখা গেল সামান্য ছন্দ পতন। গত কয়েকদিন ধরে সোনার দামে একনাগাড়ে বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছিল, যা সাধারণ মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছিল। তবে এদিন বাজার খানিকটা শান্ত হওয়ায় অনেকেই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন। সোনা কেনার এই শুভ লগ্নে দাম কম থাকায় বিনিয়োগকারীরা যেমন উৎসাহী, তেমনই সাধারণ ক্রেতারাও উপকৃত হয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, হিন্দু ধর্মের উৎসবের দিনগুলিতে সোনার চাহিদা বাড়ার প্রবণতা দেখা যায়, ফলে দাম কিছুটা বাড়লেও তা অস্বাভাবিক নয়।
প্রতি গ্রামে ১০ টাকা বৃদ্ধিতে এখনও অনেকটাই স্থিতিশীল
যদিও শুক্রবারের তুলনায় শনিবার প্রতি গ্রামে সোনার দাম ১০ টাকা বেড়েছে, তবুও সামগ্রিক বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় এই বৃদ্ধি নিতান্তই স্বাভাবিক। অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, সোনার দামে এই সামান্য ওঠানামা বাজারের স্বাভাবিক চলাচলেরই প্রতিফলন। এটি কোনো আশঙ্কাজনক পরিবর্তন নয়। বরং এখনকার বাজারকে ‘ব্যালান্সড ফেজ’ বলা চলে, যেখানে মুনাফা করতেও পারা যায়, আবার নতুন করে বিনিয়োগের সুযোগও খোলা থাকে।
আজকের সোনার দর: ২২ ও ২৪ ক্যারেটের হালফিলের হিসেব
আজ, ৫ জুলাই শনিবার কলকাতায় ২২ ক্যারেট সোনার প্রতি গ্রামের দাম রয়েছে ৯,০৬০ টাকা, এবং ২৪ ক্যারেটের দাম প্রতি গ্রামে ৯,৮৮৩ টাকা। ১৮ ক্যারেট সোনার দাম রয়েছে ৭,৪১৩ টাকা। এই দাম নির্ভর করে আন্তর্জাতিক বাজার, মুদ্রাবিনিময় হার ও স্থানীয় চাহিদার উপর। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, পুজোর আগে এই দাম আরও বাড়তে পারে।
গতকাল কত ছিল দাম? তুলনাতেই প্রকৃত বাজারের সুর
শুক্রবার ২২ ক্যারেট সোনার দাম ছিল ৯,০৫০ টাকা এবং ২৪ ক্যারেটের ছিল ৯,৮৭৩ টাকা। মাত্র ১০ টাকার পার্থক্য হলেও তা বাজারে চাহিদা ও যোগানের স্পষ্ট প্রতিফলন। স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই সামান্য পার্থক্য অনেক সময়ই বড় সিদ্ধান্তের সূচনা করে দেয়। যেমন, অনেক বড় হোলসেল ক্রেতা এক দিন আগে বা পরে অর্ডার দিতে পারেন শুধুমাত্র এই পার্থক্যের কারণে।
বছরের শুরু থেকে দামে ২৫ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি
২০২৫ সালের শুরু থেকেই সোনার দামে ২৫ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। এটি মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে ডলার দুর্বল হওয়া, যুদ্ধ পরিস্থিতি, এবং নিরাপদ বিনিয়োগ হিসাবে সোনার প্রতি ঝোঁক বাড়ার ফল। এপ্রিল মাসে সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছিল, যার চেয়ে এখন মাত্র ১৭০ ডলার কমে রয়েছে। ফলে এখনও দাম যথেষ্ট উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে এবং এটির ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে দাম ফের রেকর্ড গড়তে পারে।
ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা: বিশ্ব বাজারে সোনার চাহিদা বাড়াচ্ছে
মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, এবং এশিয়ায় নানা রাজনৈতিক অস্থিরতা বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ থেকে সরে এসে সোনা ও রুপোর মতো স্থায়ী সম্পদে বিনিয়োগ করতে উৎসাহী করেছে। বিশেষত আমেরিকা-ভিয়েতনাম বাণিজ্য দ্বন্দ্ব, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত ও চিনের বাজারে ধস সোনার দামে বড় ভূমিকা রাখছে। আন্তর্জাতিক বাজারে এই উত্তেজনাই দাম বাড়ার অন্যতম চালিকা শক্তি।
ট্রাম্পের শুল্ক কৌশল আর তেমন ভয় ধরাতে পারছে না
৯ জুলাইয়ের মার্কিন শুল্ক আরোপের সময়সীমা যত এগিয়ে আসছে, ততই বিনিয়োগকারীরা মার্কিন অর্থনীতির স্থিতিশীলতায় আস্থা রাখছেন। এর ফলে বাজারে আতঙ্ক কমছে এবং সোনা নিয়ে অতিরিক্ত ভীতি আর কাজ করছে না। বরং এখন অনেকেই এই পরিস্থিতিকে ভবিষ্যতের জন্য নিরাপদ বিনিয়োগের সময় হিসাবেই দেখছেন।
এখনই বিনিয়োগের সময়: বাজার বিশ্লেষকদের পরামর্শ
বিশেষজ্ঞদের মতে, যারা দীর্ঘমেয়াদে লাভের কথা ভাবছেন, তাদের জন্য এখনই সোনায় বিনিয়োগের উপযুক্ত সময়। বিশেষত যাঁরা ফিজিক্যাল গোল্ড বা গোল্ড বন্ডে বিনিয়োগে আগ্রহী, তাঁদের জন্য উল্টোরথের এই সময় একটি ‘অপচ্যুনিটি উইন্ডো’। অনেকে আবার উপহার হিসেবেও এই সময় সোনা কিনে থাকেন, তাই ক্রেতার ভিড় বাড়তে শুরু করেছে জুয়েলারি দোকানগুলোতেও।