উত্তরপ্রদেশে নতুন বিজেপি প্রদেশ সভাপতি নির্বাচনে ঐকমত্যের চেষ্টা

উত্তরপ্রদেশে নতুন বিজেপি প্রদেশ সভাপতি নির্বাচনে ঐকমত্যের চেষ্টা

ভারতীয় জনতা পার্টি উত্তরপ্রদেশে তাদের নতুন প্রদেশ সভাপতির নাম চূড়ান্ত করার জন্য ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা জোরদার করছে। শুক্রবার থেকে প্রস্তাবিত রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের অখিল ভারতীয় প্রান্ত প্রচারক বৈঠকের আগেই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চাইছে পার্টি।

লখনউ: উত্তরপ্রদেশে ভারতীয় জনতা পার্টির নতুন প্রদেশ সভাপতি নির্বাচনের জন্য অভ্যন্তরীণ বৈঠক ও আলোচনা চলছে। পার্টির চেষ্টা হল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রস্তাবিত পাঁচ দেশের বিদেশ সফর এবং শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের অখিল ভারতীয় প্রান্ত প্রচারক বৈঠকের আগে নতুন সভাপতির নাম ঘোষণা করা। কিন্তু নাম চূড়ান্ত করার পথ খুব সহজ বলে মনে হচ্ছে না।

আসলে, উত্তরপ্রদেশে বিজেপির কৌশল হল এবার ওবিসি (অন্যান্য পশ্চাদপদ শ্রেণি) এবং দলিত সম্প্রদায়ের সমীকরণকে নিয়ন্ত্রণে আনা। সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনে পার্টি এই দুই শ্রেণিতে প্রত্যাশিত সমর্থন পায়নি। এর কারণে পার্টির ফল অনেক আসনে দুর্বল ছিল। এই কারণেই নতুন প্রদেশ সভাপতির নিয়োগের সময় এই দুটি প্রধান সামাজিক শ্রেণিকে সামলানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

দলিত এবং ওবিসি-তে জটিলতা, নামের দীর্ঘ তালিকা

সূত্র অনুযায়ী, দলিত শ্রেণী থেকে যে নামগুলি নিয়ে আলোচনা চলছে, তাদের মধ্যে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামশঙ্কর কাঠোরিয়া এবং সাংসদ বিদ্যাসাগর সোনকারের নাম প্রধান। কাঠোরিয়া দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনে সক্রিয় রয়েছেন এবং দলিত মুখ হিসেবে তাঁর ভালো প্রভাব রয়েছে। অন্যদিকে, বিদ্যাসাগর সোনকারকেও সংগঠনে নির্ভরযোগ্য মনে করা হয়।

অন্যদিকে, ওবিসি শ্রেণীতে লোধ সম্প্রদায় থেকে আসা উত্তরপ্রদেশ সরকারের মন্ত্রী ধর্মপাল সিং-এর নাম বিশেষভাবে আলোচিত হচ্ছে। এছাড়াও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিএল ভার্মা, সাংসদ বাবুরাম নিষাদ এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতিও আলোচনায় রয়েছেন। পার্টি এই নামগুলি নিয়ে গভীরভাবে বিবেচনা করছে, যাতে সমাজের এই বৃহৎ অংশে একটি ইতিবাচক বার্তা দেওয়া যায়।

ব্রাহ্মণ মুখ নিয়েও নজর

যদিও পার্টি সম্পূর্ণরূপে ওবিসি বা দলিত শ্রেণীর উপর বাজি ধরবে, এমনটা নাও হতে পারে। ব্রাহ্মণ সমাজের ভারসাম্য রক্ষার বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে। এই সূত্রে প্রাক্তন সাংসদ এবং আসামের ভারপ্রাপ্ত হরিশ দ্বিবেদীর নাম আলোচনায় রয়েছে। ব্রাহ্মণ ভোটারদের মধ্যে তাঁর প্রভাব রয়েছে এবং সাংগঠনিক ক্ষমতা নিয়েও তিনি একজন শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন।

জানা যাচ্ছে, সংঘ এবং পার্টির মধ্যে নতুন প্রদেশ সভাপতি নির্বাচন নিয়ে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে, কিন্তু এখনো চূড়ান্ত সম্মতি তৈরি হয়নি। আসলে সংঘ চায় যে সভাপতি এমন একজন মুখ হোক যিনি সংগঠন এবং সরকারের মধ্যে সমন্বয় বজায় রাখতে পারেন, সেই সঙ্গে তৃণমূল কর্মীদেরও উৎসাহিত করতে পারেন। এই কারণে সমস্ত নামের মূল্যায়ন খুব সতর্কতার সঙ্গে করা হচ্ছে।

কেন উত্তরপ্রদেশে ভারসাম্য জরুরি?

উত্তরপ্রদেশ বিজেপি-র জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ কেন্দ্রের ক্ষমতার পথ এখান থেকেই যায়। লোকসভা নির্বাচনে পার্টি ওবিসি এবং দলিত ভোটের কিছু অংশে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা সংগঠনে উদ্বেগের কারণ। এই কারণে নতুন প্রদেশ সভাপতির মাধ্যমে পার্টি এই গোষ্ঠীগুলিকে পুনরায় একত্রিত করতে চাইছে, যাতে আসন্ন বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচনে কোনও ঝুঁকি না থাকে।

পার্টি সূত্রে খবর, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিদেশ সফরের সময়সূচী বিবেচনা করে সম্ভবত এই সপ্তাহেই সভাপতির পদ চূড়ান্ত করা হবে। এর পরে সংঘের অখিল ভারতীয় প্রান্ত প্রচারক বৈঠকে নতুন রাজ্য নেতৃত্বের কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হবে।

Leave a comment