উত্তরপ্রদেশের ফতেপুর জেলায় ২০০ বছর পুরোনো নবাব আবদুল সামাদের মাজার নিয়ে বিতর্ক আরও তীব্র হয়েছে। আবুনগর রেডাইয়া এলাকায় এই মাজারের কাছে বজরং দল সহ একাধিক হিন্দু সংগঠনের লোকজন জড়ো হয়েছে।
লখনউ: উত্তরপ্রদেশের ফতেপুর জেলায় ২০০ বছর পুরোনো নবাব আবদুল সামাদের মাজার নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। মাজারটিকে হিন্দু সংগঠনগুলো ঠাকুর জীর মন্দির বলে দাবি করছে, যেখানে স্থানীয় প্রশাসন ও মুসলিম সম্প্রদায় এটিকে ঐতিহাসিক মাজার মনে করে। এই ঘটনায় এলাকার পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে এবং পূজা করা নিয়ে উভয় সম্প্রদায় মুখোমুখি অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে।
মাজার নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত কিভাবে?
ফতেপুরের আবুনগর রেডইয়া মহল্লায় অবস্থিত নবাব আবদুল সামাদের এই মাজারটি প্রায় ২০০ বছর পুরোনো। গত কয়েকদিন ধরে হিন্দু সংগঠনগুলো এই স্থানকে শিব ও শ্রীকৃষ্ণের মন্দির আখ্যা দিয়ে পূজা-অর্চনা করার দাবি তুলেছে। তাদের দাবি, এই স্থানে আগে মন্দির ছিল, যা পরে ভেঙে মাজার তৈরি করা হয়েছে। বিজেপি জেলা সভাপতি সহ বজরং দল ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) ১১ই আগস্ট এখানে পূজা করার হুমকি দিয়েছিল।
প্রশাসন এই হুমকির পর মাজারের আশেপাশে ব্যারিকেড লাগিয়ে মানুষের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্তু হিন্দু সংগঠনের সদস্যরা ব্যারিকেড ভেঙে দেয় এবং পূজার জন্য জড়ো হতে শুরু করে, যার ফলে পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে।
প্রশাসন ও পুলিশের কড়া নজরদারির পরেও বাড়ল উত্তেজনা
মাজারের কাছে হিন্দু সংগঠনগুলোর জমায়েতের কারণে জেলা প্রশাসন সম্পূর্ণ সতর্কতা অবলম্বন করেছে। পুলিশ ও পিএসি-র বিশাল বাহিনী মোতায়েন করে প্রতিটি রাস্তা ও মোড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বজায় রয়েছে। হিন্দু সংগঠনগুলোর বক্তব্য, মাজারের দেওয়ালে পদ্মফুল ও ত্রিশূলের মতো ধর্মীয় চিহ্ন পাওয়া গেছে, যা এটিকে মন্দির হওয়ার প্রমাণ দেয়।
অন্যদিকে, মুসলিম সংগঠনগুলো এই দাবিকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে এবং এটিকে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত হানার চেষ্টা বলছে। তারা বলেছে, সরকার মসজিদগুলোর ভেতরে মন্দির খোঁজার চেষ্টা করছে, যা বিতর্ককে আরও বাড়িয়ে তুলছে।
বিবাদের সামাজিক ও ধর্মীয় দিক
এই বিবাদ ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার একটি বড় উদাহরণ, যেখানে ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভ নিয়ে দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে মতভেদ আরও গভীর হচ্ছে। এই ঘটনা ধর্মীয় স্বাধীনতা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রাখার চ্যালেঞ্জকে তুলে ধরে। স্থানীয় প্রশাসন শান্তি বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে, কিন্তু সব পক্ষ সংযম না দেখালে এই ধরনের বিবাদ ভবিষ্যতে আরও তীব্র হতে পারে।
ভারতে ধর্মীয় স্থান নিয়ে বিতর্ক নতুন কিছু নয়। প্রায়শই ঐতিহাসিক মাজার বা মন্দির নিয়ে ধর্মীয় সংগঠনগুলোর মধ্যে বিবাদ হয়ে থাকে। এই ধরনের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন, বিচার বিভাগ এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে সহিংসতা ও সামাজিক অস্থিরতা এড়ানো যায়।