বিপ্লবীদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ তকমা বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস প্রশ্নপত্র ঘিরে তুঙ্গে বিতর্ক!

বিপ্লবীদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ তকমা বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস প্রশ্নপত্র ঘিরে তুঙ্গে বিতর্ক!
সর্বশেষ আপডেট: 30-11--0001

স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর যোদ্ধারা কি আজও প্রশ্নবিদ্ধ? ষষ্ঠ সেমিস্টারের ইতিহাস পরীক্ষায় মেদিনীপুরের তিন জেলাশাসকের হত্যাকারীদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করায় তোলপাড় রাজ্যের শিক্ষা মহল। প্রশ্ন উঠছে, ইতিহাসের শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে এই অপমানজনক ট্যাগ চাপিয়ে দেওয়া হলো কোন উদ্দেশ্যে?

বিপ্লবীদের নাম নিতে গিয়ে অপমান, প্রশ্নে সরাসরি লেখা ‘সন্ত্রাসবাদীদের হাতে নিহত’!

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নে লেখা, মেদিনীপুরের তিনজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এর নাম কর, যারা সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা নিহত হন। এই শব্দচয়নেই যেন রক্তক্ষরণ ইতিহাস সচেতন সমাজে। তীব্র নিন্দার ঝড় ওঠে শিক্ষামহলে। বিক্ষোভ ছড়ায় নানা মহাবিদ্যালয়ে।

জেমস পেডি হত্যায় ইতিহাসের গর্ব, প্রশ্নপত্রে অপমানের ছায়া

ব্রিটিশ জেলাশাসক জেমস পেডি—যার বিরুদ্ধে লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলন দমন, ভারতীয়দের উপর নিষ্ঠুর অত্যাচারের অভিযোগ ছিল—তাঁকেই পরাস্ত করেছিলেন বিপ্লবী বিমল দাশগুপ্ত ও জ্যোতিজীবন ঘোষ। ১৯৩১ সালের ৭ এপ্রিল কাঁপে মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুল। আজ তাঁকেই হত্যা ‘সন্ত্রাসবাদী’ কার্যকলাপ?

ডগলাস হত্যাকাণ্ড—হিজলি জেলের জুলুমের জবাব ছিল বিপ্লবীদের গর্জন

১৯৩১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর হিজলি জেলে ঘটে রাতের ভয়াবহ গুলি বর্ষণ, শহিদ হন সন্তোষ মিত্র, তারকেশ্বর সেনগুপ্ত। প্রতিবাদে উত্তাল হয় কলকাতা, রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত রুখে দাঁড়ান। ১৯৩২ সালের এপ্রিল মাসে ডগলাস খতম হন বিপ্লবী প্রদ্যোৎ ভট্টাচার্যের হাতে। আজ সেই ঘটনাকে চিহ্নিত করা হচ্ছে 'সন্ত্রাসবাদ' হিসেবে?

বার্জের মৃত্যু: ফুটবল মাঠে বিপ্লবের প্রতিশোধ

১৯৩২ সালের ২ সেপ্টেম্বর, পুলিশ লাইনে ফুটবল খেলার উদ্বোধন করতে আসেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বার্জ। সেদিন মৃগেন দত্ত ও রামকৃষ্ণ রায়দের গুলিতে তাঁর মৃত্যু ঘটে। দেশের স্বাধীনতার লড়াইয়ে এই ঘটনাও এক অনন্য অধ্যায়। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্রে তাঁদের রক্তের দাম শুধুই ‘সন্ত্রাস’?

তীব্র সমালোচনায় বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়, তদন্ত কমিটির গঠন

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জয়ন্ত কিশোর নন্দী জানান, প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে এটি ছাপার ভুল। উপাচার্য বিষয়টি জানতে পেরেই তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। কন্ট্রোলার অফ এক্সামিনেশনের কাছে বৃহস্পতিবারের মধ্যে রিপোর্ট তলব করা হয়েছে।

ইতিহাসবিদদের কণ্ঠে বিষাদ—‘বীরদের অপমান ইতিহাস বিকৃতি ছাড়া কিছু নয়’

গৌরব গুইন মহাবিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক আকবর আলি শাহ ক্ষোভপ্রকাশ করে বলেন, একদিকে ভুলে ভরা প্রশ্নপত্র, তার উপর বীর সন্তানদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ আখ্যা! লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে। একই সুর ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারীর গলাতেও— ইংরেজ আমল নয়, আজকের স্বাধীন ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ভুল ভয়ানক। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে শিক্ষাঙ্গনে বিষ ছড়াবে।

Leave a comment