ভারতে ৭০-৯০% মানুষ ভিটামিন ডি-এর অভাবে ভুগছেন, যার লক্ষণগুলির মধ্যে থাকতে পারে ক্লান্তি, হাড় ও দাঁতে ব্যথা, ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া, অবসাদ এবং চুল পড়া। সূর্যের আলো এর প্রধান উৎস, তবে ডিম, স্যামন মাছ, গরুর দুধ, দই এবং কমলার রসও ভিটামিন ডি-এর অভাব পূরণে সাহায্য করে।
ভিটামিন ডি-এর অভাবের লক্ষণ: ভিটামিন ডি-এর অভাব ভারতে একটি সাধারণ সমস্যা, যা হাড়, পেশী এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে সূর্যের আলো না পাওয়া বা সুষম খাদ্য না গ্রহণ করলে ক্লান্তি, হাড় ও পিঠে ব্যথা, ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া এবং মেজাজ খারাপ হওয়ার মতো লক্ষণগুলি দেখা দিতে পারে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান যে সূর্যের আলো ছাড়াও ডিমের কুসুম, স্যামন মাছ, গরুর দুধ, দই এবং কমলার রস শরীরের ভিটামিন ডি-এর চাহিদা পূরণ করতে পারে।
ভারতে কেন ভিটামিন ডি-এর অভাব সাধারণ
একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতের প্রায় ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ মানুষ ভিটামিন ডি-এর অভাব দ্বারা প্রভাবিত। অনেক মানুষ সূর্যের আলো থেকে দূরে থাকেন বা বাইরে বের হলে সানস্ক্রিন বেশি ব্যবহার করেন, যার ফলে শরীর পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পায় না। এছাড়াও, খাদ্যাভ্যাস এই অভাবের একটি বড় কারণ।
ভিটামিন ডি-এর অভাবের লক্ষণ
- সব সময় ক্লান্তি
ভিটামিন ডি-এর অভাবের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হলো ক্রমাগত ক্লান্তি। যদি পর্যাপ্ত ঘুম এবং সুষম খাবার খাওয়ার পরেও শরীর ক্লান্ত বোধ করে, তবে এটি শরীরে ভিটামিন ডি-এর অভাবের লক্ষণ হতে পারে।
- হাড় ও পিঠে ব্যথা
শরীরে ক্যালসিয়াম সঠিকভাবে শোষণ করার জন্য ভিটামিন ডি অপরিহার্য। এর অভাবে ক্যালসিয়াম হাড় পর্যন্ত পৌঁছায় না এবং ফলস্বরূপ হাড় ও পিঠে ব্যথা লেগেই থাকে। অনেক সময় মানুষ এটিকে বার্ধক্য বা দুর্বলতা ভেবে উপেক্ষা করে, যদিও এটি ভিটামিন ডি-এর অভাবের একটি স্পষ্ট লক্ষণ হতে পারে।
- ক্ষত ও আঘাত সহজে না শুকানো
যদি শরীরের কোনো ধরনের আঘাত বা ক্ষত শুকাতে দেরি হয়, তবে এটিও ভিটামিন ডি-এর অভাবের একটি লক্ষণ হতে পারে। এই পুষ্টি উপাদানের অভাবে শরীরে প্রদাহ এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা কমে যায়।
- অবসাদ ও মেজাজ খারাপ থাকা
কম ভিটামিন ডি মস্তিষ্কের উপরও প্রভাব ফেলে। অনেকেই অবসাদ, উদ্বেগ বা ঘন ঘন মেজাজ খারাপ হওয়ার সমস্যায় ভোগেন। বিশেষ করে যারা কম সূর্যের আলো পান, তাদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। সকালে হালকা রোদে কিছু সময় কাটানো মেজাজ উন্নত করতে সাহায্য করে।
- চুল পড়া
ভিটামিন ডি-এর অভাব চুলের উপরও প্রভাব ফেলে। অতিরিক্ত চুল পড়া বা টাক পড়ার সমস্যা শুধুমাত্র পণ্যের কারণে হয় না, এটি ভিটামিন ডি-এর অভাবের সাথেও যুক্ত হতে পারে। এই পুষ্টি উপাদান চুলের ফলিকল বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ভিটামিন ডি-এর অভাব পূরণকারী খাবার
- ডিম
ডিম প্রোটিন এবং ভিটামিনের একটি ভালো উৎস। বিশেষ করে ডিমের কুসুমে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। প্রতিদিন একটি ডিম খেলে শরীর প্রায় ৫ শতাংশ ভিটামিন ডি পেতে পারে।
- স্যামন মাছ
স্যামন মাছ নিরামিষভোজী নয় এমন মানুষদের জন্য ভিটামিন ডি-এর একটি চমৎকার উৎস। ১০০ গ্রাম স্যামন মাছ খেলে প্রায় ৬৬ শতাংশ ভিটামিন ডি পাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও এতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডও প্রচুর পরিমাণে থাকে।
- কমলার রস
কমলার রস ভিটামিন সি-এর পাশাপাশি ভিটামিন ডি-এরও একটি ভালো উৎস। নিয়মিত তাজা কমলার রস পান করলে শরীরে ভিটামিন ডি-এর অভাব দূর করা যেতে পারে। প্যাকেটজাত রসের পরিবর্তে বাড়িতে তৈরি তাজা রস পান করার চেষ্টা করুন।
- গরুর দুধ
দুধে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি উভয়ই থাকে। বিশেষ করে গরুর দুধ পান করলে শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি পায়। ফুল ক্রিম দুধ সেবন করলে ভালো হয়, যাতে পুষ্টি উপাদানগুলি সম্পূর্ণভাবে পাওয়া যায়।
- দই
যদি আপনি দুধ পছন্দ না করেন তবে দই খেতে পারেন। দইয়েও ভিটামিন ডি উপস্থিত থাকে। এটি প্রতিদিন খেলে শরীর উপকৃত হয়। আপনি এটিকে লস্যি বা ছাঁচ হিসাবেও আপনার খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
- সূর্যের আলোও অপরিহার্য
খাবারের পাশাপাশি সূর্যের আলো ভিটামিন ডি-এর সবচেয়ে সহজ এবং প্রাকৃতিক উৎস। সকালে হালকা রোদে প্রতিদিন কিছু সময় কাটালে শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি পেতে পারে।