শুধু শিশু নয়, মায়ের জন্যও স্তন্যপান অত্যন্ত উপকারী। এটি প্রসবের পরে জরায়ুকে স্বাভাবিক করতে, রক্তপাত কমাতে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও স্তন ক্যান্সার, ডিম্বাশয় ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়। স্তন্যপান মা ও শিশুর মধ্যে আবেগপূর্ণ বন্ধনকেও শক্তিশালী করে।
Breastfeeding: আর্টেমিস হাসপাতালের ডাঃ নিধি রাজোতিয়ার মতে, স্তন্যপান মা ও শিশু উভয়ের জন্যই স্বাস্থ্যকর। প্রসবের পর দুধ পান করালে অক্সিটোসিন হরমোন নিঃসৃত হয়, যা জরায়ুকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনে এবং রক্তপাত কমায়। এর ফলে মায়ের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ক্লান্তি, অ্যানিমিয়ার মতো সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্তন্যপান স্তন ক্যান্সার, ডিম্বাশয় ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়। এছাড়াও প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতাতেও (Postpartum depression) আরাম দেয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এটি মা ও শিশুর মধ্যে একটি শক্তিশালী বন্ধন তৈরি করে।
শরীরকে দ্রুত স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে
ডেলিভারির পরে মহিলাদের শরীর দুর্বল হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে যখন মা শিশুকে দুধ পান করান, তখন শরীর থেকে অক্সিটোসিন হরমোনের নিঃসরণ বাড়ে। এই হরমোন জরায়ুকে সঙ্কুচিত করতে সাহায্য করে, যার ফলে জরায়ু দ্রুত তার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। এছাড়াও স্তন্যপান প্রসবের পরে অতিরিক্ত রক্তপাত কমাতেও সহায়ক। রক্তাল্পতা এবং অ্যানিমিয়ার ঝুঁকি কমে, ফলে দুর্বলতা ও ক্লান্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
ওজন কমাতে সহায়ক
মহিলারা প্রায়শই অভিযোগ করেন যে ডেলিভারির পরে তাদের ওজন বেড়ে গেছে। কিন্তু যদি তারা শিশুকে স্তন্যপান করান, তাহলে অতিরিক্ত ক্যালোরি খরচ হয়। এই প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে ওজন কমাতে সাহায্য করে। কোনো অতিরিক্ত পরিশ্রম বা ডায়েটিং ছাড়াই স্তন্যপান শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক।
রোগ থেকে সুরক্ষা
যে মহিলারা স্তন্যপান করান, তাঁদের মধ্যে অনেক গুরুতর রোগের ঝুঁকি কমে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে যে দুধ পান করালে স্তন ক্যান্সার এবং ডিম্বাশয় ক্যান্সারের সম্ভাবনা হ্রাস পায়। এছাড়াও টাইপ টু ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যার ঝুঁকিও কম হয়।
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি
ডেলিভারির পরে অনেক মহিলাই প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতায় ভোগেন। এমন পরিস্থিতিতে স্তন্যপান সহায়ক হতে পারে। দুধ পান করালে শরীরে প্রোল্যাকটিন হরমোন নিঃসৃত হয়, যা মাকে শান্তি ও আরামের অনুভূতি দেয়। এটি মাকে মানসিক চাপ এবং বিষণ্ণতা থেকে মুক্তি দিতে সহায়ক।
হাড়কে মজবুত করে
গর্ভাবস্থা এবং স্তন্যপান করানোর সময় শরীর থেকে খনিজ পদার্থের ঘাটতি হয়। কিন্তু স্তন্যপান করানোর পরে শরীর ধীরে ধীরে নিজেই এর পূরণ করে নেয়। এই কারণে দুধ পান করানো মহিলাদের মধ্যে অস্টিওপোরোসিস অর্থাৎ হাড় দুর্বল হওয়ার সমস্যার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
পরবর্তী গর্ভাবস্থায় ব্যবধান
ডেলিভারির পরে মাসিক শুরু হতে স্তন্যপান বিলম্ব ঘটায়। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই পরবর্তী গর্ভধারণের মধ্যে একটি স্বাস্থ্যকর ব্যবধান তৈরি হয়। এটি কেবল মায়ের স্বাস্থ্যের জন্যই ভালো নয়, বরং আগত সন্তানের বিকাশের জন্যও উপকারী।