বিবেক ওবেরয়: অভিনয় ও সমাজসেবায় এক অসামান্য যাত্রা

বিবেক ওবেরয়: অভিনয় ও সমাজসেবায় এক অসামান্য যাত্রা

৩ সেপ্টেম্বর দিনটি বলিউড অভিনেতা বিবেক ওবেরয়ের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ১৯৭৬ সালে হায়দ্রাবাদে জন্মগ্রহণকারী বিবেক ২০০২ সালে তাঁর অভিনয় জীবন শুরু করেন। বর্তমানে তিনি বলিউডের সেই অল্প সংখ্যক অভিনেতাদের একজন, যাঁরা রোম্যান্স, অ্যাকশন, কমেডি এবং খলনায়ক – সব ধরনের ভূমিকাতেই সাফল্য লাভ করেছেন। তাঁর অভিনয় এবং সামাজিক অবদান তাঁকে কেবল চলচ্চিত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেনি, বরং সমাজে একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করেছে।

বিবেক ওবেরয়ের জন্ম ও শিক্ষা

বিবেক ওবেরয়ের বাবা সুরেশ ওবেরয় ও মা যশোমিত্রা ওবেরয়ের কোল আলো করে তাঁর জন্ম। তাঁর বাবা সুরেশ ওবেরয় একজন সুপরিচিত অভিনেতা এবং তাঁর মা যশোমিত্রা একটি ব্যবসায়ী পরিবারের সদস্য। ছোটবেলা থেকেই চলচ্চিত্রের প্রতি ও অভিনয়ের প্রতি বিবেকের গভীর আগ্রহ ছিল। তিনি তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা আজমীরের মায়ো কলেজ এবং মুম্বইয়ের মিথিবাই কলেজ থেকে সম্পন্ন করেন।

শিল্পকলা ও অভিনয়ের প্রতি তাঁর আগ্রহ দেখে তাঁকে লন্ডনে একটি অ্যাক্টরস ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচন করা হয়। সেখানে নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পরিচালক তাঁকে ফিল্ম অভিনয়ে মাস্টার ডিগ্রি অর্জনের জন্য নিউ ইয়র্কে আমন্ত্রণ জানান। এই প্রশিক্ষণ তাঁর অভিনয় দক্ষতাকে আরও শাণিত করে এবং বলিউডে একটি অসাধারণ শুরুর সুযোগ করে দেয়।

চলচ্চিত্র জীবন শুরু

বিবেক ওবেরয় রাম গোপাল ভার্মার ক্রাইম ফিল্ম "কোম্পানি" দিয়ে তাঁর অভিনয় জীবন শুরু করেন। এই ছবিটি কেবল বাণিজ্যিকভাবেই সফল হয়নি, বরং সমালোচকদেরও ভূয়সী প্রশংসা লাভ করে। এই ছবির জন্য তিনি সেরা পুরুষ নবাগত এবং সেরা পার্শ্ব চরিত্রের অভিনেতার জন্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কারে ভূষিত হন। একই বছর তিনি রোমান্টিক ড্রামা "সাথিয়া"-তেও অভিনয় করেন, যা বক্স অফিসে হিট হয় এবং তাঁকে সেরা অভিনেতার জন্য ফিল্মফেয়ার মনোনয়ন এনে দেয়।

বিবেক ওবেরয়ের কর্মজীবনের উচ্চতা

২০০৪ সালে তিনি "মাস্তি" এবং "যুব"-এর মতো ছবিতে অভিনয় করেন, যা সমালোচক এবং দর্শক উভয় মহলেই সমাদৃত হয়। ২০০৫ সালে তিনি "কিষাণা: দ্য ওয়ারিয়র পোয়েট"-এ প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। ২০০৬ সালে বিবেক ওবেরয় "ওমকারা"-তে কেশু চরিত্রে অভিনয় করেন, যা শেক্সপিয়ারের ওথেলো-র উপর ভিত্তি করে নির্মিত ছিল। তাঁর এই অভিনয় গুলজার এবং অন্যান্য চলচ্চিত্র নির্মাতাদের দ্বারা প্রশংসিত হয়েছিল।

২০০৭ সালে তিনি "শুট আউট অ্যাট লোখান্ডওয়ালা"-তে মায়া ডোলাসের চরিত্রে অভিনয় করেন এবং সেরা খলনায়কের জন্য মনোনীত হন। ২০০৯ সালে "কুরবান"-এর মতো ছবিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, যা সমালোচকদের প্রশংসা পেলেও বক্স অফিসে ফ্লপ হয়।

দক্ষিণী চলচ্চিত্রে খলনায়কের ভূমিকায়

২০১৩ সালে বিবেক "গ্র্যান্ড মাস্তি" এবং "কৃষ ৩"-এর মতো ছবি থেকে পুনরায় বাণিজ্যিক সাফল্য লাভ করেন। তিনি দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতেও খলনায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন, যেমন - विवेগম (২০১৭), লুসিফার (২০১৯), বিনয়া বিধেয়া রামা (২০১৯) এবং কাড়ুয়া (২০২২)। এই ছবিগুলিতে তাঁর খলনায়কের চরিত্রটি সমালোচক এবং দর্শক উভয় মহলেই প্রশংসিত হয়েছিল।

বিবেক ওবেরয়ের ব্যক্তিগত জীবন

বিবেক ওবেরয়ের পুরো নাম বিবেকানন্দ ওবেরয়, যা স্বামী বিবেকানন্দের নামে রাখা হয়েছে। তিনি ২০১০ সালের ২৯শে অক্টোবর প্রিয়াঙ্কা আলভাকে বিয়ে করেন এবং এই দম্পতির দুটি সন্তান রয়েছে। বিবেক নিরামিষভোজী এবং তাঁর অনুপ্রেরণা ছিলেন কারিনা কাপুর।

সামাজিক অবদান ও দাতব্য কাজ

বিবেক ওবেরয়ের অবদান কেবল চলচ্চিত্রেই সীমাবদ্ধ নয়। তিনি তাঁর সংগঠন Karrm Infrastructure Pvt Ltd.-এর মাধ্যমে সিআরপিএফ-এর শহীদ জওয়ানদের পরিবারের জন্য ফ্ল্যাট দান করেছেন। এছাড়াও তিনি অক্সিজেন সিলিন্ডার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং দুর্যোগ ত্রাণ সহ বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোগে অবদান রেখেছেন।

তাঁর "প্রজেক্ট দেবী"-এর অধীনে, তিনি হাজার হাজার মেয়েকে বাল্যশ্রম ও দারিদ্র্য থেকে বাঁচিয়েছেন এবং তাদের শিক্ষা ও আত্মনির্ভরশীল হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। বিবেক ওবেরয় তাঁর মানবিক অবদানের জন্য ফোর্বস কর্তৃক স্বীকৃত একমাত্র ভারতীয় অভিনেতা।

পুরস্কার ও সম্মান

বিবেক ওবেরয় তাঁর অভিনয় এবং সামাজিক কাজের জন্য একাধিক পুরস্কার লাভ করেছেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:

  • ফিল্মফেয়ার – সেরা পুরুষ নবাগত (কোম্পানি)
  • ফিল্মফেয়ার – সেরা পার্শ্ব চরিত্রাভিনেতা (কোম্পানি)
  • আইআইএফএ – সেরা খলনায়ক (শুট আউট অ্যাট লোখান্ডওয়ালা)
  • এশিয়ানেট ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডস – সেরা নেগেটিভ রোল (লুসিফার)
  • স্টারডাস্ট অ্যাওয়ার্ডস – সুপারস্টার অফ টুমোরো (সাথিয়া)

বিবেক ওবেরয়ের জন্মদিন কেবল তাঁর অভিনয় প্রতিভার উদযাপন নয়, বরং তাঁর সমাজসেবা এবং মানবিক অবদানেরও স্মরণ করিয়ে দেয়। তিনি চলচ্চিত্র এবং সামাজিক উভয় ক্ষেত্রেই নিজের এক স্বতন্ত্র পরিচিতি তৈরি করেছেন এবং তাঁর এই যাত্রা আমাদের এই অনুপ্রেরণা দেয় যে, সাফল্য কেবল খ্যাতি অর্জন নয়, বরং সমাজের জন্য কিছু অবদান রাখাও বটে।

Leave a comment