পশ্চিমবঙ্গে ডেঙ্গি: পুজোর পর রাজ্যজুড়ে ডেঙ্গির প্রভাব বাড়তে থাকায় প্রশাসনের কপালে ভাঁজ পড়েছে। মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ সোমবার ভার্চুয়াল বৈঠকে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ও জেলাশাসকদের সঙ্গে আলোচনা করেন। বৈঠকে জানা যায়, বহু কেন্দ্রীয় সরকারি অফিস ও বন্ধ ভবনে জল জমে রয়েছে। এই অজুহাতে বছরের পর বছর ডেঙ্গির সংক্রমণ বাড়ছে— এমন দাবি শুনেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যসচিব। তাঁর বার্তা, “সমস্যা শুধু চিহ্নিত নয়, সমাধানই এখন অগ্রাধিকার।
বন্ধ ভবনে জল জমলেই বাড়ছে ডেঙ্গি, সতর্ক নবান্ন
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা কেন্দ্রীয় সরকারি দপ্তর ও আবাসিক ভবনে জল জমে রয়েছে, যার ফলে ডেঙ্গির প্রজননক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে— বৈঠকে এমন তথ্য তুলে ধরেন একাধিক জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক। মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ জানান, এই অজুহাতের সময় শেষ। কেন্দ্রীয় দপ্তরের সঙ্গে দ্রুত সমন্বয় করে মশা নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ নিতে হবে।
আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়াল ৯,৮২০, শীর্ষে মুর্শিদাবাদ
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৯,৮২০ জন। এর মধ্যে মুর্শিদাবাদ শীর্ষে, এরপর উত্তর ২৪ পরগনা, হুগলি, কলকাতা ও মালদা। স্বাস্থ্য ভবনের আশঙ্কা— পুজোর পরেও কয়েকদিন হালকা বৃষ্টির কারণে মশার বিস্তার আরও বাড়তে পারে।
স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশ: মাইক্রো-প্ল্যান, ড্রোনে নজরদারি
বৈঠকের পরেই নবান্ন থেকে সব জেলাকে বিশেষ নির্দেশিকা পাঠানো হয়। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, নভেম্বর পর্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। প্রতিটি জেলায় জল জমার জায়গা চিহ্নিত করে মাইক্রো-প্ল্যান তৈরি করতে হবে। প্রয়োজনে ড্রোনের সাহায্যে ফাঁকা জমি বা বন্ধ ভবনে জল জমার ছবি সংগ্রহের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা: আরও এক মাস উচ্চ ঝুঁকি
পতঙ্গবিদ গৌতম চন্দ্র জানান, “এ বছর পুজোর পরেও কয়েক দিন টানা বৃষ্টি হয়েছে। বাতাসে আর্দ্রতাও কমেনি। ফলে আগামী অন্তত এক মাস সতর্ক থাকা জরুরি।” স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, বর্তমানে আক্রান্তদের প্রায় ৮০ শতাংশের বাড়িতেই ফ্রিজের ট্রে বা ফুলের টবে জল জমে ছিল।
সচেতনতাই একমাত্র প্রতিরোধের পথ
স্বাস্থ্য ভবনের আধিকারিকদের মতে, সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি নাগরিক সচেতনতাও জরুরি। প্রতিটি পরিবারকে নিজের বাড়ি ও আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। পুরসভাগুলিকে জল নিষ্কাশন ব্যবস্থায় জোর দিতে বলা হয়েছে। ডেঙ্গির চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলিকেও প্রস্তুত রাখা হচ্ছে।
রাজ্যে ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্তে নবান্নে চিন্তার মেঘ। মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ জেলাশাসক ও মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে নজরদারির ঘাটতি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। কেন্দ্রীয় দপ্তরগুলিতে জল জমে থাকা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।