ভারত ও মঙ্গোলিয়ার সম্পর্ক পারস্পরিক সংস্কৃতি এবং আধ্যাত্মিক যোগসূত্রের উপর নির্ভরশীল। রাষ্ট্রপতি মুর্মু বলেছেন যে উভয় দেশ এখন কৌশলগত অংশীদারিত্বকে এক নতুন যুগে নিয়ে যাচ্ছে, যা উন্নয়ন ও সহযোগিতার নতুন সুযোগ উন্মোচন করবে।
New Delhi: ভারত ও মঙ্গোলিয়ার মধ্যে সম্পর্ক বরাবরই গভীর সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক বন্ধনের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এখন এই সম্পর্ক নতুন যুগে প্রবেশ করছে। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি ভবনে মঙ্গোলিয়ার রাষ্ট্রপতি খুরেলসুখ উখনা এবং তাঁর প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন যে উভয় দেশের সম্পর্ক সহযোগিতার সমসাময়িক মাত্রাগুলির সাথে আরও বিস্তৃত হতে চলেছে। তিনি জোর দিয়েছিলেন যে ভারত ও মঙ্গোলিয়া কেবল কৌশলগত অংশীদার (strategic partners) নয়, বরং একে অপরের আধ্যাত্মিক প্রতিবেশী (spiritual neighbours)ও বটে।
যৌথ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাথে যুক্ত শক্তিশালী সম্পর্ক
রাষ্ট্রপতি মুর্মু বলেছেন যে ভারত ও মঙ্গোলিয়ার সম্পর্ক শুধু রাজনৈতিক বা কৌশলগত নয়, বরং যৌথ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের উপর নির্ভরশীল। তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে বৌদ্ধধর্ম উভয় দেশের মধ্যে একটি গভীর আধ্যাত্মিক যোগসূত্র তৈরি করেছে, যা আজও উভয় সমাজকে সংযুক্ত করে। ভারত গত 25 বছরে মঙ্গোলিয়ায় বেশ কয়েকটি সাংস্কৃতিক প্রকল্প শুরু করেছে, যার মধ্যে বৌদ্ধ মঠগুলির সংস্কার এবং প্রাচীন পাণ্ডুলিপিগুলির পুনঃমুদ্রণের মতো উদ্যোগগুলি অন্তর্ভুক্ত।
মুর্মু বিশ্বাস প্রকাশ করেছেন যে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান (cultural exchange) কর্মসূচির উপর নতুন চুক্তি স্মারক উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে। এই চুক্তি কেবল শিল্পী ও পণ্ডিতদের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াবে না, বরং মানুষের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সম্মানকেও মজবুত করবে।
70 বছরের বন্ধুত্বে নতুন অধ্যায়
এই বছর ভারত ও মঙ্গোলিয়া তাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের 70তম বার্ষিকী উদযাপন করছে। এই সফর উভয় দেশের সম্পর্কে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত নিয়ে এসেছে। রাষ্ট্রপতি মুর্মু বলেছেন যে ভারত মঙ্গোলিয়ার সাথে তার সম্পর্ককে কেবল বজায় রাখতে চায় না, বরং সেগুলিকে আরও গভীর করতেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি বলেছেন যে “ভারত মঙ্গোলিয়ার সাথে উন্নয়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধি (capacity building) অংশীদারিত্বকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়। আমরা এটি নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে উভয় দেশের মধ্যে চলমান প্রকল্পগুলি সময়মতো সম্পন্ন হয় এবং এই প্রকল্পগুলি ভারত-মঙ্গোলিয়া বন্ধুত্বের স্থায়ী প্রতীক হয়ে ওঠে।”
কৌশলগত অংশীদারিত্ব এবং উন্নয়নের নতুন পর্যায়
ভারত ও মঙ্গোলিয়ার মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব (strategic partnership) কেবল আনুষ্ঠানিক নয়, বরং সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং প্রযুক্তিগত সহযোগিতার উপর ভিত্তি করে গঠিত। ভারত মঙ্গোলিয়ায় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে, যার মধ্যে অবকাঠামো, শিক্ষা এবং শক্তি ক্ষেত্র প্রধান।
রাষ্ট্রপতি মুর্মু বলেছেন যে ভারত গ্লোবাল সাউথের (Global South) অংশ হিসাবে মঙ্গোলিয়ার সাথে বহুপাক্ষিক ফোরামগুলিতে, বিশেষ করে জাতিসংঘে (United Nations) সহযোগিতাকে গুরুত্ব দেয়। তিনি এই বিষয়টির প্রশংসা করেছেন যে উভয় দেশ আন্তর্জাতিক স্তরে একই ধরনের আদর্শ পোষণ করে এবং বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করছে।
আধ্যাত্মিক প্রতিবেশী: ভারত-মঙ্গোলিয়ার অনন্য সম্পর্ক
ভারত ও মঙ্গোলিয়াকে আধ্যাত্মিক প্রতিবেশী (spiritual neighbours) বলা হয়, কারণ উভয় দেশের মধ্যে বৌদ্ধ ধর্মের যৌথ ঐতিহ্য শত শত বছরের পুরনো। এই আধ্যাত্মিক যোগসূত্র কেবল ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং উভয় দেশের মানুষের মধ্যে মানসিক নৈকট্যও বাড়ায়।
ভারত মঙ্গোলিয়ায় অবস্থিত বৌদ্ধ স্থানগুলির সংরক্ষণ ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এর অংশ হিসেবে, ভারত মঙ্গোলিয়ায় মহাত্মা গান্ধী ইনস্টিটিউট ফর পিস (Mahatma Gandhi Institute for Peace) এর মতো প্রকল্প শুরু করেছে, যা উভয় দেশের যুবকদের একে অপরের সংস্কৃতির সাথে যুক্ত হওয়ার সুযোগ করে দেয়।
নতুন যুগের অংশীদারিত্বের দিকে পদক্ষেপ
ভারত ও মঙ্গোলিয়ার মধ্যে সম্পর্ক কেবল ঐতিহ্যবাহী ক্ষেত্রগুলিতে সীমাবদ্ধ থাকেনি। এখন উভয় দেশ প্রযুক্তি (technology), শিক্ষা (education), প্রতিরক্ষা (defence cooperation) এবং নবায়নযোগ্য শক্তি (renewable energy) এর মতো আধুনিক ক্ষেত্রগুলিতেও সহযোগিতা বাড়াচ্ছে।
রাষ্ট্রপতি মুর্মু বলেছেন যে "এটি এমন একটি সময় যখন আমরা আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কগুলিতে সমসাময়িক মাত্রা (contemporary dimensions) যোগ করব এবং নতুন অংশীদারিত্বের মাধ্যমে উভয় দেশের মানুষকে আরও সুযোগ ও সুবিধা প্রদান করব।"
মঙ্গোলিয়ার রাষ্ট্রপতি খুরেলসুখ উখনাও ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেছেন যে ভারত সবসময় মঙ্গোলিয়ার সত্যিকারের বন্ধু ছিল। তিনি বলেছেন যে উভয় দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বোঝাপড়া এবং সহযোগিতা এশিয়ার জন্য স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতির প্রতীক হয়ে উঠবে।
গণতন্ত্র ও শান্তির যৌথ মূল্যবোধ
ভারত ও মঙ্গোলিয়া উভয়ই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ এবং মানবাধিকারের (human rights) প্রতি সম্মান সর্বোচ্চ। উভয় দেশ বৈশ্বিক মঞ্চে গণতন্ত্র, শান্তি (peace) এবং সমতার (equality) মতো মূল্যবোধের পক্ষে সমর্থন করে। রাষ্ট্রপতি মুর্মু বলেছেন যে ভারত ও মঙ্গোলিয়া কেবল তাদের অভ্যন্তরীণ উন্নয়নে নয়, বরং বৈশ্বিক স্থিতিশীলতাতেও অংশীদার। তিনি বলেছেন যে ভারত, মঙ্গোলিয়ার উন্নয়ন যাত্রায় একটি নির্ভরযোগ্য সঙ্গী হিসাবে পাশে থাকবে।