চাকরিহারা শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে নয়া ভাবনা
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সম্প্রতি রাজ্যের প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হয়েছে। এর ফলে স্কুলে ব্যাপক শিক্ষক সংকট তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি পড়াশোনার চাপ এসে পড়েছে অস্থায়ী প্যারাটিচারদের উপর। এই প্রেক্ষিতেই রাজ্য সরকার এখন নতুন উদ্যোগে নামছে—চাকরিহারা শিক্ষকদের পুনর্নিয়োগের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।
শিক্ষাক্ষেত্রে বড় সিদ্ধান্তের ইঙ্গিত!
সূত্রের খবর, বহু বছর ধরে কম বেতন ও অবহেলার যন্ত্রণা বয়ে বেড়ানো প্যারাটিচারদের মর্যাদা ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছে সরকার। শুধু পদবী নয়, তাঁদের জীবনযাত্রার মানও পাল্টে দিতে চলেছে এই পদক্ষেপ।
নতুন পরিচয়ের পথে প্যারাটিচাররা
‘প্যারাটিচার’ শব্দটিকে বিদায় জানিয়ে তাঁদের জন্য আসতে পারে নতুন নাম— “অতিরিক্ত সহকারী শিক্ষক (Additional Assistant Teacher)”। নাম বদলের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে সম্মান ও মর্যাদা ফেরানোর প্রতিশ্রুতি।
শুধু নাম নয়, বদলাবে বাস্তব সুবিধা
ই পরিবর্তন শুধুই আনুষ্ঠানিক নয়। এর সঙ্গে যুক্ত হতে চলেছে বেতন বৃদ্ধি ও অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা, যা দীর্ঘদিনের আন্দোলন ও দাবিকে বাস্তব রূপ দেবে।
লড়াইয়ের স্বীকৃতি মিলতে চলেছে
শিক্ষক সমাজের বহু সদস্য মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে প্যারাটিচারদের ন্যায্য লড়াই অবশেষে প্রাপ্য সম্মান পাবে। শিক্ষা ব্যবস্থায় তাঁদের অবদানকে এবার প্রকৃত মর্যাদা দেওয়ার পথে এগোচ্ছে সরকার।
অভিযোগ-আন্দোলনের দীর্ঘ ইতিহাস
২০১৮ সালের পর থেকে প্যারাটিচারদের বেতন বছরে ৩ শতাংশ হারে বৃদ্ধি হলেও বাস্তবে তাঁদের আর্থিক অবস্থায় তেমন পরিবর্তন আসেনি। প্রাথমিক স্তরে এখনও তাঁদের বেতন ১০ হাজার টাকার কাছাকাছি, উচ্চ প্রাথমিক স্তরে মাত্র ১৩ হাজার। আন্দোলনকারীরা দীর্ঘদিন ধরে বলছেন—কাজের পরিমাণ বেশি, মর্যাদা কম।
তিনগুণ বেতনের প্রস্তাব আলোচনায়
আলোচনায় উঠে আসছে এক চমকপ্রদ প্রস্তাব। প্যারাটিচারদের বেতন প্রায় তিনগুণ বাড়ানো হতে পারে। প্রাথমিক স্তরে ৩৫ হাজার টাকা এবং উচ্চ প্রাথমিক স্তরে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে তাঁরা সহকারী শিক্ষকদের সমান পর্যায়ে পৌঁছবেন। এটি তাঁদের আন্দোলনের এক বড় জয় হতে পারে।
মহিলা শিক্ষকদের জন্য বিশেষ সুবিধা
শুধু বেতন বৃদ্ধি নয়, মহিলা শিক্ষকদের জন্যও নতুন সুবিধা নিয়ে ভাবছে শিক্ষা দপ্তর। প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় রয়েছে ৭৩০ দিনের চাইল্ড কেয়ার লিভ (CCL)। একইসঙ্গে ট্রান্সফারের সুযোগ, পৃথক সার্ভিস রুল, এবং সার্ভিস বুক তৈরি করে চাকরির স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে।
স্কুলের প্রশাসনে প্যারাটিচারদের অন্তর্ভুক্তি
রাজ্যের অনেক স্কুলেই এখনও প্যারাটিচারদের প্রশাসনিক মর্যাদা দেওয়া হয় না। এবার প্রস্তাব করা হয়েছে স্টাফ কাউন্সিলে তাঁদের অন্তর্ভুক্তি এবং মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পরিদর্শকের দায়িত্ব দেওয়ার। এতে প্যারাটিচাররা আর অস্থায়ী কর্মী হিসেবে নয়, প্রকৃত শিক্ষকের ভূমিকা নেবেন।
চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের জন্য নতুন পথ
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ফলে চাকরি হারানো শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হয়েছিল গভীর অনিশ্চয়তা। তবে এখন শিক্ষা দপ্তরের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে তাঁদের নতুন পরিচয়ে ফের কাজে লাগানো যায় কি না। “অতিরিক্ত সহকারী শিক্ষক” নামে পুনর্নিয়োগ হলে একদিকে তাঁদের পরিবার বাঁচবে, অন্যদিকে স্কুলগুলির শিক্ষক সংকটও কাটবে।
আন্দোলনের নেতাদের বক্তব্য
প্যারাটিচার ঐক্যমঞ্চের আহ্বায়ক ভগীরথ ঘোষ সাফ বলেছেন, “আমাদের উপর বাড়তি ক্লাস চাপানো হচ্ছে, অথচ বেতন বাড়ছে না। আমরা চাই সম্মানজনক বেতন ও মর্যাদা। যদি রাজ্য সরকার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করে, তবে তা হবে আমাদের দীর্ঘ আন্দোলনের জয়।
রাজ্য সরকারের অবস্থান
যদিও এখনও পর্যন্ত রাজ্যের পক্ষ থেকে কোনও সরকারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়নি। তবে শিক্ষা দপ্তরের একাধিক বৈঠকে বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। অনেকেই মনে করছেন, মুখ্যমন্ত্রী যেই “রেডি প্ল্যান”-এর কথা বলেছিলেন, সেটিই এবার কার্যকর হতে চলেছে।
পরিবর্তনের সম্ভাবনা সামনে
যদি প্রস্তাবিত পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়, তবে হাজার হাজার শিক্ষকের জীবন বদলে যাবে। প্যারাটিচাররা পাবেন প্রকৃত শিক্ষক হিসেবে মর্যাদা, বেতন হবে স্থায়ী চাকরির সমান, আর চাকরিচ্যুতরা ফিরে পাবেন কর্মক্ষেত্র। শিক্ষা দপ্তরের ভেতরে তাই এখন তৈরি হচ্ছে আশার সঞ্চার।