তরুণদের হার্ট অ্যাটাক কমাতে যোগাসন: তাদাসন, মার্জারি আসন ও অন্যান্য

তরুণদের হার্ট অ্যাটাক কমাতে যোগাসন: তাদাসন, মার্জারি আসন ও অন্যান্য

মানসিক চাপের কারণে তরুণরাও হার্ট অ্যাটাকের শিকার হচ্ছেন। নিয়মিত যোগাসন যেমন, তাদাসন, মার্জারি আসন, ত্রিকোনাসন, বীরভদ্রাসন এবং উৎকাটাসন হৃদয়ের পেশীগুলোকে শক্তিশালী করে, রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং মানসিক চাপ কমায়।

হৃদয়ের জন্য যোগ: আজকের দ্রুত গতির জীবন এবং পরিবর্তিত জীবনযাত্রার কারণে হৃদরোগ এখন শুধু বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। কাজের ক্রমবর্ধমান চাপ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং মানসিক চাপের কারণে তরুণ এবং কিশোররাও হৃদরোগের শিকার হচ্ছে। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, কম বয়সে হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা দ্বিগুণ হারে বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সময় থাকতে কিছু সহজ এবং কার্যকর উপায় অবলম্বন করা জরুরি। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী উপায় হলো যোগাসন।

যোগ শুধুমাত্র শরীরকে ফিট রাখতে সাহায্য করে না, এটি মানসিক চাপও কমায়, যা হার্ট অ্যাটাকের একটি প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। যোগাভ্যাসের ফলে হৃদয়ের কার্যকারিতা উন্নত হয়, রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকে, অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ে এবং রক্তনালীর আড়ষ্টতা কমে। নিয়মিত যোগ ব্যায়াম করলে শরীর এবং মন উভয়ই সুস্থ থাকে, যার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক কমে যায়।

যোগ এবং হৃদয়ের স্বাস্থ্য

যোগ শরীরের পেশী এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোকে সক্রিয় করে। এটি রক্ত প্রবাহকে উন্নত করার মাধ্যমে হৃদয়ে অক্সিজেনের সরবরাহ নিশ্চিত করে। মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমানোর পাশাপাশি এটি রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে। তাই, তরুণদের জন্য যোগ শুধু ব্যায়াম নয়, বরং হৃদয়ের সুরক্ষার একটি প্রাকৃতিক উপায়।

নিচে কিছু সহজ এবং কার্যকরী যোগাসন উল্লেখ করা হলো, যেগুলোর নিয়মিত অনুশীলন হৃদয়কে সুস্থ রাখতে সাহায্য করতে পারে।

১. তাদাসন

তাদাসন একটি সরল কিন্তু অত্যন্ত কার্যকরী যোগাসন। এটি দাঁড়িয়ে করা হয় এবং এটি শরীরের উচ্চতা বাড়াতে এবং ভারসাম্য উন্নতি করতে সাহায্য করে।

উপকারিতা:

  • বুক এবং কাঁধের পেশীগুলোকে সক্রিয় করে।
  • রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে।
  • হৃদয়ে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ায়।
  • মানসিক চাপ কমায়।

করার নিয়ম:

  • সোজা হয়ে দাঁড়ান এবং উভয় হাত উপরে তুলুন।
  • গভীর শ্বাস নিন এবং শরীরকে সম্পূর্ণরূপে প্রসারিত করুন।
  • ২০-৩০ সেকেন্ডের জন্য এই অবস্থানে থাকুন এবং ধীরে ধীরে হাত নিচে নামান।

২. মার্জারি আসন

মার্জারি আসন অর্থাৎ বিড়ালের ভঙ্গিমা মেরুদণ্ডকে নমনীয় করতে সাহায্য করে। এটি স্থূলতা কমাতে এবং শরীরের চর্বি কমাতে সহায়ক, যা হৃদরোগের একটি বড় কারণ।

উপকারিতা:

  • মেরুদণ্ডকে নমনীয় করে।
  • স্থূলতা কমায়।
  • মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমায়।

করার নিয়ম:

  • হাত এবং হাঁটুর সাহায্যে মাটিতে বসুন।
  • শ্বাস ছাড়ার সময় পিঠকে উপরের দিকে তুলুন এবং মাথা নীচের দিকে ঝুঁকিয়ে দিন।
  • শ্বাস নেওয়ার সময় পিঠকে নীচের দিকে করুন এবং মাথা উপরের দিকে তুলুন।
  • এটি ১০-১৫ বার পুনরাবৃত্তি করুন।

৩. ত্রিকোনাসন

ত্রিকোনাসন শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পেশীকে সক্রিয় করে। এটি মেরুদণ্ড, উরু, হাঁটু এবং বুকের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

উপকারিতা:

  • রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে।
  • মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমায়।
  • হৃদয়ের পেশীগুলোকে শক্তিশালী করে।

করার নিয়ম:

  • পা ছড়িয়ে দাঁড়ান।
  • ডান হাত পায়ের দিকে ঝুঁকিয়ে দিন এবং বাম হাত উপরে তুলুন।
  • কিছু সেকেন্ডের জন্য এই অবস্থানে থাকুন এবং তারপর বিপরীত দিকে পুনরাবৃত্তি করুন।

৪. বীরভদ্রাসন

বীরভদ্রাসন শরীরের শক্তি এবং নমনীয়তা বাড়ায়। এটি হৃদয়ে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং রক্তনালীতে ব্লকেজের সম্ভাবনা কমায়।

উপকারিতা:

  • বুক, কাঁধ এবং উরুর পেশীগুলোকে শক্তিশালী করে।
  • রক্ত প্রবাহ উন্নত করে।
  • হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

করার নিয়ম:

  • একটি পা সামনে এবং অন্য পা পিছনে রাখুন।
  • উভয় হাত উপরে তুলে দৃষ্টি সামনের দিকে রাখুন।
  • ৩০ সেকেন্ডের জন্য এই অবস্থানে থাকুন এবং তারপর পা পরিবর্তন করে পুনরাবৃত্তি করুন।

৫. উৎকাটাসন

উৎকাটাসন কাঁধ, পিঠ এবং পাকে শক্তিশালী করে। এটি রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং বুকে ব্লকেজের সম্ভাবনা কমায়।

উপকারিতা:

  • ক্যালোরি বার্ন করতে সাহায্য করে।
  • হৃদয় এবং ফুসফুসকে শক্তিশালী করে।
  • শরীরের শক্তি এবং নমনীয়তা বাড়ায়।
  • করার নিয়ম:
  • পায়ের পাতাকে কাঁধের প্রস্থে রাখুন।
  • হাঁটু মুড়ে বসুন এবং হাত উপরে তুলুন।
  • ২০-৩০ সেকেন্ডের জন্য এই অবস্থানে থাকুন এবং ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে আসুন।

কম বয়সে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি দ্রুত বাড়ছে, কিন্তু সময় থাকতে যোগাসন গ্রহণ করে এটিকে অনেকাংশে কমানো যেতে পারে। তাদাসন, মার্জারি আসন, ত্রিকোনাসন, বীরভদ্রাসন এবং উৎকাটাসনের মতো সহজ যোগাসন শুধুমাত্র হৃদয়কে সুস্থ রাখে না, বরং শরীরের শক্তি, নমনীয়তা এবং মানসিক শান্তিও বৃদ্ধি করে।

Leave a comment