সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত শহরে মিছিল নিষিদ্ধ শহিদ দিবস ঘিরে হাই কোর্টের শর্ত তৃণমূলকে

সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত শহরে মিছিল নিষিদ্ধ শহিদ দিবস ঘিরে হাই কোর্টের শর্ত তৃণমূলকে

আদালতের রায় স্পষ্ট—মিছিল হোক সকাল ৮টার আগেই

২১ জুলাইয়ের শহিদ সমাবেশ ঘিরে যানজটের আশঙ্কায় কলকাতা হাই কোর্ট কঠোর অবস্থান নিল। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের একক বেঞ্চ জানিয়ে দিল, শহরের রাস্তায় সকাল ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে কোনও মিছিল চলবে না। সেই সময়কালে আদালতের আশপাশে যানজট একেবারেই মেনে নেওয়া হবে না। এ বিষয়ে শহরের পুলিশ কমিশনারকে দায়িত্ব দিয়ে বলা হয়েছে, বিশেষত হাই কোর্ট সংলগ্ন পাঁচ কিলোমিটারের ব্যাসার্ধে যেন যান চলাচলে কোনও বিঘ্ন না ঘটে।

চূড়ান্ত নির্দেশ—অফিস টাইমের আগে ও পরে চালানো যাবে মিছিল

আদালতের রায়ে স্পষ্ট বলা হয়েছে, সকাল ৯টার আগে, অর্থাৎ অফিস টাইম শুরু হওয়ার আগে শহরে মিছিল চলতে পারে। আবার, বেলা ১১টার পরে ফের রাস্তায় নামতে পারেন তৃণমূল সমর্থকরা। এই নির্দেশের মূল উদ্দেশ্য, কর্মব্যস্ত শহরের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে যাতে জনজীবনে বিঘ্ন না ঘটে। আদালতের পর্যবেক্ষণ—যেকোনও রাজনৈতিক সমাবেশ নাগরিকের অধিকারের অঙ্গ, তবে তা জনস্বার্থের বিরুদ্ধে গেলে নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।

মামলাকারীর দাবি—মিছিল মানেই দুর্ভোগ, বন্ধ হোক এই অবরোধ সংস্কৃতি

এই মামলার সূত্রপাত এক নাগরিকের তরফে করা পিটিশনে। অভিযোগ, প্রতিবছর ২১ জুলাই শহরের রাস্তায় তীব্র যানজট হয়, ফলে সাধারণ মানুষকে বিপদে পড়তে হয়। আদালতে তাঁর আইনজীবী বলেন, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, অফিসগামী মানুষ প্রবল দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে যান। এই পরিস্থিতি যাতে এ বছর না হয়, তাই আদালতের হস্তক্ষেপ জরুরি।

তৃণমূলের দাবি—রাজনৈতিক চক্রান্ত, হাই কোর্টের নির্দেশ মেনে চলার আশ্বাস

মামলার শুনানিতে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আইনজীবীরা জানান, এ ধরনের মামলা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং রাজনীতিপ্ররোচিত। যদিও বিচারপতির স্পষ্ট বক্তব্য ছিল, “রাজনৈতিক দল হিসেবে আপনাদের যা অধিকারের মধ্যে পড়ে, তা করতেই পারেন। কিন্তু জনজীবনে তার প্রতিকূল প্রভাব পড়লে সেটা রোখার দায় পুলিশের। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত কয়েক বছরে প্রায় ১০ লক্ষ কর্মী সমর্থক জমায়েতে যোগ দিয়েছেন, এবং এবারও তেমনই হওয়ার সম্ভাবনা।

বিচারপতির উদ্বেগ—১০ লাখ লোক নয়, ৫ লাখ এলেও শহর থমকে যাবে

বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের পর্যবেক্ষণে ছিল একটা সতর্ক বার্তা—যদি ১০ লক্ষের বদলে ৫ লক্ষ লোকও রাস্তায় নামেন, আর তাতে যদি পর্যাপ্ত পুলিশি নজরদারি না থাকে, তাহলে গোটা শহর থমকে যেতে পারে। ট্রাম এবং মালবাহী যান তো আগে থেকেই বন্ধ থাকছে। তার উপর একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় মিছিল হলে উত্তর কলকাতার যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি বিপর্যস্ত হতে পারে।

আদালতের কড়া নজর—যান নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে দায় নিতে হবে পুলিশকে

রাস্তাঘাট বন্ধ, জ্যাম ও বিশৃঙ্খলা আটকাতে যে ১০টি রাস্তার কথা মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলি একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত এবং শহরের লাইফলাইন। বিচারপতির মতে, এই রাস্তাগুলি বন্ধ করা মানে গোটা উত্তর কলকাতা কার্যত স্তব্ধ হয়ে যাওয়া। ফলে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কোনও গাফিলতি চলবে না। কলকাতা পুলিশ কমিশনারকে তা নজরে রাখতে হবে বলেও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

এখনই রায় নয়, চূড়ান্ত শুনানি হতে পারে নভেম্বর মাসে

আপাতত ২১ জুলাইয়ের জন্য অস্থায়ী নির্দেশ দেওয়া হলেও মামলাটি এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। রাজ্য সরকারের অ্যাডভোকেট জেনারেল মামলাটি খারিজের আবেদন জানান, তবে আদালত সেই আর্জি মঞ্জুর করেনি। বিচারপতির মন্তব্য, আপাতত জনসুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই অস্থায়ী শর্ত দেওয়া হল। তবে মামলার পরবর্তী শুনানি নভেম্বরে হতে পারে, তখন বিষয়টি চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি করা হবে।

Leave a comment