সংসদের প্রাঙ্গণে উত্তাল বিক্ষোভের দিন
শুক্রবার সকালে সংসদের বাইরে ছিল এক অন্য চিত্র। হাতে প্ল্যাকার্ড, গলায় স্লোগান, চোখে ক্ষোভ—তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদরা একত্রিত হয়ে রুখে দাঁড়ালেন বাঙালিদের উপর চলতে থাকা নির্যাতনের বিরুদ্ধে। বিজেপি শাসিত বিভিন্ন রাজ্যে ভোট চুরি ও রাজনৈতিক সন্ত্রাসের অভিযোগে এদিন রাজপথে নামে দল। কেবল তৃণমূলই নয়, ইন্ডিয়া ব্লকের অন্য সহযোগী দলগুলির সদস্যরাও পাশে এসে দাঁড়ান।
অভিষেকের উপস্থিতিতে নতুন মাত্রা
এদিনের বিক্ষোভে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং যোগ দিয়ে আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করেন। সাধারণত সংসদ চত্বরের বিক্ষোভে দলীয় সাংসদরা নেতৃত্ব দিলেও, অভিষেকের উপস্থিতি স্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তা বহন করে। গলায় ‘বাংলার গর্ব রক্ষা করো’ স্লোগান, হাতে ‘স্টপ বেঙ্গলি অপপ্রেশন’ লেখা পোস্টার—অভিষেকের কণ্ঠে ছিল ক্ষোভের সঙ্গে দৃঢ়তার সুর।
বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে ‘ভোট ডাকাতি’র অভিযোগ
বিক্ষোভস্থল থেকে অভিষেক ও তৃণমূল সাংসদরা অভিযোগ তোলেন, বিজেপি শাসিত একাধিক রাজ্যে সুষ্ঠু ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। তাঁদের দাবি, ভোটের নামে চলছে পরিকল্পিত কারচুপি, যাতে বিরোধী কণ্ঠ স্তব্ধ করে রাখা যায়। পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের বাইরে গিয়েও এই অভিযোগ তুলে তাঁরা বার্তা দেন—এ লড়াই শুধু বাংলার জন্য নয়, গণতন্ত্র রক্ষার জন্যও।
বাঙালিদের উপর ‘নির্যাতন’ নিয়ে ক্ষোভ
বিক্ষোভের কেন্দ্রীয় ইস্যু ছিল বাঙালিদের উপর চলতে থাকা নির্যাতনের অভিযোগ। তৃণমূল সাংসদদের অভিযোগ, বিজেপি শাসিত কিছু রাজ্যে বাঙালি সম্প্রদায়কে প্রায়শই টার্গেট করা হচ্ছে, তাঁদের সাংস্কৃতিক পরিচয় ও ভাষাকে অপমান করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিকে ‘ভাষা সন্ত্রাস’ ও ‘পরিচয় নিধনের প্রচেষ্টা’ বলে অভিহিত করেন দলের নেতারা।
ইন্ডিয়া ব্লকের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান
এদিনের আন্দোলনে কেবল তৃণমূলই নয়, কংগ্রেস, ডিএমকে, শিবসেনা (উদ্ধব গোষ্ঠী)–সহ ইন্ডিয়া ব্লকের বহু শরিক দলও অংশ নেয়। হাতে হাতে ধরা ব্যানারে লেখা—“গণতন্ত্র বাঁচাও, বাঙালির মর্যাদা রক্ষা করো”। বিভিন্ন দলের নেতারা অভিষেকের পাশে দাঁড়িয়ে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে একযোগে স্লোগান তোলেন। সংসদের বাইরে এই দৃশ্য ইঙ্গিত দেয়, ২০২৪–এর পর থেকে বিজেপি-বিরোধী জোট আরও সক্রিয় হচ্ছে।
অভিষেকের কঠোর বার্তা
মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে অভিষেক বলেন, যেখানে গণতন্ত্রে ভোটাধিকার সবচেয়ে বড় শক্তি, সেখানে বিজেপি সেটাই কেড়ে নিচ্ছে। বাঙালির উপর অত্যাচার মানে ভারতীয় গণতন্ত্রের উপর আঘাত। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যদি এই আক্রমণ বন্ধ না হয়, তবে তৃণমূল সংসদ থেকে রাস্তায়, রাজ্য থেকে রাজপথে—প্রতিটি জায়গায় লড়াই চালাবে।
রাজনৈতিক তাৎপর্যে গরম দিল্লি
রাজনৈতিক মহলে অভিষেকের এই উপস্থিতি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। সংসদের ভেতরে ও বাইরে, দুই জায়গাতেই বিজেপিকে চাপে রাখতে তৃণমূল যে সমন্বিত কৌশল নিচ্ছে, তা এই বিক্ষোভে স্পষ্ট। পাশাপাশি, বাঙালি পরিচয় ও মর্যাদা ইস্যুকে জাতীয় স্তরে তুলে ধরে তৃণমূল হয়তো আগামীর রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের বার্তা দিচ্ছে।