এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট AI171 দুর্ঘটনার প্রাথমিক রিপোর্টে ইঞ্জিন ফেল হওয়ার পরিবর্তে, ফুয়েল কাটঅফ সুইচের হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়াকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাম মোহন নায়ডু চূড়ান্ত রিপোর্ট আসা পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত না হওয়ার আবেদন জানিয়েছেন।
আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনা: ১২ জুন, ২০২৫ তারিখে ভারতীয় বিমান পরিবহন ইতিহাসে আরও একটি কালো দিন যোগ হয়, যখন আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট AI171 টেকঅফের মাত্র ৩২ সেকেন্ড পরেই দুর্ঘটনায় পতিত হয়। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ২৭০ জন প্রাণ হারান। এই দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট এখন প্রকাশিত হয়েছে, যা কেবল প্রযুক্তিগত ত্রুটি নিয়ে প্রশ্ন তোলে নি, বরং ভারতের বিমান নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর গভীর চিন্তাভাবনার প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরেছে।
প্রাথমিক রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর তথ্য
বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত ব্যুরো (AAIB) কর্তৃক প্রকাশিত প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গেছে যে, বিমানের উভয় ইঞ্জিন হঠাৎ আকাশে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। রিপোর্ট অনুযায়ী, এর কারণ ছিল – ফুয়েল কাটঅফ সুইচ-এর 'RUN' মোড থেকে হঠাৎ 'CUTOFF' মোডে চলে যাওয়া। এর সরাসরি ফলস্বরূপ উভয় ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় এবং বিমানটি ওড়ার ৩২ সেকেন্ড পরেই ভূপাতিত হয়।
ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (Cockpit Voice Recorder) উন্মোচন করলো অনেক রহস্য
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে, যখন উভয় ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়, তখন ককপিট ভয়েস রেকর্ডারে একজন পাইলটের কণ্ঠস্বর রেকর্ড হয় – 'তুমি ইঞ্জিন বন্ধ করলে কেন?' উত্তরে অন্য পাইলট বলেন – 'আমি করিনি।' এর থেকে স্পষ্ট হয় যে ইঞ্জিন বন্ধ করা ইচ্ছাকৃত ছিল না, বরং এটি অনিচ্ছাকৃতভাবে ঘটেছিল, যার ফলে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাম মোহন নায়ডুর গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য
এই গুরুতর বিষয়ে কেন্দ্রীয় বিমান পরিবহন মন্ত্রী রাম মোহন নায়ডুও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বিশাখাপত্তনমে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় বলেন, 'আমার মনে হয় না এখনই আমাদের কোনো সিদ্ধান্তে আসা উচিত। আমাদের চূড়ান্ত রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। যে রিপোর্টটি এখন এসেছে, তা প্রাথমিক তদন্তের উপর ভিত্তি করে তৈরি।'
তিনি দেশের পাইলট এবং ক্রু-দের প্রশংসা করে বলেন যে, ভারতে বিশ্বের সবচেয়ে দক্ষ এবং নিবেদিতপ্রাণ বিমান পরিবহন পেশাদাররা রয়েছেন। 'আমাদের পাইলট এবং ক্রু বিমান পরিবহনের মেরুদণ্ডস্বরূপ। আমরা তাদের কল্যাণের প্রতি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিই। আমাদের সম্পূর্ণ তথ্য ছাড়া কারো উপর দোষারোপ করা উচিত নয়।'
দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো ২৭০ জন
এই দুর্ঘটনায় মোট ২৭০ জনের মৃত্যু হয়েছিল, যাদের মধ্যে ২৪১ জন বিমানে ছিলেন এবং ২৯ জন ছিলেন ভূমিতে। এই দুর্ঘটনা টেকঅফের সময় ঘটেছিল, যখন বিমানটি সবেমাত্র উচ্চতা অর্জন করতে শুরু করেছিল। এত কম উচ্চতায় উভয় ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাওয়ার অর্থ হল পাইলটের কাছে কোনো জরুরি অবতরণের সম্ভাবনা ছিল না।
বড় প্রশ্ন – ফুয়েল কাটঅফ সুইচ কীভাবে নিজে থেকে পরিবর্তন হলো?
তদন্তের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল – যদি পাইলটরা সুইচটি স্পর্শ না করে থাকেন, তাহলে এটি 'RUN' থেকে 'CUTOFF' মোডে কীভাবে গেল? এটি কি কোনো প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে হয়েছিল? নাকি এটি কোনো স্বয়ংক্রিয় সফ্টওয়্যার ত্রুটির ফল ছিল? তদন্ত সংস্থাগুলি এখন এই বিষয়ে গভীরভাবে অনুসন্ধান করছে।