অহোই অষ্টমী ২০২৫-এর ব্রত সন্তানবতী মহিলাদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র বলে বিবেচিত হয়। এটি পালন করলে সন্তানের জীবনে সুখ-শান্তি, দীর্ঘায়ু এবং উন্নতি আসে। ব্রত পালনের সময় কিছু নিয়ম ও আচার পালন করা বাধ্যতামূলক, যেমন নির্জলা থাকা, মিথ্যা ও ঝগড়া এড়িয়ে চলা এবং বিধি অনুসারে পূজা করা। এই নিয়মগুলি ব্রতের পুণ্য নিশ্চিত করে।
Ahoi Ashtami 2025: হিন্দু ধর্মে সন্তানবতী মহিলাদের জন্য অহোই অষ্টমীর ব্রত অত্যন্ত পবিত্র বলে মনে করা হয় এবং এটি ২০২৫ সালের ১৩ই অক্টোবর কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে পালন করা হবে। দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, হরিয়ানা এবং রাজস্থানের অনেক অঞ্চলে ভক্তি সহকারে পালিত এই ব্রতের উদ্দেশ্য হল সন্তানদের জীবনে সুখ-শান্তি, দীর্ঘায়ু এবং উন্নতি নিশ্চিত করা। এই পবিত্র দিনে মহিলাদের নির্জলা ব্রত রেখে পূজা করতে হয় এবং ব্রত চলাকালীন মিথ্যা বলা, ঝগড়া করা, চুল ধোয়া বা কাটা এবং ধারালো জিনিস ব্যবহার না করার মতো নিয়মগুলি পালন করা বাধ্যতামূলক।
অহোই অষ্টমীর গুরুত্ব
হিন্দু ধর্মে সন্তানবতী মহিলাদের জন্য অহোই অষ্টমীর ব্রত বিশেষ গুরুত্ব রাখে। এই ব্রতের উদ্দেশ্য হল নিজের সন্তানের দীর্ঘায়ু, সুখী জীবন এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রার্থনা করা। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে মহিলারা তাঁদের মেয়েদের জন্যও এই ব্রত পালন করা শুরু করেছেন। এই ব্রত দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, হরিয়ানা এবং রাজস্থানের অনেক অঞ্চলে অত্যন্ত ভক্তি সহকারে পালন করা হয়।
অহোই অষ্টমী অহোই আটেন নামেও পরিচিত। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী এই ব্রত অত্যন্ত পবিত্র বলে মনে করা হয়। এটি পালন করলে সন্তানের জীবনে সুখ-শান্তি আসে এবং পিতা-মাতা মানসিক সন্তোষ লাভ করেন।
কবে অহোই অষ্টমী ২০২৫
এই বছর অহোই অষ্টমীর ব্রত কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে পালন করা হবে। হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে, এই তিথি ২০২৫ সালের ১৩ই অক্টোবর দুপুর ১২টা ২৪ মিনিটে শুরু হবে এবং ২০২৫ সালের ১৪ই অক্টোবর সকাল ১১টা ০৯ মিনিটে শেষ হবে। এই তিথিতে মহিলারা সারাদিন নির্জলা ব্রত রাখেন এবং এই সময় ব্রতের সংকল্প পূরণ করা আবশ্যক বলে মনে করা হয়।
অহোই অষ্টমীর দিনে এই কাজগুলি করবেন না
অহোই অষ্টমীর ব্রত অত্যন্ত পবিত্র বলে মনে করা হয়। এই ব্রতে মহিলাদের সারাদিন কিছু খাওয়া বা পান করা থেকে বিরত থাকতে হয়। এছাড়া, ব্রত চলাকালীন কিছু বিশেষ নিয়ম পালন করা জরুরি, যাতে পুণ্য লাভ হয়।
- ব্রত চলাকালীন ধারালো এবং সূক্ষ্ম জিনিস ব্যবহার করবেন না।
- মাটি সংক্রান্ত কাজ যেমন মাটি খোঁড়া বা বাসন পরিষ্কার করা ব্রতের দিনে করবেন না।
- ব্রত চলাকালীন ঘুমানো বা বিশ্রাম করা অশুভ বলে মনে করা হয়।
- ব্রতের সংকল্প নেওয়ার পর মাঝপথে তা ভাঙবেন না।
- মিথ্যা বলা, ঝগড়া করা বা অপ্রয়োজনীয় কথা বলা থেকে বিরত থাকুন।
- অষ্টমী তিথি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্রহ্মচর্য পালন করুন।
- ব্রত চলাকালীন বিছানায় বসা বা দীর্ঘক্ষণ বিশ্রাম করা অনুচিত।
- ব্রতের দিনে চুল ধোয়া বা কাটা নিষিদ্ধ।
- ব্রত চলাকালীন মন্ত্র জপ এবং সৎসঙ্গ করা শুভ বলে মনে করা হয়।
এই নিয়মগুলি কেবল ব্রতকে পবিত্র রাখে না, বরং পিতা-মাতা এবং সন্তান উভয়ের জন্য আধ্যাত্মিক ও মানসিক সুবিধা নিশ্চিত করে।
ব্রতের বিধি এবং পূজার পদ্ধতি
অহোই অষ্টমীর দিনে মহিলারা নির্জলা ব্রত রেখে সারাদিন ভগবান অহোই অষ্টমীর পূজা করেন। ব্রত পালনকারী মহিলারা সকালে উঠে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন স্থানে পূজা করেন এবং ব্রতের সংকল্প নেন। পূজায় সাধারণত ছয় বা আটটি কলস, মাটির তৈরি শিশুর মূর্তি এবং অহোই মাতার ছবি ব্যবহার করা হয়।
- পূজার স্থান পরিষ্কার ও পবিত্র রাখুন।
- মাটি বা ছোট শিশুর রূপে ভগবান অহোই-এর মূর্তি স্থাপন করুন।
- ব্রত চলাকালীন বাড়ির সকল সদস্য এবং বিশেষ করে সন্তানের জন্য সুখ-শান্তি ও দীর্ঘায়ুর প্রার্থনা করুন।
- সারাদিন ব্রতের নিয়মাবলী পালন করুন এবং খাবার ও জল ত্যাগ করুন।
- সন্ধ্যায় ব্রত ভাঙার আগে পূজা সম্পন্ন করুন এবং মাতা অহোইকে জল অর্পণ করুন।
এইভাবে বিধি অনুসারে পূজা করলে ব্রতের পুণ্য লাভ হয় এবং সন্তানের জীবনে সুখ-শান্তি আসে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি মনে রাখুন
অহোই অষ্টমীর ব্রত কেবল নিয়ম পালনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ব্রত চলাকালীন আচার-আচরণও গুরুত্বপূর্ণ। মহিলারা এই দিনে স্বাস্থ্য, সংযম এবং ধ্যানের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিন।
- ব্রতের দিনে ইতিবাচক চিন্তা করুন এবং শুভ কাজ করুন।
- কারো সাথে ঝগড়া বা বিবাদ করা থেকে বিরত থাকুন।
- মনে কেবল ভালো চিন্তা এবং সন্তানের মঙ্গলের কামনা রাখুন।
- সারাদিন পূজা, মন্ত্র জপ এবং ভজন-কীর্তনে সময় কাটান।
এই নিয়মগুলি পালন করলে ব্রতের আধ্যাত্মিক গুরুত্ব কেবল বৃদ্ধি পায় না, বরং পিতা-মাতা এবং সন্তান উভয়ের জন্য মানসিক সন্তোষ ও সামঞ্জস্যও আসে।
অহোই অষ্টমী ব্রতের লাভ
- সন্তানের জীবন সুখ-শান্তি ও উন্নতিতে ভরে ওঠে।
- সন্তানের দীর্ঘায়ু এবং স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।
- পরিবারে মানসিক সন্তোষ এবং গৃহে শান্তি বজায় থাকে।
- পিতা-মাতার আধ্যাত্মিক সন্তোষ এবং আশীর্বাদ লাভ হয়।
- ব্রত পালনকারী মহিলারা তাঁদের সংকল্প ও শৃঙ্খলার অভিজ্ঞতা লাভ করেন।