এমস দিল্লির ডাক্তারদের যুগান্তকারী আবিষ্কার: ২ ঘণ্টায় ১০০% নির্ভুল সার্ভিকাল ক্যান্সার শনাক্তকরণের কিট

এমস দিল্লির ডাক্তারদের যুগান্তকারী আবিষ্কার: ২ ঘণ্টায় ১০০% নির্ভুল সার্ভিকাল ক্যান্সার শনাক্তকরণের কিট

এমস দিল্লির ডাক্তাররা একটি ন্যানোটেক-ভিত্তিক কিট তৈরি করেছেন, যা মাত্র ২ ঘণ্টায় ১০০% নির্ভুলতার সাথে সার্ভিকাল ক্যান্সার শনাক্ত করতে পারে। এর দাম হবে ১০০ টাকারও কম। এই উদ্ভাবনটি NBEC 2025 প্রতিযোগিতায় দেশজুড়ে ৩,১০০টি আবেদনের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছে এবং এটিকে একটি স্টার্টআপ হিসাবে উন্নীত করা হচ্ছে।

২ ঘণ্টায় নির্ভুল ক্যান্সার পরীক্ষা: দিল্লির AIIMS-এর অ্যানাটমি বিভাগের ডঃ সুভাষ চন্দ্র যাদব এবং তাঁর দল মহিলাদের মধ্যে সার্ভিকাল ক্যান্সারের স্ক্রিনিংয়ের জন্য একটি নতুন ন্যানোটেক-ভিত্তিক কিট তৈরি করেছেন। এই কিটটি ব্যয়বহুল মেশিন এবং দীর্ঘ প্রক্রিয়াগুলির একটি বিকল্প, কারণ এটি মাত্র ২ ঘণ্টায় অত্যন্ত নির্ভুল ফলাফল দেয় এবং এর দাম ১০০ টাকারও কম। সম্প্রতি, এই কিটটি ন্যাশনাল বায়ো-এন্টারপ্রেনিউরশিপ কম্পিটিশন (NBEC) 2025-এ ৩,১০০টি উদ্ভাবনের মধ্যে সেরা উদ্ভাবন হিসাবে ঘোষিত হয়েছে এবং দলটি পুরস্কার ও তহবিল পেয়েছে।

ডাক্তারদের দলের পরিশ্রম

এই বিশেষ কিটটি এমস-এর অ্যানাটমি বিভাগের ডঃ সুভাষ চন্দ্র যাদব তাঁর দলের সাথে মিলে তৈরি করেছেন। দলের অন্য সদস্যরা হলেন প্রাক্তন স্ত্রীরোগ বিভাগের HOD ডঃ নীরাজ ভাটলা, জ্যোতি মীণা, শিখা চৌধুরী এবং প্রণয় তানওয়ার। এটি একটি ন্যানোটেক-ভিত্তিক ভিজ্যুয়াল ডায়াগনস্টিক কিট, যা বিশেষভাবে মহিলাদের মধ্যে হাই-রিস্ক এইচপিভি-এর কারণে সৃষ্ট সার্ভিকাল ক্যান্সার দ্রুত সনাক্ত করতে পারে।

প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান

এই কিটটি সম্প্রতি ন্যাশনাল বায়ো-এন্টারপ্রেনিউরশিপ কম্পিটিশন (NBEC) 2025-এ দেশজুড়ে ৩,১০০টি উদ্ভাবনের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। এই প্রতিযোগিতায় এটিকে সবচেয়ে উপযোগী এবং ব্যবহারিক আবিষ্কার হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে। দলটি ছয় লক্ষ টাকার পুরস্কার এবং একটি স্টার্টআপ হিসাবে এই প্রযুক্তি বিকাশের জন্য তহবিলও পেয়েছে।

দুই ঘণ্টায় ফলাফল, ১০০ শতাংশ নির্ভুলতা

ডঃ সুভাষের মতে, এই কিট ব্যবহার করে এ পর্যন্ত প্রায় ৪০০ রোগীর পরীক্ষা করা হয়েছে। প্রতিবারই ফলাফল ১০০ শতাংশ সঠিক এসেছে। যেখানে বড় মেশিন ব্যবহার করে পরীক্ষা করতে কয়েক দিন সময় লাগে, সেখানে এই কিট মাত্র দুই ঘণ্টায় ফলাফল দেয়। এতে রোগীদের বারবার হাসপাতালে আসার প্রয়োজন হবে না।

অত্যন্ত সহজ এবং সস্তা

এই কিট ব্যবহার করা এত সহজ যে এটি শুধুমাত্র ডাক্তাররাই নন, নার্স এবং আশা কর্মীরাও ব্যবহার করতে পারেন। মহিলাদের এর পদ্ধতি বুঝিয়ে দিলে, তারা নিজেরাও তাদের পরীক্ষা করতে পারবে। এর অর্থ হল গ্রামীণ অঞ্চলেও মহিলারা সহজেই পরীক্ষার সুবিধা পাবেন।

বর্তমানে সার্ভিকাল ক্যান্সার পরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত মেশিনগুলির দাম প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হয়। প্রাইভেট সেক্টরে এই পরীক্ষা করাতে রোগীদের প্রায় ৬,০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হয়। অন্যদিকে, সরকারি হাসপাতালগুলিতেও এই পরীক্ষা ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকায় হয়ে থাকে। এর তুলনায় এই নতুন কিটটি অত্যন্ত সস্তা এবং ১০০ টাকারও কম খরচে পরীক্ষা সম্ভব হবে।

৩,১০০টি আবেদনের মধ্যে শীর্ষে

NBEC 2025 প্রতিযোগিতায় এই কিটটি সমগ্র দেশ থেকে আসা ৩৪টি রাজ্যের ৩,১০০টি আবেদনকে ছাড়িয়ে গেছে। এটিকে শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিকভাবে উন্নতই নয়, এর সামাজিক উপযোগিতাকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়েছে। যদি সময়মতো তহবিল পাওয়া যায়, তবে আগামী চার বছরের মধ্যে এই কিটটি বাজারে সাধারণ মানুষের জন্য উপলব্ধ করা যাবে।

মেডিকেল বিজ্ঞানে একটি বড় অর্জন

এমস-এর ডাক্তারদের এই আবিষ্কারকে মেডিকেল বিজ্ঞানে একটি বড় অর্জন হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করে এত সস্তা এবং দ্রুত পরীক্ষা সম্ভব করা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি বড় পদক্ষেপ। এটি লক্ষ লক্ষ মহিলাকে উপকৃত করবে এবং সময়মতো তাদের চিকিৎসা সম্ভব হবে।

Leave a comment